একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগ নিয়ে জাতীয় পার্টির ভাবনা।

0
71

জি নিউজ ডেস্কঃ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ খ্যাত সিলেটে দ্বিগুণ আসন চাইবে জাতীয় পার্টি,
১৯৯১ সালের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে সাতটিতে বিজয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। কঠিন সময়ে রংপুরের পর এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার পর সিলেটকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলে অভিহিত করেছিলেন জাপাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা পরে ধরে রাখতে না পারলেও পাঁচ বছর আগে সিলেটে জাপার চার নেতা এমপি হয়েছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ বিভাগের পাঁচটি আসনে জাপাকে ছাড় দিলে চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। অপর আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন জাপার মনোনীত প্রার্থী। এ ছাড়া আরও দুটি উন্মুক্ত আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর কাছে পেরে ওঠেননি জাপা প্রার্থী। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ আসনে ছাড় চাইবে জাপা।

সিলেট বিভাগের চার জেলার জাতীয় পার্টির অন্তত ছয় নেতা জানিয়েছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বেড়েছে। এখনও একক বা জোটবদ্ধ নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও প্রয়োজনে দরকষাকষির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট জেলা আহ্বায়ক ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের কাছে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বেড়েছে, মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয়তা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে দেশের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আসন ভাগাভাগির বিষয় আসবে। সার্বিক পরিস্থিতিতে সিলেটে স্বাভাবিকভাবে জাতীয় পার্টি গতবারের চেয়ে বেশি আসন চাইবে। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের সঙ্গে জোট হওয়ায় তাদের কথাও ভাবতে হচ্ছে। সিলেটে তারাও কয়েকটি আসনে নির্বাচন করতে চাইবে।

সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির নেতারা কৌশলগত কারণে প্রকাশ্যে দাবি করা আসনসংখ্যা উল্লেখ না করলেও এই সংখ্যা ৮ থেকে ১১টি হবে বলে জানিয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে বিভাগের চার জেলার মধ্যে এবার হবিগঞ্জের চারটি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাইবেন। সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে অর্ধেক আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জাতীয় পার্টি। এমন সুবিধা নিয়ে সুনামগঞ্জের পাঁচটি

আসনের মধ্যে দুটি ও মৌলভীবাজারের চারটির মধ্যে দুটিতে নির্বাচন করতে আগ্রহী জাতীয় পার্টি। এতগুলো আসনে জাতীয় পার্টির ছাড় পাওয়ার পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, দেশের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগে তারা যদি বিভাগের অর্ধেক আসন চায়, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কী করবেন!

জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে সেলিম উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। সেলিম উদ্দিন পরে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের হুইপের দায়িত্ব পেয়েছেন। মৌলভীবাজারে চারটি আসনের মধ্যে একটিতে ছাড় ও আরেকটি আসনে উন্মুক্তভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দিলেও বিদ্রোহী আবদুল মতিনের কাছে পরাজিত হন জাতীয় পার্টির মুহিবুল কাদির চৌধুরী পিন্টু। এ ছাড়া মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন জাতীয় পার্টির আহমদ রিয়াজ। একইভাবে হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের আবু জাহিরের কাছে পরাজিত হন আতিকুর রহমান আতিক। অবশ্য হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় পার্টির এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু ও সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সিলেট বিভাগের সেই আসনগুলো ধরে রেখেই নতুন আরও কয়েকটি আসনকে টার্গেট করেছে জাতীয় পার্টি। এরই মধ্যে এই আসনগুলোতে দলের প্রার্থীর নামও প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেছেন, পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত একটি আসনে প্রার্থী বদল হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলার চারটি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক এবার হবিগঞ্জ-৩ আসনের পাশাপাশি হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন। হবিগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক,বিশিষ্ট শিল্পপতি, বাবু শংকর পাল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহর পাশাপাশি সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসন দখলে নিতে চায় জাতীয় পার্টি।

সিলেট-২ আসনে ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট-৫ আসনে সেলিম উদ্দিন আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য সেলিম উদ্দিন নিজের বাড়ির সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে নির্বাচনের কথাও ভাবছেন। আবার নিজেদের জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের একাংশের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবর রহমানের জন্য সিলেট-৬ আসন দাবি করার কথা ভাবছে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমানের জন্য সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে সমঝোতা চাইবে জাতীয় পার্টি। সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির একজন নেতা জানিয়েছেন, সমঝোতার পর আসনসংখ্যা কমলেও সিলেটে গতবারের চেয়ে বেশি আসনে আওয়ামী লীগকে ছাড় দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে কেন্দ্রীয়ভাবে আসন বণ্টন হবে। এখানে সিলেটের জন্য আলাদা কিছু নেই। সুত্রঃ দৈনিক সমকাল

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন