সাইদুল ইসলাম রনি, কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় শুক্রবার পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সসহ মোট ৬০ জন প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে বা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে পুরো জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৯ জন। কাপাসিয়ায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে আক্রান্তের সংখ্যা আরো ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কাপাসিয়াবাসীকে বাঁচতে হলে যে কোন উপায়ে ঘরে থাকার আহবান জানানো হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম শনিবার সকালে জানিয়েছেন, কাপাসিয়ার এ প্রেক্ষাপটে বেশী সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বড় টিম কাপাসিয়া আসবে। এজন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো আরো বেশী সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করে কাপাসিয়ার প্রকৃত অবস্থা জানা। যাতে কাপাসিয়ায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
জানা যায়, প্রায় ৩৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপাসিয়া উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়নের ২৩৪ টি গ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বাস। বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বেশী। শিক্ষিতের হারও বেশী। নেই বড় কোন শিল্প কলকারখানা। ফলে এখানে বহিরাগত লোকজন কম। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, বেশী শিক্ষিতের কাপাসিয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বোধও কম।
গাজীপুর জেলায় শুক্রবার পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৪৯ জন। তারমধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশী কাপাসিয়ায়। কাপাসিয়া উপজেলাধীন সদর ইউনিয়নের দস্যুনারায়নপুর, তরগাঁও ইউনিয়নের তরগাঁও, কড়িহাতা ইউনিয়নের রামপুর, বারিষাব ইউনিয়নের ভেড়ারচালা এবং টোকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আব্দুস সালাম সরকার জানান, কাপাসিয়ায় শুক্রবার মোট ২৭ জন করোনা পজিটিভ হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তিনি নিজেও রয়েছেন। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল এ হাসপাতালের ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভিতরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে নার্স ২জন, সহকারি নার্স ১ জন, স্টোর কিপার ১, হিসাব রক্ষকসহ ৭ জন। এবং হাসপাতালের বাইরে কাজ করেন এমন স্বাস্থ্য সহকারি ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সকলকে প্রাথমিক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে তাদের শারিরীক অবস্থা বিবেচনা করে ঢাকায় পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আক্রান্তদের জন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করেছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, এতকিছুর পরেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আব্দুস সালাম সরকার মনোবল হারাননি। তিনি ও আমরা এতকিছুর পরেও স্বাস্থ্য সেবা কিভাবে চালু রাখা যায়, তা নিয়ে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করছি। তিনি আরো জানা, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে কাপাসিয়ায় যিনি করোনার নমুনা সংগ্রহ করেন, তিনিও রয়েছেন। এসময় তিনি সকলকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ঘরে থেকে আপনারা আমাদেরকে করোনা মোকাবেলায় সহায়তা করুন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নির্দেশনা মতে করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ঘরে থাকা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দুরে থাকা। এজন্য সামাজিক দুরুত্ব বঝায় রাখার কোন বিকল্প নেই। এ জন্য গত কয়েকমাস ধরে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী সব মহল থেকে করোনা সচেতনতায় বলা হচ্ছে, ঘরে থাকুন, সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখুন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ভাবখানা এমন, আমরা সবাই রাজা, আমাদের এ রাজার রাজত্বে। অথচ সকলের ঘরের দুয়ারে এখন মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে দাড়িয়ে আছে বিশ্ব মহামারি করোনা।
এমন অবস্থায় কাপাসিয়ায় মানুষ অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে হাওয়া খেতে আসে, করোনা নিয়ে ঘরে যায়, হাট বাজারে ঘুরাঘুরি করে, মোড়ের দোকানে চায় খায়, আড্ডা দেয়। অনেক এলাকায় লোক জড়ো করে গল্প করে। বিভিন্ন মাধ্যমে এত প্রচারণা চালিয়েও উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অনেককে সতর্ক করেছে, কাউকে শাস্তি দিয়েছে ও জরিমানাও করেন, যাতে মানুষ ঘরে থাকে, সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ নানা কৌশল নিলেও তাদের ফাঁকি দিয়ে করোনা উৎপাদন বাড়িয়ে দৃশ্যত মনে হচ্ছে কাপাসিয়ার মানুষ খুশি।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উপজেলায় পাঁচটি হাটবাজার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা: ইসমত এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
গণবিজ্ঞপ্তিতে যে সমস্ত হাট বাজার বন্ধ করা হয়েছে এগুলো হলো, কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া বাজার, দস্যু নারায়নপুর বাজার, ত্রিমোহনী বাজার ও আড়াল বাজার বাজার।
গণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। করোনাভাইরাস কাপাসিয়া উপজেলায় যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সে লক্ষে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কাপাসিয়াবাসীকে ঘরে থাকার এবং সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডবোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, কাপাসিয়ার মানুষকে ঘরে রাখার জন্য উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, বিভিন্ন সময়ে সেনা সদস্যগণ নানাভাবে উপজেলায় মানুষকে ঘরে থাকার জন্য প্রচার প্রচারণা চালনো হচ্ছে। এখনো এগুলো অব্যাহত আছে। কিন্তু মানুষ কিছুতেই ঘরে থাকা ও সামাজিক দুরত্ব মানছে না। তিনি আবারও সকলকে যে কোন উপায়ে ঘরে থাকার এবং সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার জন্য অনুরোধ জানান