জি নিউজ পর্যটন ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলা হাওর এলাকার জন্য বিখ্যাত। এর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এই হাওর থেকেই আসে। শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয় এই হাওর এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও অনেক জনপ্রিয়। হাওর-বাওর , নদী , সমতলভূমি ও ভাটির বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির একটি বিস্তীর্ণ জেলা কিশোরগঞ্জের রূপ সুধা গ্রহণ করতে সারাদেশ থেকেই এখানে পর্যটকেরা আসে। নিকলি,অষ্টগ্রাম, ইটনা হাওরের হাওরের পাশাপাশি এখানকার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন হাওর হচ্ছে মিঠাইন হাওর। যা মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত।
মিঠাইন এর উত্তরে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ্টগ্রাম, পশ্চিমে করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলা।
যতদূর চোখ যাবে এই হাওরের কোলে কেবল পানি আর পানিই চোখে পড়বে। উপরে নীল আকাশ জুড়ে সাদা কালো মেঘের আনাগোনা আর নিচে অবিরাম জলে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে ভেসে উঠছে। এমন মনভোলানো দৃশ্য আর দিগন্তের তটরেখায় ছোট ছোট গ্রাম এখানে দেখতে পাবেন। মাথার উপর দিয়ে কখনো চলে যাচ্ছে সাদা বকের দল, আর এখানে সেখানে ভেসে থাকা জলজ গাছ। জেলেদের জীবন আর জলের কোলে খেলা করা রোদ আর দিগন্তের অথৈ জলরাশির দৃশ্য মন ভরিয়ে দেবে আনন্দে।
নিকলী হাওরঃ
নিকলীকে ঘিরেও পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিশোরগঞ্জে ১২২টিহাওর রয়েছে।নিকলীতে আছে মাহমুদপুর হাওর, নিকলী, সুরমা বাউলার হাওর।হাওর-বাঁওড়সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জ জেলার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নিকলী উপজেলা। জেলা সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই নিকলীতে রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। নিকলীর হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।নিকলী উপজেলা সদরকে রক্ষার জন্য রয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ। বর্ষাকালে এই বাঁধে চারিদিক থেকে সমুদ্রের মতো ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। এই বেড়িবাঁধেই দাঁড়িয়ে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বাঁধজুড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা। সারাক্ষণ পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মতো সেসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কলকাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব। এছাড়া এ উপজেলায় রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি।বেড়িবাঁধের পাশে বসার জন্য কিছু সংখ্যক বেঞ্চ ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। বর্ষাবিলাস নামে একটি অবসর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছরই বর্ষা শুরু হলে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নিকলী উপজেলা সদরে আসে। বর্ষায় সমুদ্র উপকূল উত্তপ্ত এবং সাগর উত্তাল থাকায় পর্যটকরা বর্ষা মৌসুমে বেড়ানোর জন্য বিকল্প স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন নিকলী উপজেলা সদরকে।
#মিঠামইনঃ
এটি মূলত একটি প্রাচীন জনপদ অঞ্চল। মিঠামইন আরো কয়েকটি নামেও পরিচিত- মিঠামন, মিটামইন বা মিটামন বলে অনেকে একে উচ্চারণ করে থাকে। ধারণা করা হয় পার্শ্ববর্তী এলাকায় একসময় প্রচুর মিষ্টি বা মিঠা রসের খাগড়া গাছের বন ছিলো বলে একে এই নামে ডাকা হয়।
মিঠামইন হাওর, কিশোরগঞ্জ।
যোগাযোগঃ
ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জ সদরে যেতে পারেন। ট্রেনে করেই সুবিধা। ঢাকা থেকে এগারো সিন্দুর প্রভাতি ট্রেন বুধবার ব্যতীত সপ্তাহের অন্যদিন গুলোয় কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এটি সকাল ৭.১৫ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন কিশোরগঞ্জে। সদরে নেমে সি এন জিতে করে চলে আসবেন চামড়াঘাটে। চামড়াঘাট থেকে মিঠামইনের উদ্দেশ্যে স্টীমার রয়েছে। চাইলে রিজার্ভ ও করতে পারেন। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা প্রায়।
অথবা নিকলী থেকে ট্রলার বা স্প্রিটভোট বাড়া কর যেতে পারেন মিঠামইন।
থাকার ব্যবস্থা:
ভালো ভাবে থাকতে হলে কিশোরগঞ্জ সদরে ফিরে আসতে হবে আপনাকে। এখানে ভালো মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া মিঠামইনে উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় থাকতে পারেন। আর একেবারে থাকতে হলে মিঠামইন বাজারে কয়েকটি হোটেল ও গেস্ট হাউজ আছে।খাওয়া দাওয়া বলতে স্থানীয় বাজারে হাওরের বিভিন্ন তাজের মাছের স্বাদ নিতে পারেন।
আশপাশের দর্শনীয় স্থান:
আশপাশের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে _
– মালিকের দরগা
– দিল্লির আখড়া
– রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি
গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শঃ
মিঠামইনের যাওয়ার উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। আর ভ্রমণে হাওরে কোন ধরণের অপচনশীল দ্রব্য বা পরিবেশ বিনষ্টকারী কিছু পেলে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।
পরবর্তী আপডেটের জন্য আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন বেশি করে বাংলাদেশ ভ্রমন করুন।