জি নিউজ ডেস্কঃ কথিত বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা নিয়ে দেশব্যাপী চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক। গতকাল একটি প্রতিবেদনে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে ৭টি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিল। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ মানুষ খুঁজছে। কথিত এই বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে আজ আরও কয়েকটি প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এছাড়া বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি যে সাজানো একটি নাটক ছিল সেটাও আজ পরিষ্কার বলছে সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর এনিয়ে মানুষের মধ্যে আর বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ নেই যে এটা সাজানো নাটক ছিল। আর ঠিক কী কারণে কথিত এই বিমান ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছিল বিভিন্ন সূত্র থেকে সেটারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে ।
প্রথমত: রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এবং বিমানের পাইলট ও ক্রুরাও বলেছেন- পাইলটের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে একজন অস্ত্রধারী বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল। এই সংবাদটি পাইলট শাহ আমানত কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিল। এরপর কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে জরুরি ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে। কিন্তু, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বললেন- এমন ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিমান স্বাভাবিক অবতরণ করেছিল। জরুরি অবতরণের কথা গণমাধ্যম নিজেরা তৈরি করেছে। তার ভাষায় বিমান ছিনতাই করার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সব কিছুই ছিল স্বাভাবিক। বিমানপ্রতিমন্ত্রীর এই চরম মিথ্যাচার মানুষের সন্দেহ সংশয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত: সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান রোববার রাতে বলেছেন- ছিনতাইকারীর কাছে খেলনা পিস্তল ছিল। তার এই বক্তব্য নিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এনিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন-বিমানে থাকা একাধিক যাত্রী গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন যে তারা গুলির শব্দ শুনেছেন। জাসদ নেতা মইনুদ্দিন খান বাদলও গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন- একজন অস্ত্রধারী বিমানের ভেতরে ফায়ার করেছে। খেলনা পিস্তল দিয়ে কি গুলি করা যায়? খেলনা পিস্তল নিয়ে একজন যুবক একটি বিমান ছিনতাইয়ের সাহস করে কীভাবে? সিএমপি কমিশনারের বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে একজন সচিবও সোমবার বলেছেন- খেলনা পিস্তল থেকেও ঠুস ঠুস শব্দ হতে পারে।
তৃতীয়ত: ছিনতাইকারীর হাতে যদি খেলনা পিস্তলই থেকে থাকে তাহলে তাকে নিরস্ত্র করার জন্য সেনাবাহিনীর এত কিছু করতে হল কেন? সিএমপির ভাষ্যমতে- ছিনতাইকারীর সঙ্গে কোনো বিস্ফোরকও ছিল না। তাহলে এমন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হলো কেন? তাহলে সেনাবাহিনী কি মশা মারতে কামান লাগিয়েছে?
খেলনা পিস্তল বলার কারণ
নিহত ছিনতাইকারীর হাতে যে পিস্তল ছিল এটা প্রমাণিত। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজনই বলেছেন যে, ছিনতাইকারীর হাতে পিস্তল ছিল। কিন্তু, হঠাৎ করেই রাতে সিএমপি কমিশনার এটাকে খেলনা পিস্তল বানিয়ে ফেললেন কেন? আর বললেন যে ওই যুবকের শরীরে কোনো বিস্ফোরক ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশেই এটাকে খেলনা পিস্তল হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। কারণ যদি বলা হয় যে এটা আসলেই পিস্তল ছিল তাহলে ফেঁসে যাবে শাহ জালাল বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। বিপদ দেখলে তারা ওই ব্যক্তির নাম বলে দিতে পারে যার নির্দেশে ওই যুবক অস্ত্র নিয়ে বিমানে উঠেছিল। তাই, বিষয়টিকে পুরোপুরি চাপা দিতে এটাকে খেলনা পিস্তল হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া প্রশ্ন উঠছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও। বিষয়টি দিকে বিদেশিরাও তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।
তবে পুরো ঘটনাই কি সাজানো নাটক??
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত বিমান ছিনতাইয়ের এই পুরো ঘটনাটিই ছিল সাজানো নাটক। এটা সরাসরি উপর মহলের কারো নির্দেশেই হয়েছে। কারণ হিসেবে মনে করা হয়,চকবাজারের কেমিক্যালের গোডাউন থেকে লাগা আগুনে এতগুলো মানুষ নিহতের ঘটনায় সরকার খুব বেকায়দায় পড়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা প্রথমে বলেছিলেন- এই আগুনের সঙ্গে কেমিক্যালের কোনো সম্পর্ক নেই। ওইখানে কোনো কেমিক্যাল গোডাউন নেই। আর কেমিক্যাল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়নি। কিন্ত, পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত ও সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে কেমিক্যাল বিস্ফোরণ থেকেই মূলত ভয়াবহ এই আগুনের সূত্রপাত। এই ঘটনার পুরো দায়ভারই এখন সরকারের ওপর যাচ্ছে। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের সবাই চরম অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছে।
জানা গেছে, ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিতেই মূলত কথিত বিমান ছিনতাই নাটকের অবতারণা করা হতে পারে।
বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, এমন নাটকের কোনো মানে হয় না। এটা যে সাজানো নাটক ছিলো তা সবাই বুঝে গেছে। এই সাজানো বিমান ছিনতাই নাটক থেকে এবার দর্শকরা অনেক কিছুই অনুভব করতে পারছে মনে হয়।