কে এম আজগর হোসেন ছাব্বির: দাকোপ, খুলনা থেকেঃ সুন্দরবনের কোলঘেষা দাকোপ এবং খুলনার শহর লাগোয়া বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ নির্বাচনী এলাকা। আগামি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন দলের প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা দিনরাত মাঠে গনসংযোগ সভা সমাবেশ অব্যহত রেখেছেন। নির্বাচনের দিন যতই কাছে আসছে ভোটের আমেজে বাড়ছে উত্তাপ উত্তেজনা। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী এবং স্ব স্ব দলের অনুসারীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
উন্নয়নের দিক থেকে অবহেলিত এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। একসময় আসনটি সংখ্যালঘু হিন্দু ভোটার অধ্যুষিত হিসেবে বিবেচীত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এ আসনটি নৌকার ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৮৮ সালে জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ¦ শেখ আবুল হোসেন, ১৯৯৬ সালে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস, একই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারীর বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শেখ নুরুল ইসলাম এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচীত হয়েছিলেন। এ ছাড়া সকল নির্বাচনে এখানে নৌকার জয়জয়কর। কিন্তু দেশের অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা উন্নয়ন বিবেচনায় দাকোপ বটিয়াঘাটা অনেকটা পিছিয়ে। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদী ভাঙন ও সুপেয় পানি সংকট নাগরিকদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নবঞ্চিত এ আসনে সাম্ভব্য প্রার্থীরা এ সকল সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ১৬ টি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দু’টি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ জন। যার মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭০ জন। এ আসনে মহাজাটে বিভক্তি আর বিএনপি ছাড়া ২০ দল বা ঐক্যফন্ট শরীক কোন দলের তেমন কোন অবস্থান এখানে নেই। বর্তমানে প্রতিদ্বন্দিতায় আছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস নৌকা, ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ আমির এজাজ খান ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় লাঙ্গল, ইসলামি আন্দোলনের আলহাজ¦ মাওলানা আবু সাইদ হাতপাখা এবং বাম গনতান্ত্রিক জোট মনোনীত সিপিবির অশোক কুমার সরকার কাস্তে প্রতিক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন। ৫ প্রার্থীর মধ্যে মুল প্রতিদ্বন্দিতায় থাকা নৌকা ধানের শীষের সাথে সমানতালে গনসংযোগে আছেন লাঙ্গল ও হাতপাখা। সরেজমিন নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অতীতের যে কোন নির্বাচন অপেক্ষা এবারের নির্বাচনটি হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ন। নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে লড়াইয়ে যে কেউ শেষ হাসি হাসতে পারেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দাকোপ বটিয়াঘাটা বরাবরই রাজনৈতিক সংঘাত সহিংসতামুক্ত এলাকা হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে তেমন শান্তিপূর্ন পরিবশে ও সহবস্থান বজায় আছে। তবে বিরোধী শিবিরের কর্মী সমর্থকরা প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছে। সার্বিক বিবেচনায় মাঠে এখন পর্যন্ত নৌকার সমর্থকরা বেশ উজ্জীবিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবারের নির্বাচনে জয় পরাজয়ে সব থেকে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে সাবেক এমপি আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলকরা ননী গোপাল মন্ডলের সমর্থক ভোট ব্যাংক। যদিও ননী গোপাল মন্ডল বর্তমানে নৌকাকে বিজয়ী করতে নৌকার প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের সাথে এক মঞ্চে গনসংযোগে আছেন। তবুও তার বিক্ষুদ্ধ সমর্থকদের ভোট শেষ মুহুর্তে ঠিক কোন দিকে যাবে তার উপর জয় পরাজয় নির্ভর করছে। তবে ওই ভোটের একটি অংশ ধানের শীষের দিকে ঝুকে পড়েছে বলে জনশ্রুতি শোনা যাচ্ছে। যদি ননী সমর্থক ভোট স্বভাবগতভাবে নৌকার বাক্সে পড়ে তাহলে এবার ও নৌকার বিপুল বিজয় নিশ্চিত। আর ভিন্ন কিছু হলে দীর্ঘ ধারাবাহিক ফলাফলের ভিন্ন ফলাফল এ আসনে এবার দেখা যেতে পারে এমন মন্তব্য সচেতন ভোটারদের। অপরদিকে এ আসনে চরমোনাই পীরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী থাকায় হাতপাখা আশানরুপ ভোট পাবে বলে অনেকের মন্তব্য। এ ছাড়া জাপার হেভিওয়েটনেতা লাঙ্গলপ্রেমী সমর্থকদের সাথে নিয়ে ব্যাপক গনসংযোগের মাধ্যমে সম্মান জনক ভোট পেতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সিপিবি প্রার্থী নিজেদের কর্মী সমর্থক নিয়ে গনসংযোগ করছেন।
এবারের নির্বাচনে কেমন প্রার্থীকে বেছে নিবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে চালনা এম এম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার থান্দার বলেন, সৎ যোগ্য জনদরদী উন্নয়নের মুল ¯্রােতধারার সাথে নিজ এলাকাকে সংযুক্ত করতে পারবে এমন প্রার্থীই তিনি সমর্থন করেন। ঢাকা সরকারী বাংলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র কিশোর বিশ্বাস বলেন, নির্লোভ জনবান্ধব ত্যাগী অসাম্প্রদায়িক আধুনিক উন্নত এলাকা গড়ার যোগ্যতা সম্পূর্ন প্রার্থীকে ভোট দেবো। দাকোপবাসীর প্রত্যাশা অতীতের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে স্বচ্ছ নির্বাচনে এবারও দাকোপ বটিয়াঘাটায় জনতার সুচিন্তিত মতামতে সৎ যোগ্য প্রার্থী নির্বাচীত হয়ে এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখবেন।
