নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবস আজ

0
45

জি নিউজ ডেস্কঃ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই রাতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।পরিবার-পরিজন, পাঠক, ভক্ত, ও শুভানুধ্যায়ীদের অশ্রুধারায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়ীত হন গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়।হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখক হিসাবে পাঠকদের মনে স্থান করে নিয়েছেলেন। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরই ছড়িয়ে পড়েছিলো তাঁর খ্যাতি । ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শংখনীল কারাগার’। উপন্যাসে ও নাটকে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। তিনি তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদ ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিলো কাজল। তিনি ছিলেন বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান।তার বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ভাই। খ্যাতিমান কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী গ্রহণ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে মনোযোগ দেন। হুমায়ুন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে অর্জন করেন দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ বহু পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর নাতনি গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন। হুমায়ূন এবং গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। তিন মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এই পরিবারে জন্ম নেয় দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।

২০১১ সালে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে হুমায়ূন আহমেদের শরীরে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখাহয়।
আজকের এই দিনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক থেকে ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ।তারপর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে চিরনিদ্রায় শায়ীত হন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়।

কোন মন্তব্য নেই