গাজীপুরে”পরিবর্তন মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রে”প্রোগ্রামার দিয়ে চলছে চিকিৎসা,ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরাময় প্রত্যাশীরা

0
47

জি নিউজ ডেস্কঃ সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ক্ষতির প্রভাব না বুঝেই ইয়াবা সেবনে জরিয়ে পরেন গাজীপুর সদরের সাহাপাড়াস্থ মৃত ইন্দ্রজিৎ সাহার ছেলে শুভ সাহা(১৯)। প্রতিদিন ৫-৬ টি ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করতেন। এক পর্যায় শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় মারাত্মক হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পরিবারের সহযোগীতায় নির্ধারিত ফি বাবদ ৪৬ দিন আগে ভর্তি হন শহরের নাওভাঙ্গাস্থ ‘পরিবর্তন’ মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। কেন্দ্রে তিন মাসের প্যাকেজে দেড়মাসে ডাক্তার বা মনোরোগ চিকিৎসকের কোন সেবা মেলেনি তার। ইয়াবা সেবন কমায় মানসিক স্বস্তি তৈরি হলেও শারীরিক উন্নতি আশানুরুপ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ তার। সেবায় ঠকেছেন বুঝতে পেরে শুভ বলেন, এরকম সেবা পাওয়ার কথা জানতামনা তবে ডাক্তার বা মনোরোগ চিকিৎসকের সেবা পেলে আরও ভালো হত। প্রায় শুভর মতই অবস্থা ঐ কেন্দ্রে চিকিৎসারত আরও নিরাময় প্রার্থী পাঁচ মাদকাশক্তির।

গবেষণা বা চিকিৎসকরা বলছেন ‘মাদক’ বিশেষ করে ইয়াবা সেবনে কিডনি, লিভার ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাময়িক যৌন উত্তেজনা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়৷ এছাড়া ইয়াবার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এত বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্বে ডাক্তার না হয়েও সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিভাবে আপনারা মাদকাশক্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ‘পরিবর্তন’ মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সত্বাধিকারী জহিরুল ইসলামের পক্ষে, কেন্দ্রের প্রোগ্রামার(চিকিৎসা প্রদানকারী) মেহেদী হাসান বাবু ও সহকারী প্রোগ্রামার সোহান উদ্দিন বলেন, আমরা এক সময় মাদকাশক্ত ছিলাম, তখনকার সময়ে আমরা যেভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলাম ঠিক সেভাবেই আমরা চিকিৎসা প্রদান করে থাকি। অভিযোগ করে বাবু ও সোহান বলেন, গাজীপুর জেলায় কোন কেন্দ্র সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা সন্দেহ আছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, গাজীপুরের সহকারী পরিচালক রিনা বেগম বলেন, সরকারী বিধান অনুযায়ী এসকল কেন্দ্রে নিরাময় প্রার্থীদের ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করার কথা। যদি তারা এটা না করে, তাহলে নিশ্চই ভোক্তারা এখানে প্রতারিত হচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক পাশ জহিরুল ইসলাম নিজ দায়িত্বে সাত বছর যাবৎ দশ বেডের ‘পরিবর্তন মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র’ পরিচালনা করলেও নানা অনিয়ম ও অনুপযোগীতার কারণে এখনও পাননি কেন্দ্র পরিচালনার লাইসেন্স।

ডাক্তার(সার্বক্ষণিক), মনোচিকিৎসক(খন্ডকালীন), নার্স/বয় এবং কোন ধরনের প্রশিক্ষন ব্যতীত প্রোগ্রামার বা স্টাফ দ্বারা কিভাবে এটা চলছে এমন প্রশ্নের কোন সঠিক জবাব না দিয়ে জহিরুল ইসলাম তার প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রোগ্রামার সোহান উদ্দিনের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্র থেকে সটকে পরেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, পরিবর্তন মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মালিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও কেন্দ্র পরিচালনার বিধিমোতাবেক যেসকল উপযোগীতা থাকার কথা তা না থাকায় আমরা তাকে লাইসেন্স না দেয়ার জন্য হেড অফিসে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। খুব শীঘ্রই এই কেন্দ্রের ব্যপারে হেড অফিস থেকে নির্দেশনা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিব।

এ ব্যাপারে কথা বলতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) জনাব এস, এম, জাকির হোসেনের মুঠো ফোনে চেস্টা করে সুইচ অফ পাওয়া গেছে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন