ঘুরে আসতে পারেন নাটোরের উত্তরা গনভবন তথা দিঘাপতিয়া রাজাবাড়ী থেকে

0
131

জি নিউজ ডেস্ক: নাটোরের উত্তরা গনভবন ১৭শ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ১৯শ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্তমান রাজশাহী শাসন করেছিল দিঘাপাতিয়া রাজ পরিবারের ৭ টি প্রজন্ম। এই রাজ পরিবারটি বসবাস করত উত্তরা গনভবনে যা দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি নামেও পরিচিত ছিল। এই বংশের প্রথম রাজা ছিলেন দয়ারাম রায় যিনি অল্প বয়সেই নাটোরের রাজ পরিবারের প্রথম রাজা রামজীবন রায়ের দেওয়ান নিযুক্ত হন। ১৭১৬ সালে বাংলার নবাবদের সহায়তা করতে রাজা দয়ারাম নেতৃত্ব দেন রাজা রাম জীবনের বাহিনীকে এবং পার্শ্ববর্তী ভূষনা রাজ্যের বিদ্রোহী রাজা শিতারাম রায়কে (যিনি জমিদার ছিলেন এবং পরবর্তীতে রাজা হন) উৎখাত করেন। রাজা শিতারাম রায়ের রাজধানী মুহাম্মাদপুরের পতনের ফলে রাজা দয়ারাম দিঘাপাতিয়া রাজবংশের গোড়াপত্তন করতে সমর্থ হন। বিশ্বস্ততা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রাজশাহী ও যশোরে দান হিসেবে অনেক জমি গ্রহন করেন এবং পরবর্তীতে বগুড়া ও ময়মনসিংহে জমিদার বাড়ি অধিগ্রহন করেন।

রাজা দয়ারামের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে তৎকালীন বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খান তাঁকে সম্মানসূচক ‘রায় রায়হান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। লর্ড কর্নওয়ালিস যখন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন, নবাব মুর্শিদ কুলি খানের সময়কার অনেক জমিদাররা জমির খাজনা দিতে ব্যর্থ হন এবং খেলাপি হয়ে যান এবং তাঁদের এলাকা বিক্রি করে দেওয়া হয় ধনী ব্যাক্তিদের কাছে। দিঘাপাতিয়ার রাজা ছিলেন বিলুপ্ত প্রায় জগিরদারদের একজন। তাঁরা পশ্চিমা জীবন যাত্রা অনুসরণ করতেন যেমন ইউরোপিয়ান পোশাক, মদ, ঘোড়দৌড় ইত্যাদি। পশিমা প্রভাব শুধু যে তাঁদের ভবনের স্থাপত্তেই প্রতিফলিত হয়েছে তাই নয় বরং তা দেখা যেতো তাঁদের আসবাব এবং অন্দরমহলের সাজে। অবশ্য, মুঘল সাম্রাজ্যকালের শেষ প্রান্তে ও কোন কোন অনুষ্ঠানে তাঁরা মুঘলদের অনুকরন করত যা তাদের পোশাক, পাগড়ি, তলোয়ার ও তলোয়ার রাখার খাপ থেকে প্রতিফলিত হত। দিঘাপাতিয়ার জমিদারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রান নাথ রায় এবং প্রমোদ নাথ রায়।

রাজশাহী এবং উত্তরবঙ্গের শিক্ষা, স্থাপনা এবং সংস্কৃতির উন্নয়নে এই রাজ পরিবারের অবদান অনেক যেমন এই পরিবারের রাজারা নির্মাণ করেন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। জনপ্রিয়তা এবং উদারতার জন্য তারা বিশেষভাবে বিখ্যাত ছিল। এই পরিবারের শাসকরা বিভিন্ন সম্মানসূচক খেতাব ও উপাধি লাভ করে যেমন মুঘলদের কাছ থেকে রাজা, মহারাজা, রাজ বাহাদুর উপাধি এবং ইংরজেদের কাছ থেকে নাইটহুড খেতাব।

মহারাজার রাজবাড়ি নামে পরিচিত এই ভবনটি দিঘাপতিয়ার রাজা নির্মাণ করলেও উত্তর বঙ্গের রাজ্য প্রধানদের বাসা হিসেবে এটি ব্যাবহার হয়েছে। ইংরেজ এবং পূর্ব পাকিস্তান আমলে অনেক সরকারি বৈঠক এখানে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়ের মার্বেলের তৈরি ভাস্কর্য আছে।

কিভাবে যাবেনঃ উত্তরা গনভবন নাটোর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাই আপনি সেখানে রিকশা অথবা সিএনজি অটো রিকশায় যেতে পারেন।নাটোর সদর উপজেলা নাটোর জেলা সদরে রেল ও সড়ক যোগাযোগ আছে। দেশের সব অঞ্চলের সাথে নাটোর সদর উপজেলা আসা যায়। ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা বিভাগ থেকে আপনি রেল বা সড়ক যে কোন যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে এখানে আসতে পারবেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে চড়ে নাটোর সদরে আসার জন্য আপনি কমলাপুর বা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে রংপুর গামী ”রংপুর এক্সপ্রেস অথবা দিনাজপুর গামী ”দ্রতযান” অথবা লালমনিরহাট গামী ”লালমনি এক্সপ্রেস এর টিকিট কেটে ট্রেনে করে নাটোর রেল স্টেশনে নামতে পারেন। আর ঢাকা থেকে বাস যোগে নাটোর আসার জন্য আপনি কলাবাগান, কল্যাণপুর, শ্যামলী বা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ অথবা নাটোর গামী হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস এর যে কোন বাসে চড়ে আসতে পারেন।

রাস্তা যোগাযোগঃ
রেল যোগাযোগঃ
১। শ্যামলী পরিবহন
১২, দক্ষিণ কল্যানপুর, মিরপুর রোড, ঢাকা।

২। হানিফ এন্টারপ্রাইজ
ঢাকা অফিসঃ পান্থপথ।

৩। গ্রিন লাইন পরিবহন
কল্যানপুর ব্রাঞ্চঃ ৩/২, দক্ষিণ কল্যানপুর, ঢাকা।

৪। মর্ডান এন্টারপ্রাইজ (এসি/নন-এসি)
প্রধান অফিসঃ লেক সার্কাস, পান্থপথ, কলাবাগান, ঢাকা।
ব্রাঞ্চ অফিসঃ গাবতলি বুকিং অফিস, ইন্টারসিটি বাস টার্মিনাল (কাউন্টার নং ১৯),
মিরপুর, ঢাকা

রাতে থাকার খোঁজ খবরঃ

১। হোটেল ভিআইপি
বড় হরিশপুর,নাটোর।

২।হোটেল মিল্লাত
মাদ্রাসা মোড়, নাটোর সদর

৩। হোটেল প্রিন্স
রেলওয়ে স্টেশন বাজার নাটোর।

৪। হোটেল রাজ
মাদ্রাসা মোড়,নাটোর সদর।

৫। হোটেল রুকসানা
ঠিকানাঃ কানাইখালী, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড, নাটোর সদর।

৬। নাটোর বোর্ডিং
ঠিকানাঃ নিচাবাজার, হাসপাতাল রোড, নাটোর সদর।

৭। নাটোড় সুগার মিলস গেস্ট হাউস ঠিকানাঃ নাটোর সুগার মিল এলাকা, নাটোর।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন