বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের শেষের দিকে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে দেশের রাজনীতিতে উত্তাল পরিস্থিতি। দেশের রাজনীতির মাঠ প্রতিনিয়ত গরম রাখছে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি। তাদের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র থেকে ঘোষিত সকল কর্মসূচি পালন করতেছে। এসকল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নিয়মিতই পুলিশের সঙ্গে হচ্ছে সংঘর্ষ। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। তাদের অনেক নেতাকর্মীরা প্রাণ ও দিয়েছে। অনেকে রয়েছে জেলে।আবার, অনেক নেতাকর্মীর নামে রয়েছে একাধিক মামলা। হামলা মামলা উপেক্ষা করে বিএনপি তাদের দাবী নিয়মিত পালন করার একটা পুরষ্কার পেয়েছে ইতিমধ্যে । সেই পুরষ্কার হলো,তারা বিদেশিদের বুঝাতে পেরেছে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নেই। দেশি বিদেশি চাপে বর্তমানে সরকার চাপে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত সহিংস পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকা বাংলাদেশের উপর ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দুর্নীতি ও ব্যাংক খেলাপী ব্যাক্তির উপর ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে, এই সময়ে বাংলাদেশের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ না করলেও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতেছে।আমেরিকার এই পরোক্ষ রাজনৈতিক চাল বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়।অন্যদিকে, ভারত সরকার বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে। তারা আমেরিকাকে কূটনৈতিক বার্তা দিয়েছে। যা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি বলছে, আগামী নির্বাচন ও বিএনপি নিয়ে ভারত শঙ্কায় আছে। আওয়ামী লীগ বলছে, ভারত সরকার যদি বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে আমেরিকার কাছে বার্তা দিয়ে থাকে সেটা এ অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকা ও ভারতের পরোক্ষ হস্তক্ষেপের রাজনীতি এ দেশের রাজনীতিতে প্রধান শিরোনামে রয়েছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ দু’দেশের কৌশলগত চাল বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। কারণ,আমেরিকা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পিছনে লেগেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট এই মুহূর্তে ভালো নয়,যার সুযোগ বিদেশীরা নিচ্ছে। বিএনপি প্রতিনিয়ত কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে অবস্থান করছে,এতে পুলিশের এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের যেসব আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে সেসব মুখবন্ধ করে সহ্য করছে। কোনো রকম হরতাল, ভয়াবহ সংঘাত কিংবা জ্বালাও পোড়াও, আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি করছে না বিএনপি। তারা বিদেশিদের কাছে দুধের মত পরিষ্কার হওয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি বিদেশিদের বুঝাচ্ছে,তাদের সমর্থক থাকা সত্ত্বেও অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতেছে কিন্তু ধ্বংসের রাজনীতি করছে না।আগামী নির্বাচন গত দুটি নির্বাচনের মত ভূতেকিলানো নাটকের কাহিনিতে সীমাবদ্ধ হবে না, বাস্তবতায় দৃশ্যমান হবে। কারণ , বাংলাদেশের রাজনীতির এই মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি।বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার একাধিক মন্তব্য রয়েছে। কিন্তু ভারত আমেরিকার অবস্থানে সহমত নয়। ভারত বাংলাদেশের সাথে খুবই সখ্যতা তৈরি করছে। তারা বাংলাদেশের সংসদের বিরোধীদলকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লিতে গেছে। সম্ভবত, অনুমান করা যায়, ভারত সরকার জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলকে সরকারের পক্ষে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের কথা বলবে। বিদেশি ষড়যন্ত্র আগামী নির্বাচনে হলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হতে পারে। ভারত সরকার আমেরিকাকে পাঠানো বার্তায় লিখেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দলের ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ভারত সরকার জামায়াতে ইসলামীকে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছে। আরও লিখেছে,পাকিস্তানের সাথে জামায়াতে ইসলামের সংযোগ আছে। বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের এসব সাফাই গাওয়া নিয়ে আমেরিকার কোনো মাথাব্যথা নেই।অনুমান করা যায়, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই থাকতে পারে ভারত। আমেরিকা বলছে বাংলাদেশে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চায়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উপর আমেরিকার নিষেধাক্ষায় সরকার চাপে রয়েছে। ইমরানের পরে কি এবার শেখ হাসিনার পতন হবে? আমেরিকার একটি গণমাধ্যমের রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে, আমেরিকার রাজনৈতিক চালের কারণেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতন হয়েছে। আমেরিকার কৌশলের কাছেই শেষ পর্যন্ত পতন হতে হয়েছে ইমরান খানকে। রাজনীতিতে বোল্ট আউট হয়েছেন ইমরান খান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপে ফলাফল ভালো দিকে যাবে নাকি খারাপের দিকে যাবে, তা ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থাকতে হবে।এদেশের রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার মত দেশের নেগেটিভ অবস্থান পরিষ্কার করে যে, বর্তমান সরকার সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।
বাদশাহ আবদুল্লাহ
কলামিস্ট