জি নিউজ ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম, দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ-নির্বাচন কোনোটাই ফলপ্রসু হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ যাওয়ার একদিন আগে গতকাল বুধবার বিএনপি মহাসচিব এরকম সর্তক মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, সরকার একদিকে সংলাপের প্রস্তাব করছে, অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার সাজা বৃদ্ধি করেছে। এই দুইটাই সাংঘর্ষিক এবং তা কখনোই গণতান্ত্রিক কোনো আচরণের প্রতিফলন ঘটায় না এবং সংলাপের যে আন্তরিক সেই আন্তরিকতা প্রমাণ করে না। আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে এখানে কোনো সংলাপ বা কোনো নির্বাচন কখনোই ফলপ্রসূ হবে না। দেশনেত্রীর মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হবে না। জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চলমান আন্দোলন সুসংহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার দুইটি মামলার সাজা বাতিল ও তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এই এক ঘন্টার মানববন্ধন করে। তোপখানা রোড় থেকে শুরু করে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কের একদিকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্বলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমবেত হয়। পুরো মানববন্ধন সমাবেশে রূপ নেয়। বেলা ১২টার ৬ মিনিট আগেই মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমান রায় বাতিলের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও বহন করছে নেতা-কর্মীরা। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘ফরমায়েসী রায় মানি না মানব না’ ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে তারা পুরো এলাকা সরব করে রাখে। গত ৮ ফ্রেবুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজায় পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে অসুস্থ হওয়ায় তাকে রাজধানীর বিএসএমএমইউতে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের নিম্ন আদালতের সাজা হাইকোর্ট বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে। একইভাবে গত ২৯ অক্টোবর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় এই মানববন্ধনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকা মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আবুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর ঢাকার ইউনুস মৃধা, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, জিএম শামসুলে হক, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের মোরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র দলের আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।মানববন্ধনে বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফরহাদ হালিম ডোনার, আসাদুজ্জামান রিপন, নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, নাজিমউদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শামীমুর রহমান শামীম, হারুনুর রশীদ, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নুরুল ইসলাম খান, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শুরুর পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্ক ছিল মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। মানববন্ধনের শুরুতে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও সাড়ে ১১টা থেকে নেতাকর্মীরা কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত যেটি নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছেল সেটিই ঘটেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনসহ ২০/২৫ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এরা হচ্ছেন, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন, আমীর হোসেন মাস্টার, মো. রিপন, মাহবুবুর রহমান দিপু, মোস্তফা সরকারসহ ২০/২৫ জন।দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, মানববন্ধন শেষ হওয়ার পরপরই শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেনসহ ২০/২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। রমনা ও শাহবাগ থানায় তাদের রাখা হয়েছে। মানববন্ধন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা সদস্যরা আনোয়ার হোসেইনসহ কয়েকজনকে দ্রুত আটক করে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। তারা অবিলম্বে আটক নেতাকর্মীদেও মুক্তির দাবি জানান। সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ৭ দফা দাবি পুরোটাই মেনে নিতে হবে। সবার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে এবং জনগনের যে চাহিদা সেই চাহিদা পুরণ করতে হবে। ইভিএম দেয়া চলবে না। সবার আগে শর্ত হচ্ছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচনই অর্থবহ হবে না।বিচার ব্যবস্থার সরকারের নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বর্তমানে সরকারের করায়ত্ব হয়ে গেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সাহেব তার বইতে বলে গেছে যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে সরকারের করায়ত্ব। এখানে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। সেজন্যই তাকে আজকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে। একাত্তর সালে এই গণতন্ত্রের জন্য মানুষ যুদ্ধ করেছিলো। আমরা বলছি অনুগ্রহ করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। নির্বাচন দিচ্ছেন কিন্তু সেই নির্বাচনে একতরফাভাবে হেলিকপ্টারে করে জনগনের কাছে যাচ্ছে। আর আমাদের নেত্রী কারাগারে, আমরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমাদের কর্মীরা কোথাও দাঁড়াতে পারেনা। এই অবস্থায় কখনোই একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বন্ধুরা আমরা মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি। আসুন আমরা এই সংগ্রামকে আরও সুসংগঠিত করি। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করি। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আপনারা এই মানববন্ধনের জন্য এক ঘণ্টার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করবো, সবসময় গণতান্ত্রিক কার্যক্রম করার অধিকার যেন আমরা পাই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এমনকি তিনি জামিন পেলেও তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নজিরবিহীন ও অস্বাভাবিকভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক। সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দেশনেত্রী ও বিএনপি বয়কট করেছিলো, তার জন্য নির্বাচন হয় নাই। আজকেও বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া ও বিরোধী দল ছাড়া আগামী নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হবে না, এদেশের মানুষ হতে দেবে না।তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রীকে নিয়ে আগামী নির্বাচনে যেতে চাই। তাই সরকারের কাছে এই মানববন্ধন থেকে আহবান জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন, আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নিন। তা না হলে দেশে যে অরাজগতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে তা দায় সরকারকেই নিতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এতোদিন মন্ত্রীরা বলে এসেছে যে, তারা সংলাপে বিশ্বাস করে না। এখন তারা বুঝতে পেরেছেন, সারা জাতির মনে কথা বুঝতে পেরেছেন সেজন্য তারা এই সংলাপে রাজি হয়েছে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা একটা কথা বলব, সংলাপ, নির্বাচন ও আন্দোলন এক সাথে চলবে। আমরা এটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করব। যখনই যেইভাবে আমাদের সাফল্য যতদিন না আসবে, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।