লিখেছেন সালাউদ্দিন আল রিফাত,, ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৮৩ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরে এসে ১৬ নভেম্বর সাবেক রাস্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সাথে বলাকা ট্রেনে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর রেল স্টেশনে এসে নামার মুহুর্ত,লাল গালিচা সংবর্ধনা সহ কিছু দুর্লভ চিত্র।রাণীর আগমন উপলক্ষে বলাকা নামক নতুন এ ট্রেন চালু করা হয়েছিল।বলাকা ট্রেন প্রথম অবস্থায় শ্রীপুর থেকে ঘুরে আবার ঢাকা চলে যেত।পরবর্তিতে শ্রীপুর হয়ে ময়মনসিংহ,পরে জামালপুর,সর্বশেষ ঝারিয়া-জাঞ্বাইর লাইনে চলাচল করছে।রাণীকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য শ্রীপুরের আশ পাশের কয়েকটি প্রাইমারী স্কুল থেকে ছোট ছোট ৭ জন ছেলে মেয়ে বাছাই করার জন্য দায়ীত্ব দেয়া হয় শ্রীপুর পাইলট হাইস্কুলের মোতালেব স্যারকে।মোতালেব স্যার শ্রীপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের থেকে আমাকে,শহিদুল্লাহ ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে সুমি,মতিন স্যারের মেয়ে রুবি সহ অন্যান্য সব মিলিয়ে ৭ জনকে বাছাই করেন।আমাদেরকে কয়েকদিন ট্রেনিং দেয়া হয়।আমাদের এক হাতে বাংলাদেশের পতাকা আরেক হাতে দেয়া হয় ইংল্যান্ডের পতাকা।ট্রেনের যে দরজা দিয়ে রাণী নামবে সে দরজার সামনে অর্থাৎ ২তলা ছোট সিগনাল ঘরের উত্তর পাশে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়।আমরা Long live Queen,Long live King,বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে দু’হাতের পতাকা নেরে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম রাণীকে।রাণী হাত নেড়ে আমাদের অভিনন্দন জানায়।রাণীর সাথে(রানীর হাসব্যান্ড)রাজাও ছিল।রাণী এবং রাজার জন্য ট্রেনের একটি কামরায় দু’টি সিংহাসন বসানো হয়েছিল।রাণীকে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল মোতালেব স্যারের কল্যানে। আমি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র হয়েও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেলাম।আমার জীবনে এটাই সবচেয়ে স্মরণীয় দিন।ট্রেনের ঐ দরজা থেকে রাস্তা পর্যন্ত বিছানো লাল গালিচার উপর দিয়ে হেটে এসে গাড়ীত উঠলেন।শাড়ী পড়া মেয়েরা ফুলের ডালা থেকে ফুল ছিটিয়ে দিল।অন্যান্য সকল ছাত্র ছাত্রীদেরকে শ্রীপুর থেকে বৈরাগির চালা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়া হল।প্রাইমারী থেকে হাইস্কুলের সকল ছাত্র ছাত্রীদেরকে নতুন স্কুল ড্রেস দেয়া হয়েছিল।রাণীর আগমনের প্রস্ততি স্বরূপ শ্রীপুর রেল স্টেশনে নতুন ফ্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়।(আগে শুধু ইট বিছানো ছিল)রেলগেটে চিরুনির মত নতুন বাঁশকল লাগানো হয়েছিল।রেলগেট থেকে বৈরাগির চালা পর্যন্ত রাস্তা পাকা করা হয়।(সিনেমা হল সংলগ্ন আমতলা থেকে বৈরাগিরচালা পর্যন্ত ইটের উপর শুধু পিচ ঢেলে দেয়া হয়েছিল সময়ের স্বল্পতায়।যদিও শ্রীপুর চৌরাস্তা থেকে আমতলা পর্যন্ত প্রায় ১কি.মি.রাস্তা হাসপাতাল করার সময় পিচ ঢালাই/কার্পেটিং করা হয়েছিল এবং এটাই ছিল শ্রীপুরের প্রথম পাকা রাস্তা।)উপজেলা কমপ্লেক্স বা TDCর পুকুরের নীচে নেট বিছিয়ে তার উপরে পানি দিয়ে পুকুর ভরাট করে প্রচুর মাছ ছেড়ে দেয়া হয়। পুকুরের চার কোনে চারটি পাইপের ভেতর দিয়ে নেটের সাথে রশি লাগিয়ে চার কোনে চারজন ধরে রাখে।রাণী পুকুরের কাছে আসামাত্র চার কোনের রশি একসাথে টান দিলে মাছগুলো সব পানির উপরে উঠে লাফাতে থাকে।যা দেখে রাণী মুদ্ধ হয়ে যায়।অতপর বৈরাগির চালা পৌছার পূর্বে এক মহিলা বালু এবং চাল গরম করে রেখে দেয়।রানী পৌঁছামাত্র বালু এবং চাল মাটির পাতিলে ঢেলে নারা দিতেই মুড়ি হয়ে যায়।রাণী অবাক হয়ে এরশাদকে প্রশ্ন করেছিলেন এগুলো মাটি থেকে কিভাবে তৈরি হল?এরশাদ বুঝিয়ে বলার পর তিনি ঐ মহিলাকে একটি দামি উপহার দেন।রাস্তার দুপাশে যাদের ছন/তাল পাতার ঘর ছিল তাদের সবার ঘরে টিন লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।রাস্তায় দু’পাশের গাছ গুলোতে সাদা রং লাগানো দেয়া হয়।বৈরাগির চালা গ্রামকে স্ব-নির্ভর গ্রাম হিসাবে সাজানো হয়েছিল।শ্রীপুর থেকে বৈরাগির চালা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দুর্বাঘাষ লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।বৈরাগিরচালা গ্রামে ব্রিটিশ বংশুদ্ধত একটি খ্রিস্টান পাড়া ছিল।রাণী তাদের সাথে দেখা করেন।(রাণীকে আনার পেছনে তাদের সহযোগীতা নেয়া হয়েছিল বলেও শুনা যায়।যদিও রাণীকে শ্রীপুরে আনার পেছনে অগ্রণী ভুমিকা ছিল শ্রীপুর ইউপির প্রয়াত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খানের।)বৈরাগির চালা গ্রামের কুটিরশিল্প এবং তাত শিল্প ঘুরে দেখেন রাণী।শ্রীপুরে রাণীর আগমনে উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়েছিল।রাণীকে সংবর্ধনা দেয়ার সময় রাণীর সাথে উঠানো আমাদের ঐ ৭ জনের কোন ছবি খোজে পাওয়া যায়নী।