কুরবানীর প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস

0
73

কদিন বাদেই আসছে কোরবানির ঈদ,অন্যান্য মৌলিক ইবাদতের ন্যায় কুরবানীর প্রথাও হযরত আদম আঃ থেকে শুরু হয়েছে এবং যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরামগন তা বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানেও আমাদের উপর কুরবানি প্রথা চালু রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার – ২৭, ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা হযরত রাসূলে করীম সাঃ কে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনি আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়ে আদম আঃ এর নির্দেশে তাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য কুরবানি করলেন তখন তাদের একজনের কুরবানি কবুল হয়েছিল। সে ছিল হাবিল। অপর জনের কুরবানি কবুল হয়নি। সে ছিল কাবিল। কাবিল বলল হাবিল কে আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবিল বলল আল্লাহ্ ধর্ম বিরুদের পক্ষ হইতে কুরবানি গ্রহণ করেন।
এখানে আমরা বুঝতে পারলাম, দিল থেকে এখলাসের সাথে আল্লাহর জন্য হাবিল কুরবানি দিয়েছিল। তাই তার কুরবানি কবুল করা হয়েছে। আর কাবিল আল্লাহর বিধান লংগন করে আকলিমা কে বিবাহ করার জন্য কুরবানি করেছিল। তাই কবুল হয়নি।
কুরবানির বর্তমান প্রথা হযরত ইবরাহীম আঃ থেকে শুরু হয়েছে। সেখানেও মূল ছিল হযরত ইবরাহীম আঃ এর মনের কুরবানি, তিনি আল্লাহর হুকুমে তার কাছে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস পুত্রকে কুরবানি দেওয়ার জন্য মন থেকে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে ছিলেন। এটাই ছিল আল্লাহর মুহাব্বতের কুরবানি নিজের সন্তানের চেয়ে প্রিয় দুনিয়াতে আর কি হতে পারে?
সেই সন্তান কে কুরবানি দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ পাক হযরত ইবরাহিম আঃ কে হুকুম দিয়ে ছিলেন। তাও কেমন পুত্র? প্রায় সারা জীবন হযরত ইবরাহিম আঃ ছিলেন নিঃসন্তান। সন্তানের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করেছেন। নিজের বয়স হয়ে গিয়েছে ১২০ বছর এবং স্ত্রীর বয়স হয়ে ছিল ৯৯ বছর। ( বয়স নিয়ে মতামত রয়েছে)
এ অবস্থায় আল্লাহ্ পাক তাকে একটি সন্তান দান করেছেন। নাম ইসমাইল এই পুত্র ইসমাইলের বয়স যখন সাত বছর বা এক বর্ণনা মতে নয় বা তের বছর হলো তখনই ইবরাহিম আঃ কে স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক আদেশ দিলেন তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কে কুরবানি কর। নবীদের স্বপ্ন ওহি হয়। তাই নবীগণের স্বপ্ন শরিয়তের দলিল হয়ে থাকে। হযরত ইবরাহিম আঃ তাই স্বপ্নের আদেশ অনুযায়ী পুত্র কে কুরবানি দেওয়ার জন্য মিনার ময়দানে নিয়ে গেলেন। সূরা সফ্ফাতের ১০২ নং আয়াতে বর্ণিত আছে ইবরাহিম আঃ পুত্র ইসমাইল কে বললেন, হে আমার প্রিয় ছেলে নিশ্চয়ই আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ্ করছি। অতএব তুমি ভেবে দেখ এখন কি করনীয়!
ইসমাইল আঃ বললেন হে আমার প্রিয় আব্বু আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। আল্লাহ্ চাহেতো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের সাথে পাবেন। অন্য দিকে এটা বর্ণিত আছে তারা পিতা পুত্র উভয় যখন আল্লাহর হুকুম অনুগত্য করার জন্য নিজেদেরকে সৌপর্দ করল। আর ইবরাহিম আঃ যখন তার পুত্র ইসমাইল কে উপুর করে শুয়ালো তখন আমি আল্লাহ্ ডাক দিয়ে বললাম হে ইবরাহিম তোমার স্বপ্ন কে তুমি বাস্তবে পরিনত করেছ। এটা ছিল তোমার আমার মুহাব্বতবের পরীক্ষা মাত্র।
এ পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হয়েছ, আল্লাহ্ বলেন আমি এই ভাবে নেক লোকদের কে পুরুস্কিত করে থাকি। আল্লাহ্ পাক বলেন আমি তার পুত্রের বদলে একটি মর্যাদাবান দুম্বা পাঠিয়ে দিলাম জান্নাত থেকে। এই দুম্বাটি আনা হয়ে ছিল ইবরাহিম আঃ পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়ে ছিলেন কিন্তু দেখা গেল পুত্র যবেহ্ হল না তার স্হলে ঐ দুম্বাটি যবেহ্ হয়ে গেল। এ ঘটনায় এখন দেখা গেল পুত্র যবেহ্ না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ বলেছেন ইবরাহিম আঃ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বুঝা গেল পুত্র কুরবানি হওয়া টাই কুরবানির মূল বিষয় ছিল না।
বরং আল্লাহর কাছে কাম্য ছিল হযরত ইবরাহিম আঃ থেকে দুনিয়ার সমস্ত কিছুর মায়া মুহাব্বত ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর মুহাব্বতের জন্য কুরবানি করা। আর সেটাই তিনি করেছেন। কাজেই আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই