জি নিউজ ডেস্কঃ স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া নিয়ে ক্ষোভের কথা প্রকাশ করলেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। বলেছেন, এমনটা হলে তিনি এই জোটেই যেতেন না।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন ড. কামাল। শুভজিত রায়কে দেয়া সাক্ষাৎকারটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ড. কামাল জানান, বিএনপি তার ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সেটা ভারতকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। ভোটের পর ভারত যেতে পারেন বলেও জানান তিনি।
জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ বিএনপির সঙ্গে ড. কামালের জোটটা হয়েছে হঠাৎ করেই। গত ১৩ অক্টোবর জোটবদ্ধ হওয়ার পর নাম রাখা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও এর আগে কামাল হোসেন বলেছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটে থাকলে বিএনপির সঙ্গে যাবেন না তিনি। তবে পরে ভুলেছেন সে কথা।
জোট হওয়ার পর ঐক্যফ্রন্টের জন্য বিব্রতকর হয় জামায়াতকে ধানের শীষ দিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত। কারণ, ঐক্যফ্রন্টের শরিকরাও একই প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেন আগে।
কামাল হোসেন এবং তিনি যাদেরকে নিয়ে জোট করেছেন তারা সবাই জামায়াতবিরোধী হিসেবে পরিচিত। জামায়াতের বিচার চেয়ে বছরের পর বছর আন্দোলনও করেছেন। সেই নেতারাই যখন ধানের শীষে ভোট চাইছেন, সেটি যাচ্ছে জামায়াতের পক্ষেও।
বিএনপির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐক্যফ্রন্টে আপত্তির খবর এসেছে গণমাধ্যমে। তবে নাম প্রকাশ করে নেতারা এতদিন কিছু বলেননি। ড. কামালই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কামাল বলেন, ‘জামায়াত নেতারা ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হবে জানলে ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্ব নিতাম না।’
বশ্য এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে ধানের শীষে ভোট বিপ্লবের আহ্বান জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। তিনি নিজে অবশ্য ভোটে দাঁড়াননি।
ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্ন বিব্রতকর অবস্থানে ফেলেছিল কামাল হোসেনকে। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে গিয়ে এই প্রশ্নে মেজাজ হারান তিনি।
জামায়াতের সঙ্গে একই মার্কায় ভোট করা এবং দলটির সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ধমকে উঠে বলেন, ‘কত টাকা খেয়ে এই প্রশ্ন করেছ? কার কাছ থেকে টাকা খেয়েছ?…তোমার নাম কী? চিনে রাখব।’
তুমুল সমালোচনার পর কামাল অবশ্য বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
সাক্ষাৎকারে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পূর্ব প্রেক্ষাপটও আংশিক তুলে ধরেন কামাল। বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গেই বলছে হচ্ছে জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়াটা বোকামি। আমি লিখিত দিয়েছি যে, জামায়াতকে কোনও সমর্থন দেয়া এবং ধর্ম, মৌলবাদ, চরমপন্থাকে সামনে আনা যাবে না।’
‘আমি যদি জানতাম, জামায়াত নেতারা ধানের শীষে নির্বাচন করবেন, তাহলে আমি এতে (ঐক্যফ্রন্ট) যোগ দিতাম না। আর যদি ভবিষ্যৎ সরকারে জামায়াত নেতাদের কোনও ভূমিকা থাকে, তাহলে আমি তাদের সঙ্গে একদিনও থাকবো না।’
ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রসঙ্গে কামাল বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস আগে আমার কাছে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসেন। তিনি আমাকে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। আমি একজন আইনের মানুষ। দেশের বাস্তবতা দেখেই ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে রাজি হই।’
‘ভারত বিরোধী অবস্থান সংশোধন করেছেন খালেদা’
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে ভারতবিরোধী হিসেবে দেখা হয়। এই জন্য নানা সময় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় দলটির নেতাদের। সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গ এলে কামাল বলেন, ‘ভারতকে বিএনপি বলেছে, তাদের অবস্থান ভুল ছিল।’
‘খালেদা জিয়া যখন ভারত গেলেন, তখন তিনি তাদের (ভারত) এটা বলেছেন। এটা তাদের ভুল উপলব্ধির প্রক্রিয়ার অংশ। খালেদা জিয়া তার দলের অবস্থান সংশোধন শুরু করেছেন। কিন্তু আমরা ভারতের সঙ্গে বাস্তবসম্মত সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চাই।’
‘পদ নয়, বিনা বেতনে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে চাই’
এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না- প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কামাল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি হ্যাঁ বা না বলব না। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনও পদ ও বেতন ছাড়াই রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।’
‘আমি ভোটের দিনের অপেক্ষায় আছি। ভোটের দিন একটি স্বাধীনতার দিন। যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তা হবে দ্বিতীয় স্বাধীনতার দিন। গণতন্ত্র এখন বিপদগ্রস্ত। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই স্বাধীনতা হবে অর্থপূর্ণ। ভোটের মাধ্যমে দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।’
‘ভোট বিপ্লবের’ আহ্বান
জামায়াতের ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া নিয়ে বিব্রত হলেও তাদের পক্ষেও ভোট পেয়েছেন ড. কামাল। গতকাল ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
যত বাধাই আসুক, মাঠ না ছাড়তেও দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান ঐক্যফ্রন্ট নেতা। বলেন, এবারের ভোটে দেশ ও জনগণের বিজয় হবে।
ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘এই নির্বাচনে বিজয় কোনো দলের নয়, ১৬ কোটি মানুষের বিজয় হবে। একদিকে ১৬ কোটি মানুষ, অন্যদিকে অহঙ্কারী কিছু মানুষ, যারা নিজেদের দেশের মালিক মনে করে। ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে দলীয়করণ করবে না, দলীয়করণ থেকে মুক্ত হতেই আমরা এক হয়েছি। দলীয়করণ মানে জমিদারি, ভোট দিয়ে এ থেকে মুক্ত হব। ধানের শীষে ভোট দিলে এ থেকে মুক্ত হবেন। ধানের শীষ দলের নয়, সবার ঐক্যের প্রতীক।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে তারা। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জনগণ ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্রের মুক্তি, রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরে পেতে ধানের শীষে ভোট দিন।’
কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠক আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুব্রত চৌধুরী, শহিদুল্লাহ কায়সার, জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।
সেনাবাহিনীর কাছে কার্যকর ভূমিকার আশা দুরূহ
এর আগে এক বিবৃতিতে কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ পক্ষপাতমূলক আচরণের পর তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কার্যকর ভূমিকা আশা করা দুরূহ। এরপরও ৩০ ডিসেম্বর দেশের মানুষ জনগণ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
সুত্র ঢাকা টাইমস