দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা

0
29

শিক্ষক হলো রাষ্ট্রের দর্পণ। দেশ ও জাতির গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একজন শিক্ষকের জ্ঞানের পরিধি এতটাই সমৃদ্ধ যে,দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বদা ভূমিকা রেখে চলে।

দেশ গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা কি রকম?
অনেকেই ভেবে থাকেন শিক্ষকদের কাজ হলো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক প্রকৃতপক্ষে দেশকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে থাকেন।যখনই দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের জ্ঞানের পরিধি ভালো ভাবে কাজে লাগাতে থাকে। দেশে যেন অরাজকতা, সহিংসতা, বৈষম্যের সৃষ্টি না হয় সেজন্য শিক্ষকরা নতুন নতুন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রকে প্রদান করে থাকেন।এর দরুণ দেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পরতে পারে না। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য প্রতিনিয়তই বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোগুলোতে রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আলোচক হিসেবে রাখা হয়। দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনৈতিক সংকট দমনের জন্য যুগান্তকারী কিছু বার্তা দিচ্ছেন, যেগুলো দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশ গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা তাদের উল্লেখযোগ্য বার্তা প্রতিনিয়ত দিয়ে থাকেন। ভবিষ্যতে কি হতে পারে, তার আগাম কিছু তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে থাকেন জাতিকে।

সরকার কতটুকু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশে?
বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ে সরকার বই পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের নানান কিছু দাবি সরকার মেনে নিচ্ছে। প্রতিটি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা দিয়ে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ জাতীয়করণ করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। এতে করে নতুন নতুন শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে। পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে চাকরি হয়েছে অনেক শিক্ষকদের। ওই শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও সরকার প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ট্রেনিং ব্যবস্থা ও করেছে সরকার। ট্রেনিংকালীন বেতন ও দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ও আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চালানোর জন্য দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে সরকার। যেটা আধুনিক বিশ্বের সাথে যুগোপযোগী। সরকারের একটাই লক্ষ্য আদর্শ জাতি হিসেবে গড়ে উঠুক বাংলাদেশের মানুষ।

ছাত্র -শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
ছাত্র -শিক্ষকের সম্পর্ক হতে হবে মধুর। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসুলদের পৃথিবীতে শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ( স.) বলেছেন,আমি মানবজাতির শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। শিক্ষকতা একটি মহান ও মহৎ পেশা।পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানিত পেশা হলো শিক্ষকতা।ছাত্র -শিক্ষকের মধ্যে কখনো দূরত্ব বৃদ্ধি করা যাবে না।ছাত্রকে অবশ্যই শিক্ষকের আনুগত্য হতে হবে। অপরদিকে, শিক্ষককেও ছাত্রের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে।

বর্তমানে ছাত্র দ্বারা শিক্ষক কতটুকু মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন?
কথায় আছে, ব্যবহারে বংশের পরিচয়। যার মধ্যে নম্রতা, ভদ্রতা বজায় থাকে ওই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকরা সবসময় সম্মান পেয়ে থাকেন। আজ থেকে ২/৩ আগেও শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান পেত। কিন্তু করোনা ভাইরাস নামক মহামারীর পর থেকে বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা পর্যাপ্ত সম্মানটা ছাত্রদের কাছ থেকে পায় না।নম্রতা, ভদ্রতা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। শিক্ষকরা ক্লাসেও নানাভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মানসিকভাবেও অপমানিত হয়ে থাকে। কিছু ছাত্র রয়েছে যারা কিনা শিক্ষককে অপমান কিভাবে করা যায় সে ফন্দি সবসময় খোঁজে। অনেকে মজার ছলে বলে থাকেন,যেদিন থেকে লাঠি উঠে গেছে,সেদিন থেকে বেয়াদবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনও দেখা যায়, শিক্ষকের উপর নির্যাতন করে থাকে ছাত্ররা।শিক্ষা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

একজন শিক্ষকের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
শিক্ষক মানেই অন্যকে শিক্ষা দান করা। অন্যকে শিক্ষা দেওয়ার আগে নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কিছু প্রতিষ্ঠানে এরকম কিছু শিক্ষক রয়েছে যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিন্তু আচরণের যোগ্যতা পরিপূর্ণ হয়নি। এ পর্যন্ত অনেক শুনেছি,শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর সম্পর্ক। যেটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সন্তানের মধ্যে মায়া মমতায় আগলে রাখবেন এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কিছু অসাধু,চরিত্রহীন শিক্ষকের কারণে গোটা শিক্ষক সমাজের ঘৃণার পাত্র হতে হয়।শিক্ষকের মধ্যে অবশ্যই মার্জিত ও শালীনতা পূর্ণ আচরণ পরিলক্ষিত হতে হবে।

সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেমন গুরুত্ব দিচ্ছে?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারের সুযোগ -সুবিধা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে সরকারের নজর তেমন নাই বললেই বলে। কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো মূলত ব্যাক্তি বিশেষের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পরিচালিত হয়ে থাকে। দেশের সামগ্রিক গঠনের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মেধার প্রমাণ রাখছে। ওইসকল শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রমের জন্যই মেধাবী ও গুণী জ্ঞানের ভান্ডার এদেশে জ্যোতি ছড়াতে থাকে।

শিক্ষার অভাব নাকি শিক্ষকের সংকট?
দেশে এখনো মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার লাভ করেনি। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব তালিকায় তলানিতে অবস্থান করছে। দেশের সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মানসম্মত যথেষ্ট শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত শিক্ষা শিক্ষকদের কাছ থেকে নিচ্ছে না।যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতির কল্যাণে কাজে আসার কথা। কিন্তু সেই প্রকৃত শিক্ষা থেকে অনেকেই দূরে সরে যাওয়ায় অকালেই ঝরে যাচ্ছে। এর কারণ, এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রাজনীতির প্রভাব বেশি। যার কারণে ধারণা করা যায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যতটুকু জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন ততটুকু হচ্ছে না। তদ্রূপ, রাজনীতিতেই বেশি সময় দেওয়া হচ্ছে।

আপনার চোখে একজন শিক্ষক কি রকম?
জাতি গঠনের কারিগর হলো শিক্ষক। একজন শিক্ষক জ্ঞানের পরিধি ছাত্রদের মধ্যে বিনা স্বার্থে বিলিয়ে দেন। যার কারণে ছাত্ররা শিক্ষক, ডাক্তার কিংবা ইন্জিনিয়ারসহ নানা পেশায় নিয়োজিত হয়ে থাকেন।একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের সুন্দর জীবনের জন্য আলোর পথ দেখান।

বাদশাহ আবদুল্লাহ
কলামিস্ট ও বিশ্লেষক

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন