ঘরবন্দী জীবন,লিখেছেন নাবিলা তাহসিন

0
37

ঘরবন্দী জীবন,লিখেছেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী নাবিলা তাহসিন।

এ কেমন জীবন যেখানে আমার দেশ আমার গ্রাম আমার এলাকা নয় পুরো বিশ্বই আজ অন্ধকার জীবনের গন্ডিতে।

একসময় মানুষ কত আনন্দময় জীবন-যাপন করতো।
একসাথে মিলেমিশে থাকত।
একজন আরেকজনের বাড়িতে যেতে।
কিন্তু এখন একজন আরেকজনের বাড়িতে এলেই ভয় করে!
আর মানুষ আরেকজনের বাসায় যাবেই বা কিভাবে?
এখন পুরো বিশ্বেই তো লকডাউন চলছে।
কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে যারা লকডাউন জানাসত্ত্বেও বাড়ির বাহিরে বের হবেই।
একসময় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব বৈশাখী মেলা তে কত আনন্দ হতো।
কিন্তু এবারের বৈশাখীতে লোকজন শূন্য উৎসববিহীন রাস্তা,ঘাট, মাঠ।
আর মুসলমানদের ঈদের উৎসবটাও যেন উৎসব বলে মনে হয় না।
আগে ঈদের সময় দোকানে মানুষের ভিড়ে পরিপূর্ণ ছিল।
আর আজ সেখানে দোকানগুলোতে দু-একজন বেশি হলে পাঁচ-ছ’জনের বেশি মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
কিন্তু কোন কোন দোকানে লোকজনে পরিপূর্ণ থাকতে দেখা যায়।
আর হ্যাঁ যেই ঈদে মানুষ কোলাকুলি করতো, ঈদের মাঠে নামাজ পড়তো, মেলায় যেত বা ভ্রমণ আনন্দে আনন্দিত হত।
আজ এখানে কিছু করতে পারছে না।
অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবগুলো তে তো একই নিয়ম। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, মসজিদ-মন্দির সহ সবই আজ লকডাউনের জন্য বন্ধ।
অবশ্য এখন কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাও আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
রাস্তাঘাটেও নেই সেরকম যানবাহনের ভিড়। রাস্তাঘাটে খুব অল্প সংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে।
যেমন: রিক্সা, অটোরিকশা, ভ্যান ইত্যাদি। এগুলো হলো রিক্সা-ভ্যান চালকেরা যারা দিন আনে দিন খায়।
এরা রাস্তায় না নামলেও তো হয় না। না নেমেও বা কি করবে?
টাকা না আনলেও তো সংসার চলবেনা না?
এগুলোই তো তাদের টাকা আয় করার মাধ্যম।
এছাড়াও রয়েছে অফিসে কাজ করা স্টাফরা,
দিনমজুরেরা তাদেরও তো একই অবস্থা।
আবার গরিব-দুঃখীদের কথা চিন্তা করে সকল দেশের প্রধানমন্ত্রীরা তাদেরকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি খাবারও প্রদান করছে।
এত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও অনুভব করা যায় একটু আনন্দের ছোঁয়া। এখন চারপাশ কোলাহলমুক্ত।
কলকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, ইট ভাটার ধোঁয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক শব্দ ও ধোঁয়াও মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে না।
আজ গাছ, গাছের পাতা ,পাখি,নদী,সমুদ্র,পাহাড়-পর্বত দেখতে কত সুন্দর,কত পরিষ্কার।
আকাশ আজকে একটু শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছে।
সূর্যও আর দেয় না তার দূষিত কিরণ।
আচ্ছা আজকে বিশ্ব, বিশ্বের মানুষগুলো এমন কেন? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে, আর সেটা হলো এক অভাবনীয় মহামারি কোরোনা ভাইরাস।
আজকেই নামটা শুনলেই যেন কেমন ভয় হয়।
শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত আজ এটি একটি পরিচিত নাম।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, মৃত্যুর মিছিলে যেন পুরো বিশ্বই আজ থমকে গেছে।
এই ভাইরাসের সাথে লড়ছে বিভিন্ন মানুষ। তারা হল ডাক্তার ,নার্স,পুলিশ,আর্মি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী আরও অনেক মানুষ।
তাদের প্রতি রইল আমার অনেক সম্মান, শ্রদ্ধা।
এখন মানুষের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই নেই। মনে হয় এই না সব শেষ হয়ে গেল!
হয়তো বা কোন দিন আবার বিশ্ব, বিশ্বের মানুষ গুলো আবার হাসবে, দূর হবে ভয়, আতঙ্ক।
আবারও হয়তো বা মানুষ একসাথে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠবে। হয়তো বা শেষ হবে এই মৃত্যুর মিছিল।
এই আনন্দানুষ্ঠান ফিরে পেতে আসুন আমরা ভয় না পেয়ে সচেতন হই।
যেহেতু আমি মুসলিম,তাই ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে বলতে পারি মানুষের জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাই ভয় না পেয়ে আমরা সচেতন হই।
আর এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আসুন আমরা প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হয়ে, হ্যান্ডশেক-কোলাকুলি না করে, দূরত্ব বজায় রেখে, হাত জীবাণুমুক্ত রেখে, ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে,নিজেকে জীবাণুমুক্ত রেখে এই মহামারি কোরোনা ভাইরাস কে বিদায় জানাই।

লিখেছেন … নাবিলা তাহসিন
পিতা: মোঃবেলায়েত হোসেন
গ্রাম: বানিয়ারচালা, মেম্বার বাড়ি গাজীপুর সদর গাজীপুর। রাজেন্দ্রপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এর পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন