দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ মির্জা ফখরুল,ড.কামালের চামচামি করার অভিযোগ কর্মীদের

0
54

জি নিউজ ডেস্কঃ বেগম জিয়া দুর্নীতি মামলার রায়ে আবারও ৭বছরের কারাদণ্ড হওয়ার দিনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির কর্মীদের দ্বারা ঘেরাও হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আন্দোলন কর্মসূচি দাবি করে তাঁকে আটক রেখে শ্লোগান দেওয়া হয়। তখন দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতারা তাঁকে উদ্ধার করেন। তবে বিএনপি মহাসচিব বিক্ষুব্ধ কর্মীদের অঙ্গীকার করেন, ‘দশদিনের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে।গতকাল দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। রায় ঘোষণার পরপরই দুপুর একটার দিকে বিএনপি মহাসচিব দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় নেতা কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তারা বলেন, ‘ম্যাডাম নয় মাস জেলে, আর আপনি ড. কামালের চামচামি করছেন।’ একজন বলেন, কর্মসূচি দেন।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘সরকারের দালালি করছেন কেন? বেগম জিয়াকে জেলে রেখে আপনি নেতা হবেন? আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেবো না।’ এর মধ্যে শ্লোগান ওঠে ‘বেগম জিয়ার মুক্তির পথ, রাজপথ রাজপথ।’এসময় মির্জা ফখরুল কিছু বলতে চাইলে তাঁকে দাওয়া দেওয়া হয়। ‘দালাল’ দালাল বলে শ্লোগান ওঠে। দ্রুত গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং খায়রুল কবির খোকন এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। কিন্তু কর্মীরা বলেন, ‘কর্মসূচি কবে দেবেন।’ বিএনপি মহাসচিব কর্মীদের বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে কর্মসূচি দেখবেন। এমন কর্মসূচি দেবো, যে সরকার টিকতে পারবে না।’ এরপর মির্জা ফখরুল প্রেস কনফারেন্স করলেন। খালেদা প্রশ্নে বিভক্ত বিএনপি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়া ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি কারান্তরীণ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেলো। অনেকের প্রশ্ন, বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের কি পরিসমাপ্তি ঘটল এই রায়ের মধ্য দিয়ে? বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক অধ্যায়ের যবনিকা এই রায় টানবে কি না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কিন্তু এই রায়ের মধ্যে দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেলো, তা হলো আগামী নির্বাচনে তাঁকে দেখা যাবে না। নির্বাচনের আগে তাঁর মুক্তির সম্ভাবনার শেষ আলোটুকুও নিভে গেলো। জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পরও তাঁর মুক্তির আশা ছিল। বিএনপির আইনজীবীরা ধারণা করেছিলেন সাতদিন বা এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি জামিন পাবেন। এটা বিএনপির রাজনীতির জন্য একটা বড় প্রেরণা হবে। এই আশা নিয়েই বেগম জিয়া তাঁর অনিচ্ছাতেই লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু প্রায় নয় মাসেও বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারেননি তাঁর আইনজীবীরা। বিএনপির অনেক আইনজীবী মনে করছিলেন, এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু চ্যারিটেবল মামলায় দণ্ডিত হওয়ার ফলে তাঁর নির্বাচনে দাঁড়ানোর শেষ সম্ভাবনাটুকুও শেষ হয়ে গেল। এখন বিএনপি যদি নির্বাচন করতে চায়, তাহলে বেগম জিয়াকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করতে হবে। বিএনপি কি তা করবে? বিএনপির একাধিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে যে, বেগম জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এখন আইনগতভাবেই বিএনপি নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে গেল। এমনকি তর্কের খাতিরে আমরা যদি ধরেও নেই যে, সরকার একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করলো, তাহলেও নির্বাচন আইন অনুযায়ী বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। বিএনপির জন্য তাহলে কোন দাবিটি প্রধান দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি। এই প্রশ্নে এখন বিভক্ত দলটি। তৃণমূল এবং বিএনপির জন্য নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘খালেদার মুক্তি ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।’ তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতার জন্য দায়ী করছে মহাসচিব সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের। এই রায়ের পর তারা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। তারা বলছে, নির্বাচনের মাত্র আছে ক’দিন। এর মধ্যে না হবে আন্দোলন, না হবে নির্বাচন। অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মনে করছে, এখনো অনেক কিছুই দেখার বাকি আছে। বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন কিনা সেটা বিএনপি মহাসচিবদের কাছে বড় ইস্যু না। বড় ইস্যু হলো সরকারের পতন। বিএনপি মহাসচিব পন্থীরা বলছেন, ‘সামনে দেখবেন কীভাবে সরকার বিপদে পড়ে।’ সরকার বিপদে পড়বে কিনা সেটি বড় কথা নয় বরং এই রায় যে বিএনপিকে বিভক্তির পথে নিয়ে যাবে, তা স্পষ্ট।

কোন মন্তব্য নেই