কক্সবাজারে শুরু হলো অ্যাপভিত্তিক বাইসাইকেল সেবা জোবাইকের যাত্রা

0
273
জি নিউজ ড্রেক্সঃ বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে চালু হলো আ্যাপভিত্তিক বাইসাইকেল সেবা। জোবাইক নিয়ে এলো এলো এই সেবা। কক্সবাজার গেলে অনেকেই বাইসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করে ব্যর্থ হোন। চাহিদা থাকা সত্বেও বাইসাইকেল ভাড়া দেয়ার সুবিধা কক্সবাজারে চালু করা সম্ভব হয়নি। এর একটি প্রধান কারণ সাইকেল চুরি হওয়ার ভয়। বাংলাদেশের পর্যটনের গুলোর মধ্যে একমাত্র সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকরা ভাড়ায় সিবিচে বাইসাইকেল চালানোর সুবিধা পায়।দ্বীপ হবার কারণে সেন্টমার্টিন থেকে সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে সেখানে বেশ কয়েকবছর আগেই সাইকেল ভাড়া দেয়া শুরু হয়েছে। অনেক পর্যটকই সেন্টমার্টিন গেলে পুরো দ্বীপ সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ভাড়াও মোটামুটি কম ৫০-৬০ টাকা প্রতি ঘণ্টা। সেন্টমার্টিনের বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে ভাড়া পাওয়া যায় বাইসাইকেল, এছাড়া রিসোর্টগুলোকে বললে তারাও ব্যবস্থা করে দেয়।

মেরিন ড্রাইভে সাইকেল চালানোটা সাইক্লিস্টদের কাছে একা স্বপ্নের বিষয় বলা যায়। বিভিন্ন সময়ে তাই নিজ উদ্যোগে অনেকেই সাইকেল চালিয়েছে মেরিন ড্রাইভে। ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ (টিওবি), বিডিসাইক্লিস্টস সহ অনেক বড় বড় গ্রুপ ইভেন্ট দিয়ে রীতিমতো আয়োজন করে সাইকেল চালিয়েছে সেখানে। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকেই সাইকেল চালিয়েছে মেরিন ড্রাইভে। তবে কক্সবাজারে সাইকেল নিয়ে গিয়ে সাইকেল চালানোটা বেশ ঝক্কির ব্যাপার। বাসে বা বিমানে সাইকেল বহন করার জন্য সাইকেল খুলে বক্স করতে হয়। কক্সবাজার পৌঁছানোর পর সে বক্স খুলে সাইকেল জোড়া দিয়ে চালিয়ে আবার ফিরে আসার সময় আবার বক্স করতে হয়। মোটামুটি দক্ষ সাইক্লিস্ট ছাড়া এ কাজগুলো বেশ কঠিনই। তাই প্রথম কয়েকবার সাইকেল কক্সবাজারে সাইকেল নিয়ে গিয়ে এত ঝামেলা দেখে পরে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

তবে কক্সবাজারে এসব সমস্যার সমাধান করেই চালু হতে যাচ্ছে অ্যাপ নির্ভর বাইসাইকেল ভাড়া দেবার সুবিধা “জোবাইক”। ১৮ জুন থেকে কক্সবাজারে ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে এ বাইসাইকেল। জোবাইকের অ্যাপস গুগল প্লে থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে নিজের স্মার্ট ফোন থেকে। এছাড়া জোবাইকের আউটলেট থেকে রিচার্জ করে নিতে হবে ভাড়া পরিশোধের জন্য। যে পরিমাণ রিচার্জ করুন না কেন এর মেয়াদ থাকবে আজীবন। এরপর স্মার্ট ফোনে অ্যাপস থেকেই দেখে নিতে পারবেন কাছাকাছি কোথায় বাইসাইকেলটি আছে। বাইসাইকেল খুঁজে পেলে অ্যাপস দিয়ে বাইসাইকেলের গায়ের কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে সাইকেলের তালা খুলে যাবে এবং আপনার ভাড়া গণনা শুরু হবে।

বাইসাইকেলের সামনে হ্যান্ডেলবারের মাঝখানে হেডসেটের উপরে ও বাইসাইকেলের পেছনে লকের উপরে এ কিউ আর কোডটি দেয়া থাকবে। জোবাইকের অ্যাপস থেকে আনলক বাইক অপশনে গিয়ে কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালাটি খুলে যাবে এবং আপনি সাইকেলটি ব্যবহার করা শুরু করতে পারবেন। কাজ শেষ হলে বা গন্তব্যে পৌঁছে গেলে আবার সাইকেলটি লক করে দিলে আপনার রাইডটি শেষ হয়েছে বলে জানানো হবে এবং অ্যাপসের স্ক্রীনে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেখতে পাবেন।

পর্যটন এলাকায় জো-বাইকের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মিনিট ১ টাকা ৫০ পয়সা। এর অর্থ হচ্ছে প্রতি ঘণ্টায় ৯০ টাকা ভাড়া আসে। আপাত দৃষ্টিতে ভাড়া বেশি মনে হলেও জো-বাইকের একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে আপনার ব্যবহার শেষ হলে বাইসাইকেলটি দৃশ্যমান কোনো জায়গায় পার্ক করে রাখলেই চলবে। ধরুন, আপনি বাইসাইকেলটি নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলেন। যেতে আপনার সময় লাগলো ১০ মিনিট, এরপর আপনি সাইকেলটি সেখানেই ছেড়ে দিয়ে পার্ক করে রাখবেন। ১০ মিনিটের জন্য আপনার ১৫ টাকা উঠবে। সেখানে যদি আপনি ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে ফিরে আসার সময় যেকোনো আরেকটি সাইকেল নিয়ে আসলেই হবে।জোবাইকের সাইকেলগুলো ইউনিসেক্স ডিজাইনের যেটা নারী-পুরুষ সকলেই চালাতে পারবে। ইতিমধ্যে যারা রেজিস্টার করেছেন, পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া জোবাইকের প্রথম এক সপ্তাহ সেই ব্যবহারকারীরা ফ্রিতেই চালাতে পারবেন এ সাইকেল। কক্সবাজারের মূল তিনটি সৈকত লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলীতে মোট ২০টি বাইসাইকেল দিয়ে উদ্বোধন হয়ে গেল জোবাইকের।

এর প্রধান উদ্যোক্তা মেহেদি রেজা জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হবে জোবাইকের সেবা। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে দেশের অন্যান্য জায়গায়ও শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বিডিসাইক্লিস্টসের এডমিন ফুয়াদ আহসান চৌধুরী ও ফয়সাল নিজাম। প্রথম ব্যবহারকারী হিসেবে তারা বীচ এলাকায় জোবাইক ব্যবহার করে কলাতলীতে আসেন।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন