এম হায়দার চৌধুরী, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) :: ছোট্ট মেয়ে “নদী আক্তারের” ইচ্ছা ছিল চড়াই উৎরাই পার হয়ে নদীর মতোই বয়ে যাবে অনেক দূর ! পড়াশুনা করে একদিন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, মানব সেবার মানসে “নদী আক্তার” একদিন ডাক্তার হবে। তা আর হলোনা, তার চিকিৎসক হওয়ার আকাঙ্খা অপূর্ণই থেকে গেল। বিদ্যুৎ নামের দানব তার সকল ইচ্ছাকে অঙ্কুরেই সমূলে বিনাশ করে দিল।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ইসলামী একাডেমী এন্ড হাই স্কুলের ছাত্রী “নদী আক্তার” (১০) বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দু’পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে প্রায় দুইমাস আগে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় তার দেহের প্রায় অর্ধাংশ অগ্নি দহনে ঝলসে গেছে। তার ইচ্ছা ছিল পড়াশুনা করে একদিন ডাক্তার হয়ে তার বাবার সংসারের হাল ধরবে। তার সে আশা আর পূর্ণ হলোনা। অদৃষ্টের ফেরে অনাকাঙ্খিত বিদ্যুৎ দুর্ঘটনায় দুই’পা হারিয়ে সে দুই মাস যাবৎ ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা র্বান ও প্লাষ্টিক র্সাজারী ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। উন্নত চিকিৎসার না পেয়ে দিন দিন তার শারিরীক অবস্থা অবনতি হচ্ছে। “নদী আক্তারের” চিকিৎসক হওয়ার বাসনা শেষ হয়ে গেছে চিরতরে। এখন সে প্রাণে বাঁচতে চায়। বেঁচে থাকার আকূল মিনতি তার চোখেমুখে।
উল্লেখ্য গত ১৫ মে ২০২০ সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের রফিক মিয়ার কন্যা, শায়েস্তোগঞ্জ ইসলামী একাডেমীর ছাত্রী “নদী আক্তার” তার পার্শ্ববর্তী স্থানীয় একটি হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী মর্জিনা খাতুন এর বাসায় বেড়াতে যায়। এক সময় শিশুমনে সে বাসার ছাদে উঠলে সেখানে ফেলে রাখা উন্মুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগের তারে জড়িয়ে পড়ে। এসময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ প্রেরণ করেন। সিলেটের হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তার শারিরীক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এসময় সেখানকার চিকিৎসক আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৭ মে “নদী আক্তারকে” ঢাকায় শেখ হাসিনা র্বাণ ও প্লাষ্টিক র্সাজারী ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করেন। পরে গত ৪ জুন চিকিৎসার প্রয়োজনে ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে হাঁটুর নীচে তার দুই পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। সে দিন থেকে “নদী আক্তার” চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।
আলাপকালে “নদী আক্তারের” স্কুল শিক্ষক আব্দুর রকিব জানান, সে বিদ্যালয়ে তার শ্রেণিতে পড়াশুনায় খুবই মেধাবী একজন ছাত্রী। পড়াশুনায় তার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। সে সহপাঠীদের বলতো বড় হলে সে মানব সেবা করার জন্য ডাক্তার হবে।
নদীর বাবা রফিক মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, এরপর থেকে তার চিকিৎসার খরচ জোগান দিয়ে র্বতমানে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন তার বাবা রফিক মিয়া। আর্থিক সংকটের কারণে “নদী আক্তারের” চিকিৎসা সেবা প্রায় বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। নদী বাবা তার জায়গা-জমি যা ছিল তা বিক্রি করে দুই মাস যাবৎ মেয়ের চিকিৎসায় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এখন দিশেহারা। নদীর চিকিৎসার খরচ বহন করতে তার বাবার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছেনা। ইতোমধ্যে রফিক মিয়া শেষ সম্বল জায়গা-সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন। কন্যার চিকিৎসায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে তিনি এখন দিশেহারা। “নদীর” দরিদ্র বাবার পক্ষে তার চিকিৎসার ব্যয়-ভার বহন করা আর সম্ভব হচ্ছেনা। উন্নত চিকিৎসার অভাবে শিশু নদী আক্তার এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিন গুনছে। এমতাবস্থায়, অসহায় শিশু “নদী আক্তারের” সুচিকিৎসার প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি “নদী আক্তারের” জীবন রক্ষার্থে সমাজের অর্থ-বিত্তশালীদের মানবতা বোধ প্রকাশিত হোক। মানবিক কারণে সহযোগীতার হাত প্রসারিত হোক সমাজের বিত্তবানদের এটাই প্রত্যাশা “নদী আক্তারের” পরিবারের।