কাবা শরিফে‘কেন চুম্বন করবেন? হাজরে আসওয়াদ’

0
240

ইসলাম কি বলে জেনে নিন

জি নিউজ ডেস্ক : হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর। যা পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বহস্তে স্থাপন করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা শরিফের কোনায় এ পাথর স্থাপন করে তাতে চুম্বন করেন।
হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য হাজরে আসওয়াদ আল্লাহ তাআলার অনন্য নির্দশন। আল্লাহ তাআলা এ পাথরের কোনো থেকে তাওয়াফ করাকে বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। এ পাথরের দিকে ইশারা করে সম্ভব হলে চুম্বন বা স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

মুসলিম উম্মাহর জন্য এ পাথরটিকে চুম্বন করা সুন্নাত। আর তাওয়াফকালে এ পাথরটিকে চুম্বন বা স্পর্শ সম্ভব না হলে এর দিকে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করাও সুন্নাত। হাদিসে পাকে এ পাথরে চুম্বনের ফজিলত বর্ণায় এসেছে!
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন- ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চিত আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন এটাকে এমনভাবে ওঠাবেন যে, তখন- এটার (হাজরে আসওয়াদের) দুইটি চোখ হবে; যা দিয়ে দেখবে। এর (হাজরে আসওয়াদের) একটি জিহ্বা হবে; যা দিয়ে কথা বলবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের (প্রিয়নবির ভালোবাসায় একনিষ্ঠতার) সঙ্গে এটাকে চুম্বন করেছে, তার পক্ষে এটা (হাজরে আসওয়াদ) সাক্ষ্য দেবে। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি)

হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য হাজরে আসওয়াদ চুম্বন এক মহা আকর্ষণের নাম। আল্লাহ তাআলা যাকে তাওফিক দেন তিনিই এ পাথর চুম্বনে সমর্থ হন। কথিত আছে, ‘এ পাথরে চুম্বনের বরকতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে গোনাহ থেকে মুক্ত করেন। সুতরাং হজ ও ওমরা পালনকারীদের উচিত অন্যকে কষ্ট না দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা।

হাজরে আসওয়াদ (আরবি: الحجر الأسود‎‎ বাংলা:কালো পাথর)

হল একটি কালো রঙের প্রাচীন পাথর যা কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার (চার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথর আদম ও হাওয়ার সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে।
প্রাক ইসলামি পৌত্তলিক সমাজেও এই পাথরকে সম্মান করা হত। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, রাসুল মুহাম্মদ (সা) ৬০৫ সালে এটি কাবার দেয়ালে স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এটি একটি রূপার ফ্রেমে আটকানো অবস্থায় কাবার সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এর রং গাঢ় কালো এবং লক্ষাধিক হাজির স্পর্শের কারণে এটি মসৃণ আকার লাভ করেছে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী এটি আদম ও হাওয়ার সময় বেহেশত থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে। এটিকে একটি উল্কা বলা হলেও এর সত্যতা নিশ্চিত না।

হজ্জ বা উমরার অংশ হিসেবে মুসলিমরা তাওয়াফ করে থাকেন। এর শুরুতে হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়া রীতি রয়েছে। ফ্রেমে মুখ ঢুকিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে হয়। এর পাশে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকে সৌদি পুলিশ। তারা খেয়াল রাখে, ফ্রেমে মাথা ঢোকাতে বা চুম্বন করতে কারও যেন কষ্ট না হয়। তবে চুমো দেয়া সম্ভব না হলে হাত ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা হয়।

হাজরে আসওয়াদ নিয়ে ঘটনা, ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।

এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি আট টুকরো। আগে হাজরে আসওয়াদ ছিল আস্ত একটি পাথর। হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরে ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরা ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরা দেখা যায়। বড় টুকরাটি খেজুরের সমান।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ ও ওমরাপালনকারীকে গোনাহ মাফের নিয়তে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন এবং স্পর্শ করার তাওফিক দান করুন। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা অনন্য নির্দশন হাজরে আসওয়াদের সাক্ষ্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।-অনলাইন।

কোন মন্তব্য নেই