তাবলীগ জামাতের নিযামুদ্দিন মার্কাযের অন্দরমহল-১

0
271

যুগে যুগে আমীরের বিরোধীতা ও ফলাফল
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ

♦এক
বিশ্বব্যাপি দাওয়াত ও তাবলীগের প্রধানকেন্দ্র বা মার্কাজ হল ভারতের দিল্লী শহরে নিযামুদ্দীন বস্তির বাংলাওয়ালী মসজিদ। যা জগতজুড়ে ‘নিযামুদ্দীন মার্কাজ’ নামে পরিচিত। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লামের মোবারক দ্বীনের মেহনতকে আল্লাহ পাক তার নিজ কুদরতদ্বারা দ্বীতিয়বার তার প্রিয় বান্দা হযরতজী মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস রহ.এর মাধ্যমে এই মকবুল স্থান থেকে চালু করেছেন। সম্প্রতি উপমহাদেশে আলেম সমাজ ও তাবলীগের থীদের মাঝে এই নামটি খুব উচ্চারিত হচ্ছে।

অনেকে খুব আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করেন, নিযামুদ্দীনের মার্কাজ থেকে নাকি অমুক অমুক বুজুর্গ বের হয়ে গেছেন!অমুক দোশের তমুক আলেম নাকি বিদ্রোহ কনেছেন। অমুক অমুক প্রাচীন সাথী নাকি এখন স্বতন্ত্র কাজ করছেন আমির থেকে আলাদা হয়ে। সহী নেহাজে নাকি এখন অমুক তরজুমান কাজ শুরু করেছেন? আমি বলি, দেওবন্দ আমাদের মসলকের মূল মার্কাজ। দেওবন্দ মাদরাসা থেকেও তো অনেক বুজুর্গ অনেকবার বের হয়ে গেছেন। মতের অমিল হওয়ায় খোদ দারুল উলুম দেওবন্দ (ওয়াকফ্) নামে আরেকটি মাদরাসাও হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ দুটি হয়েছে। এটাতো স্বভাবিক বিষয়। নিযামুদ্দীন মার্কাজে আজ থেকে ৭০বছর আগেই এর চেয়ে বড়বড় মুবাল্লিগ আলেম কাজ নিয়ে চলনেওয়ালা হাকীকী সাথী নানান বড় বড় অভিযোগ এনে আগের হযরতজীদের থেকে বের হওয়ার বড়বড় ঘটনা বহুবার ঘটেছে। বের হয়ে কিতাব লেখা হয়েছে।

কিন্তু দেখার বিষয় মকবুল এই জামাতের আমীরের বিরোধীতা করা ও নিযামুদ্দীনের মার্কাজ থেকে বুজুর্গদের বা পুরানো জিম্মাদার সাথীদের বের হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু, নাকি সকল আমিরের সময়ই বড়বড় হাস্তিরা বের হয়ে গিয়ে বিরোধীতা করেছেন। সে ইতিহাসটুকো আপনাদের সামনে তুলে ধরব ধারাবাহিকভাবে এবং আমিরের বিরোধীতা ও দোষ তালাশে লেগে তাদের শেষ পরিণতি কি হয়েছে।

♦দুই
অমুক অমুক বুর্জুগ বের হয়ে গেছেন। তাদের ভুল হতে পারে না। তিনি তো তাবলীগী কিতাবের তরজুমান। কাজের মূল। তিনিকো আর এমনে এমনেই বিরোধীতা করে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বত্বন্ত্র কাজ শুরু করেন নি। তার বিদ্রোহ যৌক্তিক। সহি নেহাজে তাবলীগ চালুর জন্য। এমন হাজারো বদ্ধমূল এক ধারনা অনেকের ভিতর। তারা কি কম বুঝে বিরোধীতা করছেন?

কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে একজন সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুর পায়ের ধুলার মর্যাদা একজন বুজুর্গের হতে পারে না। কোথায় রাসুলের সাহাবীর মর্যাদা। এমনি একজন সাহাবি রাসুলের ওহী লেখক ছিলেন। ওহি লিখতে লিখতে এতবেশি পুরানো হয়েছিলেন যে, তিনি হযরত জিব্রাইল আ. এর পরে কি আয়াত নিয়ে আসতে পারেন তা আন্দাজ করতে পারতেন। একদিন রাসুল সা. কে এই সাহাবী বললেন, নবিজী এর পরের আয়াত এটি আসতে পারে,”ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানাল খালেকিন”। জিব্রাইল আমিন পরক্ষনে এই আয়াত নিয়েই হাজির হলেন। কাতেবে ওহি সাহাবীর ভেতরে সংশয় ঢুকে গেল নবিজীর ওহী নিয়ে। তিনি বললেন, তাহলে মোহাম্মদ এসব লোকদের কাছ থেকে শুনে শুনে ও নিজ থেকে বানিয়ে বানিয়ে বলে (নাউজুবিল্লাহ)। তিনি মুরতাদ হয়ে গেলেন। রাসুল ঘোষনা দিলেন, তাকে কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায় ফেলেও তাকে তোমরা হত্যা করবে। (ক্বাবার চত্তরে রক্তপাত নিষেধ)।

