জি নিউজ ডেস্কঃ গাজীপুর গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ও আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কাপাসিয়া উপজেলার ৩ মেম্বারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দরখাস্ত দাখিল হয়েছে। ওই তিন মেম্বার হলেন- উপজেলার বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার কুশদী গ্রামের সাহিদ মাস্টারের ছেলে এনামুল হক রিপন, সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার বারিষাব বাজার সংলগ্ন আক্তার উদ্দিন পালোয়ানের দ্বিতীয় স্ত্রী মোসাঃ হাসনা হেনা ও ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার চরদুর্লভখাঁ গ্রামের আতর বেপারীর ছেলে মোঃ সুমন মিয়া বেপারী। গত বুধবার (২০ জুন) আদালতে দরখাস্তটি দাখিল হয়। দরখাস্তে বলা হয়, গত বছর অক্টোবরের ২ তারিখ সকালে খালি বাড়িতে একা পেয়ে উপজেলার কুশদী গ্রামের হতদরিদ্র বাবুল মিয়ার ১৮ বছর বয়সী মেয়েকে তার ৪ প্রতিবেশী কাজল, বাদল, খালেক ও নাহিদ নির্যাতন করে। এ ঘটনায় ভিকটিম সরকারী হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে থানার এস আই শাজাহান ভিকটিমের কাছে এফআইআর করে দেয়ার নামে ২০ হাজার টাকা দাবী করেন। এর আগে এস আই শাজাহান স্পটে গিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে তাকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা লেনদেনের কয়েক দিন পর এস আই শাজাহান ভিকটিমকে থানায় ডেকে পাঠান এবং অজ্ঞাত কারণে তাকে ওই টাকা ফেরৎ দিয়ে দেন। এ সময় তাকে আদালতের আশ্রয় লওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় ভিকটিম গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেন কাপাসিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এটিএম তৌহিদুজ্জামান। প্রতিবেদনে সমাজসেবা অফিসার স্ব-বিরোধী বক্তব্য পেশ করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সাতজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু স্থানীয় তিন মেম্বার- এনামুল হক রিপন, মোসাঃ হাসনা হেনা ও মোঃ সুমন মিয়া বেপারীর লিখিত বয়ানে ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ওই তিন মেম্বার তাদের বয়ানে আদালতকে বলে মামলাটি খারিজ করে দিতে, যা বিচারিক কার্যধারায় হস্তক্ষেপ এবং আদালত অবমাননার শামীল। তারা ভিকটিমের ন্যায় বিচার বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে বিপক্ষের লোকের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে এ কাজটি করেছেন বলে দরখাস্তে বলা হয়। গত ২০ জুন বিষয়টি আদালতকে জানালে বিচারক সমাজসেবা অফিসার প্রদত্ত প্রতিবেদন বাতিল করে দেন এবং মেম্বারদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সহ পুরো ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টের অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, আসামী পক্ষের লোকের কথায় কাপাসিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আদালতকে সঠিক প্রতিবেদন দেননি। আদালত বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। প্রতিবেদনটি রহিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিষয়টি নজরদারি করছি। বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তার বিরুদ্ধেও আইনের প্রয়োগ হতে পারে। উল্লেখ্য, সুমন মেম্বারের বিরুদ্ধে গত বছর গরু চুরির অভিযোগ উঠে। সে ঘটনায় আদালতে মামলা হয়। আর সম্প্রতি হাসনা হেনার বিরুদ্ধে তার সৎ মেয়ে শান্তাকে নির্যাতনের অভিযোগে তদন্ত চলছে। তাদের চেয়ারম্যান এস এম আতাউজ্জামান বাবলু মেম্বারদের অপকর্ম ঢাকতে সিদ্ধহস্ত বলে এলাকাবাসী জানান।