হবিগঞ্জে টমটম চালক হত্যা, ১২ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন

0
3

হবিগঞ্জে টমটম চালক হত্যা, ১২ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের বালিয়ারি গ্রামে ইজিবাইক (টমটম) চালক হত্যা মামলায় ১২ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করে ঘটনার প্রধান আসামী রাজ মিস্ত্রী মোঃ হাবিবুর রহমান ওরফে রামিম (২১) কে গ্রেপ্তার করেছেপুলিশ। রামিম একই গ্রামের মৃত আজিজুর রহমান মালাই মিয়ার পুত্র। এসময় তার সহযোগী দুর্গাপুর বাজারের চা-ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলের বড় ছেলে রং মেস্ত্রী সাকিব মিয়া (২০)কে পিবিআই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রæয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের বালিয়ারি গ্রামে অটোচালক আতাউরের গলাকাটা মৃতদেহ একটি পুকুর পাওয়া যায়। মৃতদেহ উদ্ধার করে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতকে দাফন সম্পন্ন হয়। নিহত আতাউর রহমান বালিয়ারি গ্রামের মৃত আব্দুল খালের পুত্র। সে শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রিজ এলাকায় স্টেশন রোডে রাত্রিকালীন যাত্রী পরিবহন করে জীবীকা নির্বাহ করতো।
নিহতর স্ত্রী মোছাঃ পপি আক্তার জানান, আমার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান আছে। এছাড়াও বর্তমানে আমি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত¡া। আমার স্বামী আতাউর রহমান পেশায় একজন টমটম চালক। টমটম গাড়ীটির মালিক আমার স্বামী নিজেই। আমার স্বামী আতাউর রহমান আমাদের টমটম গাড়ীটি চালাইয়া গাড়ীর আয় দিয়ে আমাদের সংসার চালানো সহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। প্রতিদিনের মতো গত ৭ ফেব্রæয়ারী আমার স্বামী আতাউর রহমান রাত অনুমান ৯টার সময় টমটম গাড়ী নিয়ে প্রতিবেশী একজন রোগীকে নিয়ে স্থানীয় দ‚র্গাপুর বাজারে যান। সেখানে ডাক্তার দেখানো শেষ হলে ওরাত্র অনুমান ৯.৪০ মিনিটে টমটম গাড়ী নিয়া বাড়ীতে ফিরে আসেন। এর পর স্বামী আতাউর রহমান এর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একটি কল আসলে আমার স্বামী ঘটনার রাত অনুমান ১০ টায় পুনরায় টমটম গাড়ীটি নিয়া বাড়ী হতে বাহির হইয়া যান। এরপর রাত্র গভীর হলে আমার স্বামী আতাউর রহমান টমটম গাড়ীটি নিয়া বাড়ীতে ফিরছেন না দেখে ৮ ফেব্রয়ারী রাত আড়াইটায় সময় আমার স্বামীর নাম্বারে কল করিলে রিং হয়, কিন্তু কল রিসিভ করেন নাই। এরপর হতে আমার স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখন আমার সন্দেহের সৃষ্টি হলে আমি বিষয়টি আমার পরিবারের লোকজন সহ বাড়ীর লোকজনকে জানাই এবং স্বামীকে খোঁজাখুঁজি করিতে থাকি। খোঁজাখুঁজি করা অবস্থায় গত-৮ ফেব্রয়ারী সকালে উবাহাটা ইউনিয়নের অন্তর্গত বালিয়ারী গ্রামের কাঁচা রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম দিকের পুকুর পাড়ের খালে আমার স্বামী ক্ষতবিক্ষত ও গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।
এঘটনায় নিহতর স্ত্রী পপি আক্তার বাদি হয়ে শুক্রবার অজ্ঞাতনামা আসামী করে চুনারুঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায়ের নেতেৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাশসহ একদল পুলিশ ঘটনার নিবিড় তদন্ত চালিয়ে হত্যার রহস্য ও জড়িতদের সানক্ত করে মুল অসামী রামিমকে গ্রেপ্তার করেন। তার দেয়া তথ্য মতে অপর আসামী গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার করা হয়। এদিকে ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় শুক্রবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মাধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী। তিনি জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চুনারুঘাট থানার অফিসার ফোর্সের সমন্বয়ে একাধিক টিম টানা ১২ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ঘটনার প্রধান আসামী মোঃ হাবিবুর রহমান রামিমকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যমতে লুণ্ঠিত অটোরিক্সা, ইজিবাই বিক্রির নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং আসামীর স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে ঘটনাস্থলের পাশে পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ২টি ছুরি ও ১টি দা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা বর্ণনা করেছে। অপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। আসামীদের বরাত দিয়ে সন্ধ্যায় চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হিল্লোল রায় জানান, আসামি রামিমসহ তার সহযোগীরা আতাউরকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পকেট হতে টাকা ও মোবাইল রেখে রাস্তায় পাশে নামিয়ে ঝাপটে ধরে চুরিকাঘাত করে পেটে ও গলায়। পরবর্তীতে হাত ও পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে টমটম ইজিবাইকটি নিয়ে যায়। সেটি শায়েস্তাগঞ্জ নিয়ে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ভাগভাটোয়ারা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা রং ও রাজমিস্ত্রীর আড়ালে বিভিন্ন এলাকায় চুরি ও জুয়া খেলতো। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন