স্টাফ রিপোর্টারঃ জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে সরকারী জায়গায় জমজমাট এখন অবৈধ মার্কেট। রেল ষ্টেশন এলাকায় রেলক্রসিং কে ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক ভাসামান দোকানপাট। ষ্টেশনে মাদক ব্যবসার ইতিহাস পুরাতন। নিরাপদ জায়গা মনে করে চলে মাদক ব্যবসা। অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করার জন্য গঠিত হয়েছে একটি কমিটিও। কমিটির সদস্যরা বিপদ-আপদ দেখভাল করেন। আর এক শ্রেনীর চোর ট্রেনে পকেট কেটে ষ্টেশনে আশ্রয় নেয়। আরেক শ্রেনীর চোর ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের একটি মাত্র ব্যাগে থাকা সংসার, ভিক্ষার টাকা এমনকি ১১৫ বছরের এক বৃদ্ধের গাঁয়ে পড়া পাঞ্জাবী পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাচ্ছে,গত কিছুদিন আগে দিনের আলোতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ঘটলো নিরিহ পরিবহন শ্রমিক খুনের ঘটনাও।
সরেজমিন জানা যায়, জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে এলাকায় ছোট বড় প্রায় প্রায় একশর মত দোকানপাট রয়েছে। নানা ধরণের রকমারীর ওই সব দোকান প্রকাশ্যেই করছে ব্যবসা বানিজ্য। নিয়মিত চাঁদা দিয়ে তারা ব্যবসা করছেন। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা প্রতিদিন ১৩৫ টাকা করে চাঁদা দেয়। কারেণ্ট বিল বাবদ প্রতিদিন প্রতিটি বাতির জন্য দেয় ৩৫ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সকল দোকানপাট ঠিকাদারী ভিত্তিতে গোপন ডাক হয়। ডাক দেয় এক শ্রেনীর নেতা টেইপের ঠিকাদার। তখন তারা জামানত নিয়ে বিভিন্ন দোকান বসায়। আর ওই সকল দোকান থেকে প্রতিদিন তোলা হয় নির্ধারিত হারে চাঁদা। দোকানীরা বলছেন, রমজান মাসে তারাবির জন্যও চাঁদা দিতে হয়। মসজিদের জন্যও চাঁদা দিতে হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলেও চাঁদা দিতে হয় তাদের।
রেলওয়ে জংশন এলাকায় গড়ে উঠা এই সব অবৈধ দোকানপাট হওয়ায় জমছে বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষের আড্ডা। ষ্টেশন এলাকায় অবস্থানরত অপরাধী চক্রেরও নিয়মিত আড্ডা হয়ে গেছে জয়দেবপুর জংশনে গড়ে উঠা অবৈধ মার্কেট গুলোতে। ফলে আগে থেকেই চলমান থাকা মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এই সকল অবৈধ মার্কেটে ব্যাপক ভাবে।
জানা গেছে, প্রতি রাতে অসংখ্য গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষ ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঘুমায়। সারাদিন নানা কাজ করে রাতে তারা ষ্টেশনে থাকে। এই শ্রেনীর মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ভিক্ষুক শ্রেনীর। বাকীরা নানা কাজ করে জীবিকা চালায়। মাদকের সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ষ্টেশনে থাকেন অনেকেই। তারা জানালেন, সারাদিন ভিক্ষা করে যা পান তা রাতে পাহারা দিতে হয়। ভিক্ষার টাকা ও যাকাতের কাপাড় নিয়ে যায় চোর। তাদের অভিযোগ, মাদকাসক্তরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এই ধরণের চুরি/ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে,প্লাটফর্মের দক্ষিণ অংশে রেললাইনের দুই পাশে একাদিক ঝুপড়ি গড়ে নিয়মিত চলে মাদক বিক্রি ও সেবন।
ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা শতাধিক বছরের বৃদ্ধ হুসেন আলী। বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে। স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলে মেয়ে থাকলেও ভাত দেয় না। তাই তিনি এই ষ্টেশনেই থাকেন। সারাদিন হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে যতটুকু পারেন ততটুকু এলাকা ঘুরে ঘুরে যা পান, তা দিয়েই জীবন ধারণ করেন হুসেন আলী। খেয়ে পড়ে ৫ শতাধিক টাকাও জমেছিল তার।
হুসেন আলী জানালেন, সকালে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দিতে হয়। আসরের নামাজের আগে আসা নিষেধ। তাই সন্ধ্যা হওয়ার অপেক্ষায় ষ্টেশনের একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিজের ব্যাগটির উপর মাথা দিয়ে জিমিয়ে পড়েছিলেন হুসেন আলী। পরশু সন্ধ্যায় ৫’শ টাকা সহ ব্যাগটি নিয়ে যায় চোরে। চোর শুধু ব্যাগটিই নেয়নি, ব্যাগে থাকা ঈদৈর নামাজের জন্য ভিক্ষা করে পাওয়া একটি নতুন পাঞ্জাবীও নেয়া হয়ে গেছে চোরের।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনকে ঘিরে গড়ে উঠা অবৈধ মার্কেট নিয়ন্ত্রনে গঠিত হয়েছে একটি কমিটি। প্রতিদিন কমিটির সদস্য সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলেও কমিটির পরিধি ১৫/২০ জনের মধ্যেই থাকে। এই কমিটির রয়েছে সভাপতি ও সম্পাদকও। চাাঁদা তোলার সময় সভাপতি ও সম্পাদক সাহেবরাও অনেক সময় সাথে থাকেন।
এ সকল বিষয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে থাকা জিআরপি ইউনিটের ইনচার্জ সুব্রত দাস বলেছেন, চোর ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও সব সময় অপরাধী ধরতে অভিযান চলমান থাকে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের প্রধান ষ্টেশন মাষ্টার মোঃ শাহজাহান বলেছেন, আমার কাছেও ভিক্ষুকের ভিক্ষা চুরির একাধিক অভিযোগ এসেছে। আমি কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আর ষ্টেশন এলাকায় কোন অবৈধ দোকান পাট নেই দাবী করে তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মে ১৮টি বৈধ দোকান আছে। এ ছাড়া যে দোকানপাট আছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম। রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে জায়গা রেলওয়ের । এরপর যে মার্কেট গুলো আছে, সেগুলো দেখভাল করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। সাধারণ যাত্রী এবং জনগণের অভিযোগ এসব কিছু ঘটনা এখানকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবগত এবং তাদেরকে মেনেজ করেই প্রতিনিয়ত চলছে এসব অবৈধ কার্যকলাপ।