একজন পুরানো কাজকরনেওয়ালা সাহাবীর যদি এমন অবস্থা হতে পারে। তার চোঁখে যদি নবিজীকে নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে। তিনি যদি নবিজীর উপর এশকাল আর অভিযোগ তুলে মাহরুম হতে পারেন। এত খাছ নৈকট্য প্রাপ্ত সাহাবী যদি আনুগত্য/ এতেয়াত থেকে বঞ্চিতত হয়ে মুরতাদ পর্যন্তন হয়ে যেতে পারেন তাহলে, পরবর্তিতে কোন দ্বীনের কাজ করনেওয়ালা পুরানো বুজুর্গ বঞ্চিত হওয়া কি অস্বাভাবিক কিছু? কাজ করনেওয়ালা বড়বড় আলেমরা কাজ থেকে দুরে সরে যাওয়া বা মাহরুম হওয়া কি অনেক বড় কোন ঘটনা? কারন একজন সাহাবীর তুলনায় এজামানার কোন বড় আলেম, বড় বুজুর্গ, পুরানো সাথী, জিম্মাদার কিছুই না।

নিযামুদ্দীনের মার্কাজে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ চালু হওয়ার পর যিনি হযরতজী মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস নাওয়ারল্লাহু মারকাদাহুর পাশে এসে দাড়িযেছিলেন এলেম ও হেকমতের বিশাল ভান্ডার নিয়ে তিনি হলেন, ইলিয়িস রহ প্রথম খলিফা ও প্রধান সহচর মাওলানা এহতেশামুল হাসান কান্ধালবী! যিনি হযরতজীর আপন চাচাত্ত ভাই ছিলেন। আরব বিশ্বে দাওয়াতের কাজের সূচনা তাঁর মাধ্যমেই। এমনকী বাদশা আব্দুল আজিজ বিন সউদের যে চিঠি এসেছিল দুই হয়রতের নামে সে চিঠির উপর প্রথম এহতেশামুল হাসানের নাম পরে মাওলানা ইলিয়াস রহ এর নাম লিখা ছিল। ফাজায়েলে আমলের পেছনে একটি পুস্তাকা সংযুক্ত আছে, “পুস্তিকা ওয়াহেদে এলাজ”। যা প্রতিদিন তাবলীগের সাথীদের উসুলি কিতাব হিসাবে ঘরে, মসজিদে, সফরে পাঠ করা হয়ে থাকে। এই কিতাবটি মাওলানা এহতাশামুল হাসান এর লেখা। তাবলীগের ছয় নাম্বারের লেখকও তিনি। কোন কোন মাসায়েখ বলতেন মাওলানা এনামুল হাসান দেহলভী হযরতের আত্মার অনুবাদক। দেশে বিদেশের বড়বড় জোড় আর ইজতেমাতে আকর্ষনীয় বয়ান ও তাশকীল করতেন। আকাবিরগন তাকে বলতেন ‘কাতেবে ইলিয়াস রহ”। কেউ কেউ বলতেন তরজুমানে হযরতজী।

নিযামুদ্দীন মার্কাজে এই ঘরের বাতি থেকেই প্রথম আগুন লাগে। নিযামুদ্দীন মার্কাজে প্রথম আমিরের দোষ চর্চা এই মাওলানা এহতেশামুল হাসানই চালু করেন। নিযামুদ্দীন মার্কাজে প্রথম বিদ্রোহ তিনিই স্বদলবলে করেন। নিযামুদ্দীন মার্কাজে তিনিই সর্ব প্রথম বের হয়ে তাবলীগের বিরোদ্ধে কিতাব লিখেন। তার শেষ পরিণিতি কী হয়েছিল তা দীর্ঘ ইতিহাস। নবিজীর কাতেবে ওহীর মতোই কাতেবে ইলিয়াস রহ খ্যাত এই মাওলানার পরের ঘটনাগুলো অনেক ব্যাথা আর কান্নার করুণ কাহিনী। (বিস্তারিত পড়ুন, তাবলীগ জামাত আওর মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী” গ্রন্থে।

♦তিন
বড় হযরতজী মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস রহ যখন দাওয়াত ও তাবলীগের এই মোবারক মেহনত শুরু করেন তখন এই কাজের উপর নানান অভিযোগ আর এশকালাত এসেছিল শুরু থেকেই বড়বড় শায়খুল মাশায়েখদের পক্ষ থেকে। আহলে হক উলামায়ে কেরাম ও কাছের মানুষদের কাছ থেকেই তিনি সবচেয়ে বেশি বাধা গ্রস্থ হয়েছিলেন। তার এক আত্মীয় মাওলানাতো এই কাজের বিরোধীতা করতে গিয়ে তাকে ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন