হবিগঞ্জের ৫ টি চা-বাগানের কাজ বন্ধ,মানবেতর জীবন-যাপন করছেন শ্রমিকরা!

0
10

হবিগঞ্জের ৫ টি চা-বাগানে কাজ বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন শ্রমিকরা!

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:: হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ন্যাশনাল টি কোম্পানীর ৫টি চা-বাগানে গত ৩৫ দিন যাবত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব-অনটন পড়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শ্রমিকরা চিকিৎসা ও খাদ্য সংকটে ভুগছেন। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া, পারকুল ও সাতছড়ি এবং মাধবপুর উপজেলার জগদিশপুর ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। একটানা ৬ সপ্তাহের মজুরী পরিশোধের দাবীতে শ্রমিকরা মাঝে মধ্যে মহাসড়ক অবরোধ, করে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করলেও সাড়া নেই কর্তৃপক্ষের।

চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিক রেনু খা বাউরি। স্বামী স্বপন বাউরিও নেই পৃথিবীতে নেই, ছেলে মেয়েসহ ৬ জনের পরিবার তার। বাগানে কাজ করে যে বেতনসহ সুযোগ সুবিধা পেতেন সেই টাকা দিয়ে কোন রকম চালাতেন সংসার। কিন্তু গেল ৩৫ দিন বাগানে কাজ বন্ধ থাকার ফলে পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাকে। এক বেলা খেলেও অন্যবেলায় থাকতে হচ্ছে উপোস।
একই অবস্থা নারী শ্রমিক রিতা গঞ্জুরও। মা আরতি রঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু পথযাত্রী তিনি। মুখে নেই খাবার, অসহায় চোখে বিছানার এক কোণে কাতরাচ্ছেন তিনি। মায়ের এই দুরাবস্থা দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না রিতা। অভাব-অনটনে পড়ে দিশেহারা তিনি। দুলন রিকির পরিবারেও স্ত্রীসহ রয়েছে ৩ সন্তান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছেন তিনি। শুধু রেনু, দুলন ও রীতা গঞ্জু নয়, এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে বাগানের দিলীপ ও দুলনসহ আরো শতাধিক পরিবারে। দীর্ঘ ৩৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ তাদের। শুরুতে ৬ সপ্তাহ মজুরী, রেশন ও তলব বন্ধ থাকায় আন্দোলনে নেমেছিলেন শ্রমিকরা। এরপর থেকে ৩৫ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। রেনু খা বাউরি বলেন, ‘কাজ করে যে মজুরি পেতাম তা দিয়ে কোন মতে সংসার চালতো। কিন্তু এখন তাও বন্ধ হয়ে গেল। বাগানে ৩৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ বাজার থেকে কোন রকম আধা কেজি চিড়া কিনে এনে পরিবারের সকলে খেয়েছি। একবার খেলেও আরেকবারের কোন ভরসা নেই আমাদের’। তিনি বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের পাওনা ৬ সপ্তাহের বেতন দ্রুত পরিশোধ না করে তা হলে আমরা না খেয়ে মারা যাব’। আর দিলীপ নামে এক যুবক বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিক বলে আমাদের খরচ কম। খাবার খেতে গেলেই টাকার প্রয়োজন। কাজ নেই বেতন নেই। তাই বাগান থেকে গাছের ডাল সংগ্রহ করে ৫০/১০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করে তা দিয়ে পরিবারের জন্য কোন রকম চিড়া মুড়ি সংগ্রহ করছি। এভাবে আর কত দিন চলব’।

চন্ডিছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বার বার শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন ভাবেই আমাদের মজুরী ও তলব পরিশোধ করছে না। আমাদের ৬ সপ্তাহের মজুরী পরিশোধের আন্দোলন ৩৫ দিনে পৌঁছেছে। তবুও মন গলেনা কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সমাধান না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। শ্রমিক নেতা সুভাষ দাস বলেন, ‘কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভাব-অনটনে চলছে তাদের সংসার। বাগান কর্তৃপক্ষ সমাধানের উদ্যোগ না নেয়ায় শ্রমিকরা দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছেন।
এ বিষয়ে চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. সেলিমুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত রয়েছেন এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সমাধানের কোন উত্তর পাইনি। তবে তাদের বেতন পরিশোধের চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে শ্রমিকদের কাজে ফিরে আনা হবে’।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন