কোয়ারেন্টাইন (কোভিড-১৯) কি, কেন, কাদের জন্য এবং কিভাবে?

0
58

কোয়ারেন্টাইন (কোভিড-১৯)
কি, কেন, কাদের জন্য, কিভাবে?
সচেতন হোন, নিরাপদ থাকুন, নিরাপদ রাখুন

কোয়ারেন্টাইন বলতে কি বোঝায়?
কোয়ারেন্টাইন এর শাব্দিক অর্থ সঙ্গরোধ। সাধারণভাবে ভাইরাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহক বা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি হতে তার আশপাশের অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমন রোধের লক্ষ্যে ঐ ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে পৃথকভাবে বিশেষ পরিচর্যায় রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইনে থাকার পুরো সময় জুড়ে শুধুমাত্র চিকিৎসক ও সেবাকর্মী ব্যতীত খুব বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া উচিত নয়।

প্রাতিষ্ঠানিক-কোয়ারেন্টাইন- বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কারো শরীরে যদি ভাইরাসের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে সরকার বা অন্য কোনো সংস্থার তত্ত¡াবধানে কোনো প্রতিষ্ঠানে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে সেটিকে প্রাতিষ্ঠানিক-কোয়ারেন্টাইন বলে।

হোম-কোয়ারেন্টাইন- সাধারণত কোনো সম্ভাব্য বাহকের দেহ থেকে যাতে ভাইরাস তার আশপাশের মানুষের মাঝে সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য তাকে কোনো বাড়ি বা গৃহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে সেটিকে হোম-কোয়ারেন্টাইন বলে।

সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন- যখন কোনো এলাকায় ভাইরাসের সংক্রমন দ্রæত গতিতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন নিজেকে ভাইারাসের সংক্রমন থেকে মুক্ত থাকার জন্য কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজ গৃহে অন্তরীণ থাকেন তাহলে তাকে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন বলে।

আইসোলেশন- যখন কোনো ব্যক্তি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় বা কারো শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত হয় তখন তার শরীর থেকে ভাইরাস যাতে অন্যদের শরীরে সংক্রমিত হতে না পারে তার জন্য তাকে হাসপাতালে বিশেষ পরিচর্যায় (আইসোলেশন) রাখা হয়।

কোয়ারেন্টাইনে কেন থাকতে হয়?
সাধারণত কোনো সুস্থ ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রবেশ করার পর থেকে আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা দেয়ার মধ্যে ১ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। তাই, এই সময়ের মধ্যে যেকোনো সময়ে তার শরীর হতে অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। সে কারণে ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহকগণকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বা নিজ গৃহে ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত

কোয়ারেন্টাইনে কাদের থাকতে হয় এবং কখন থাকতে হয়?
কেউ যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা অবলম্বন না করে ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসেন সেক্ষেত্রে সংস্পর্শে আসার দিন থেকে বা কেউ যদি কোনো সংক্রমিত দেশ হতে অন্য কোনো অসংক্রমিত দেশে প্রবেশ করেন সেক্ষেত্রে প্রবেশের দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত তার কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত।
যেসব এলাকায় ভাইরাসের সংক্রমন দ্রæত গতিতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় সেসব এলাকার অধিবাসিদের নিজকে ভাইারাসের সংক্রমন থেকে মুক্ত রাখার জন্য সংক্রমন না থামা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় নিজ গৃহে বা অন্য কোথাও সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির করণীয় –
ক্স একটি নির্দিষ্ট কক্ষের ভিতরে অবস্থান করা। সম্ভব হলে আলাদা গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহার করা।
ক্স অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কক্ষ থেকে বের না হওয়া। বের হতে হলে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা।
ক্স অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পরিচর্যকারী ব্যতীত অন্য কারো সাথে, এমন কি পরিবারের সদস্যদের সাথেও সাক্ষাত না করা।
ক্স স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বেশী বেশী করে বিশুদ্ধ পানি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
ক্স তার ব্যবহারের জিনিসপত্র, এমনকি তার বিছানাও অন্য কারো সাথে শেয়ার না করা।
ক্স অসুস্থ বোধ করলে বা জ্বর ও কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির আশপাশের লোকদের করনীয়
 অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া তার নিকট না যাওয়া। যেতে হলে সে সময় সঠিক উপায়ে মাস্ক এবং গøাভস ব্যবহার করা।
 কোনো অতিথি, এমন কি অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের সদস্যদেরও তার সাথে সাক্ষাত না করা।
 পরিবারের কোনো সুস্থ এবং তরুন সদস্য যার দীর্ঘ মেয়াদে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, এজমা, ইত্যাদি নেই, এমন কেউ পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হওয়া।
 নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক ও গøাভস ব্যবহার করে যথাযথ সতর্কতার সাথে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির পরিচর্যা করা।
 কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় মানসিক সাপোর্ট দেয়া এবং পছন্দ অনুযায়ি পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
 কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহারের জিনিসপত্র (গ্লাস,প্লেট,তোয়ালে,বিছানা চাদর ইত্যাদি) অন্য কেউ ব্যবহার না করা।

কোভিড-১৯ সম্পর্কে যেকোনো জিজ্ঞাসা বা কারও মধ্যে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ/উপসর্গ দেখা দিলে আইইডিসিআর এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন ঃ ০১৯৪৪-৩৩৩২২২, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯৩৭-১১০০১১।

নিজে সচেতন হই
অন্যকে সচেতন করি
নিরাপদ জীবন গড়ি

Courtesy- Bangladesh Police Media, Police Headquarters

কোন মন্তব্য নেই