গাজীপুরে ডিবি পরিচয়ে-আসামি ধরার নামে ডাকাতি, পুলিশের হাতে আটক-৭
মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, গাজীপুর।
গাজীপুরে ভূয়া গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সেজে আসামী ধরার নাম করে ব্যাটারীর গুদামে ঢুকে লোকজনকে জিম্মি করে নগদ টাকা ও গুদামের মালামাল লুট করার অভিযোগে আন্ত:জেলা ডাকাত চক্রের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত ১০৩টি অটো রিক্সার ব্যাটারী এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও ৬টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারা হলেন, মো: আরিফুল ইসলাম সোহানুর ওরফে সোহান (৩০), মো: মমিনুল ইসলাম ওরফে মমিন ওরফে রুপচান (৩৫), মোঃ বিল্লাল @ ওরফে বেলাল ওরফে নজরুল (৪০), মো: শফিকুল ইসলাম (৩২), মো: রুবেল (২৯), মো: জাকির হোসেন (৪২), মো: মিজানুর রহমান (৫৭)।
তাদের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও ঢাকায় বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে।
শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার মো: ইব্রাহিম খান।
তিনি আরো জানান, গত ৬ এপ্রিল গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দেশীপাড়া এলাকায় জ্যাক ব্যাটারীর গোডাউনে একটি ডাকাতি সংঘটিত হয়। গোডাউনের কর্মচারীরা ইফতারী গ্রহণ শেষে গোডাউনের ভিতরে বিশ্রাম নেওয়ার সময় অজ্ঞাতানামা ৮/১০ জন লোক গোডাউনের গিয়ে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। এসময় তারা জানায়, খুনের আসামী ধরতে তারা এখানে এসেছে। ট্র্যাকিং করে তারা জানতে পেরেছে যে, খুনের আসামী এখানেই অবস্থান করছে। খুনের আসামী কে, তা সনাক্ত করার জন্য ডাকাতরা গোডাউনে কর্মরত প্রত্যেক কর্মচারী জিগ্যাসাবাদ করবে বলে সকলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় এবং কৌশলে সকল কর্মচারীকে গোডাউনের একটি কক্ষে নিয়ে পুরাতন কাপড় ও রশি দিয়ে হাত- পা বেধে ফেলে। এসময় সকলের মুখ স্কচটেপ দিয়ে বেধে প্রত্যেককে বেধড়ক কিল, ঘুষি ও লাথি মারে। তখন কর্মচারীরা বুঝতে পারে যে, তারা ডাকাতের কবলে পড়েছে।
তিনি আরো জানান, পরে ডাকাতরা গোডাউনের ভিতরে একটি অজ্ঞাত নম্বরের ট্রাক নিয়ে অটোরিক্সা ও আইপিএসের পুরাতন পরিবর্তনযোগ্য ব্যাটারী ট্রাকে তুলতে করতে থাকে। এ সময় এক ক্রেতা ব্যাটারী ক্রয় করতে সেই গোডাউনে গেলে ডাকাতরা তাকেও হাত ও মুখ বেঁধে এক কোণায় ফেলে রাখে এবং তার সাথে থাকা ব্যাটারী ক্রয়ের ৪২ হাজার টাকা ও একটি স্মার্ট ফোন নিয়ে নেয়। পরে ডাকাতরা গোডাউনে থাকা ১৩৯টি পুরাতন পরিবর্তনযোগ্য ব্যাটারী, নগদ ৩ লক্ষ টাকা, কর্মচারীদের ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন, সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর ১টিসহ আনুমানিক ১৮ লক্ষ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, ঘটনার পর-পরই খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ তথ্য সংগ্রহ এবং ডাকাতদের সনাক্ত করার কাজ শুরু করে। এ ঘটনায় ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ০৮/১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। সদর থানার একাধিক টিম নিরলসভাবে তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণ করে ডাকাতদের সনাক্ত করে ১৪ এপ্রিল বিকালে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকা হতে সন্দিগ্ধ আসামী মিজানুরকে গ্রেফতার করে।
ধৃত আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সেদিনও ইফতারের পর-পরই সদর থানাধীন রাজেন্দ্রপুর এলাকায় তাদের একইভাবে ডাকাতি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন ধৃত মিজানুরের মাধ্যমে কৌশল অবলম্বন করে ইফতারের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ মুল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় অপর ৭/৮ জন জঙ্গলের ভিতরে পালিয়ে যায়।
পরে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেহ ও ট্রাক তল্লাশী করে বিভিন্ন মালামাল পাওয়া যায়। পরে আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায় তারা লুণ্ঠিত ব্যাটারীগুলো রাজধানীর বংশাল থানাধীন বাবু বাজার এলাকায় এক দোকানে বিক্রয় করেছে। ধৃত আসামী সোহানকে নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে রুবেল ও জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেখানোমতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কান্দুলী এলাকা হতে সর্বশেষ ক্রেতা ও গোডাউনের মালিক পলাতক আসামী সুমনের ব্যাটারী ভাঙ্গার কারখানা হতে লুষ্ঠিত ব্যাটারীর মধ্যে ১০৩টি ব্যাটারী গত শুক্রবার দিাবগত রাতে জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো জানান, আসামীদের মধ্যে আরিফুলের বিরুদ্ধে ভুয়া ডিবি/ডাকাতি/চুরি/অস্ত্রসহ মোট ১২টি মামলা, মমিনুল ইসলাম ওরফে রুপচানের বিরুদ্ধে ভুয়া ডিবি/ডাকাতি/চুরি সংক্রান্তে মোট ০৮টি মামলা, বিল্লালের বিরুদ্ধে ৪টি, শফিকুলের বিরুদ্ধে ৪টি ও মিজানুরের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা আছে।
আসামীসের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১টি ট্রাক, ১টি ডিবির জ্যাকেট, ১ টি খেলনা পিস্তুল, ১ সেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পোশাক, ১ জোড়া পুলিশের পিটি সু, ১টি পুলিশের টুপি, ১টি পুলিশের বেল্ট, ১ টি চাপাতি মোট ১২ (বার) গ্রাম হেরোইন, ১টি লেজার লাইট, ১টি ষ্টার স্ক্রু ড্রাইভার, ১টি হাতলযুক্ত হাতুড়ি, ১টি প্লায়ার্স, ৪ টি ধারালো ছুরি, ১টি কালো রংয়ের টর্চ লাইট, ৬টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জিএমপিরিউপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো: সামসুর রহমান, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদসহ অন্যরা।