আমরা আইনের সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা চাই -আনোয়ার হোসেন

0
95

সাম্প্রতিক গাজীপুর শ্রীপুরে সংগঠিত একটার পর একটা ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকায় কিছু না লিখে যেন থাকতেই পারছিলাম না,আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে – ইতিমধ্যেই ঘটনাগুলো আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নিশ্চয়ই। বিজয়ের মাস গত হলো,কিন্তু বিজয় মাসের কিছু ঘটনা এই শ্রীপুরের বাসিন্দাদের মনে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো গেঁথে আছে। ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়! একটু সুক্ষ্মভাবে তাকালেই – একটা ঘটনার সাথে অন্য ঘটনাটিও মিলে যায়! এই মিলে যাওয়া বিষয়টা তারাই ধরতে পারে – যারা এসব ঘটনাগুলোর সাথে কোনো না কোনো ভাবে সম্পৃক্ত। যেমন সাংবাদিক সমাজ, সমাজের বিবেকবান শিক্ষিত শ্রেণী কিংবা আমরা যারা বিভিন্ন সামাজিক অসংগতি নিয়ে কাজ করি। দেখা যাক – মিলটা আসলে কোথায়?

ঘটনা -১
মহান স্বাধীনতার চুড়ান্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর জুড়ে যখন সারা দেশে বিজয় দিবস পালনের আয়োজন চলছে, তখন এই শ্রীপুরে চলছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমিতে ভূমিদস্যুতা! প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিল মোড়লের রেখে যাওয়া জমিতে – পেশী শক্তির বলে চলছে ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলাম মোড়লের অবৈধ নির্মাণ কাজ। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তাকে থামানো যায়নি। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জুবেদা খাতুন নিরুপায় হয়ে – আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন! অভিযোগ পেলেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। পেশী শক্তির প্রভাব আর টাকার কাছে -অসহায় বৃদ্ধার আর্তনাদ যেন চাপা পড়ে যায়! বিষয়টি কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে আসে। আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়! আমরা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে এই জবরদখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন! মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন যা আমাদের নয় শুধু সমগ্র জাতির জন্য – অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক সংবাদ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে যদি তাদের রাস্তায় দাড়াতে হয়

তবে রাষ্ট্রের আইন ও প্রচলিত পুলিশি ব্যবস্থার আস্থারও সংকট দেখা দেয়।
স্থানীয় সকল সংবাদ পত্র, অনলাইন পোর্টাল, জাতীয় টিভি ও অনলাইন টিভিতে সেই খবর খুব গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটাম দেয়া হয়, উদ্দেশ্য হলো প্রশাসনকে গতিশীল করা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া হলোনা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রাস্তায় দাড়ানো যেন কোনো বিষয় নয়!
ঘটনা-২
১ জানুয়ারী ২০২০। মুজিব বর্ষের প্রথম দিন – শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শহীদ মিনারে দুর্বৃত্তরা হামলা করলো। ভেঙে ফেলা হলো – শহীদ মিনারের নাম ফলক।

ভাষা শহীদের অমর্যাদা করার ধৃষ্টতা দেখানো হলো বছরের প্রথম দিনেই। হামলার সাথে কারা জড়িত থাকতে পারে-তার উত্তর খুজতে হলে একটু পেছনে যেতে হয়। গত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই -পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার প্রশংসা করে বক্তব্য দেয়া হয়! এই ঘটনায় পত্রিকায় নিউজও হয়! তারও কিছুদিন পূর্বে – এই প্রতিষ্ঠানে সাবেক এমপি মহোদয়ের ছবি ফেলে রাখা হয় ওয়াসরুমের বেসিনের নীচে! ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে অপমানিত করা হয় একজন বীরমুক্তিযোদ্ধাকে।

প্রত্যেকটি ঘটনার প্রতিবাদ হলেও – কোনোটারই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে একটি বিষয় পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় – স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির কাজ এটা।
ঘটনা-৩
২ জানুয়ারী ২০২০। মুজিব বর্ষের ২য়দিনে একটা আক্রমণের ভিডিও ভাইরাল হয়।
গাজীপুর শ্রীপুরে জমি দখলে বাধা দেয়ায় রড, লাঠি ও বাঁশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫ জনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাওনা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড চকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিল আরও কিছুদিন আগেই এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডিও জমা দিয়েছিলেন গত নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ।


অর্থাৎ অনেক আগেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে থানাকে অবহিত করা হয় – কিন্তু প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যদি আগেই প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ থাকতো – তবে বীরমুক্তিযোদ্ধার রক্ত ঝড়াতে হতোনা।

দুটি জমি সংক্রান্ত ঘটনা আমাদের বেশি করে নাড়া দিয়েছে। দুটি ঘটনায় আমি প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ভীষণ ভাবে লক্ষ্য করছি আমরা। কারন দুটি ঘটনায়ই পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন – ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোকজন। পুলিশের এমন নির্লিপ্ত ভাব কেন – সেই প্রশ্ন এখন জনমনে! অপরদিকে তিনটি ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায় যে জায়গায় -সেটা হলো একই আদর্শ ও চেতনায় আঘাত করার বিষয়টি। যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ, যারা আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা মানুষ – তাদের নিষ্পেষিত করার একটা নগ্ন প্রয়াস।

নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা ঘটনাগুলোর পর্যবেক্ষনে বলতে চাই – প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এসব ঘটনার জন্মের সাথে জড়িত। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করলে – মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবরদখল সম্ভব হতোনা। স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির মানুষেরা আজ বিচার পাচ্ছে না। অপরাধীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা মানেনা, পুলিশ অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন করা, পত্রিকায় খবর প্রকাশ – কোনো কিছুই যেন পুলিশের কর্তব্যবোধ জাগাতে পারেনা! যা আমাদের আতংকিত করে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে। ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে হতাশার জন্ম দেয়। আমরা এই চলমান অনিরাপদ ও আতংকিত অবস্থার অবসান চাই।

মাননীয়া এসপি মহোদয়ের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা দমনে – নতুন আশা জাগিয়েছিলো এ এলাকার মানুষের মনে। এখনো আমরা নিরাশ নই। আমরা এসব চলমান দুর্বৃত্তায়ন রুখতে – এসপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মাননীয় এমপি মহোদয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন একটি মানবিক উপশহরের! আমরা একটি মানুষের বাসযোগ্য নিরাপদ মানবিক উপশহর চাই। যেখানে আইনের সুশাসন ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত থাকবে।

আনোয়ার হোসেন
আহবায়ক
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
শ্রীপুর গাজীপুর।

কোন মন্তব্য নেই