গাজীপুরে উদ্বোধন হল স্মারক ভাস্কর্য ‘অনুপ্রেরণা ১৯’

0
90

জি নিউজ ডেস্কঃ গাজীপুরের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য গাজীপুর সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্মারক ভাস্কর্য ‘অনুপ্রেরণা ১৯’। শনিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে এ ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ উপলক্ষে গাজীপুর সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের সময় দ্বিতীয় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর এ কে এম শফিউল্লাহ্, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাত্তার মিয়া, শেখ আবুল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া।গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় তিন মাস। সার্কিট হাউজের সবুজ মাঠের মাঝখানে সাড়ে তিন ফুট উঁচু বেদিতে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি। তরুণ ভাস্কর মুহম্মদ আরিফুজ্জামান নূরনবী মনের মাধুরী মিশিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন। এটি তার প্রথম ভাস্কর্য। উল্লেখ্য, ১৯মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরস্থ ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ( যার সদর দপ্তর ছিল ভাওয়াল রাজবাড়ী) নিরস্ত্র করার জন্য পৌছে যায়। মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানায় পৌছলে ১ ঘন্টার মধ্যে মাঠেই হাজার শ্রমিক-জনতা লাঠিসোটা , দা, দোনালা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়। জয়দেবপুর রেলগেইটসহ আরও কয়েকটি ব্যারিকেড দেয়া হয় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে। ঐ সময় ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর কে, এম, শফিউল্লাহ,(পরবতীতে সেনাপ্রধান)। জনতা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিল তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। রেশনের সে গাড়িকে জনতা আটকে দেয়। সে কনভয়ে থাকা ৫জন সৈন্যর চাইনীজ রাইফেল তাদের নিকট থেকে কেড়ে নেয়া হয়। ব্যারিকেড সরানোর জন্য ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আদেশ দেয় এবং কৌশল হিসেবে বাঙালী সৈন্যদের সামনে দিয়ে পেছনে পাঞ্জাবী সৈন্যদের অবস্থান নিয়ে মেজর শফিউল্লাহকে জনতার উপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জনতার উপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে সামনে আসতে থাকলে জনতা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চাইনিজ রাইফেলে দিয়ে সেনাবাহিনীর উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ দিনে উত্তালমুখর বাংলাদেশে শ্লোগান উঠেছিল “ জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর”। এ প্রতিরোধ যুদ্ধে জনাব হুরমত আলী, নিয়ামত আলী ও মনুখলিফা শহীদ হন। এছাড়াও গুলিতে আহত হন কানু মিয়া, ডাঃ ইউসুফ, সন্তোষ, শাহজাহানসহ আরো অনেকে। আহতের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কানু মিয়া মারা যান। এটি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ১ম সশস্ত্র প্রতিরোধ।

কোন মন্তব্য নেই