নবীনগরে নবাগত ওসি’র যোগদান! প্রত্যাশা পূরণে আমাদের করণীয়

0
64

নবীনগরে নবাগত ওসি’র যোগদান!
প্রত্যাশা পূরণে আমাদের করণীয়

রবিবার ০৫/০৭ সন্ধ্যায় অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নবীনগর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনোজিত রায় এর স্থলাভিষিক্ত হলেন এই নবীনগর থানায় একসময় সেকেন্ড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মিঃপ্রভাষ চন্দ্রধর।

ওরে বাবা কয়দিন ধরে এ নিয়ে কত হৈচৈ পড়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,বাজারে হাটে ময়দানে!
কাউকে তো দেখছি রনোজিত দাদা চলে যাচ্ছেন সেই বিষাদে ভীষণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন।
তাদের ভাষ্য দাদা অনেক মিষ্টভাষী,অতিথি পরায়ণ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিলেন।
এমন একজন ওসি তাদের কাছে বিরলও বটে।

আবার কাউকে দেখছি রনোজিত বাবু’র এই বিদায়ে মহা খুশি।
যেন তারা এতো দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উনার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে!
কিন্তু তার আর পেরে উঠেননি,এবার তিনি উপরের মহলের নির্দেশে বিদায়!!
আহ উনাদের কত আনন্দ!!!
তাদের ভাষ্য মতে রনোজিত রায় একজন মিষ্টভাষী বটে তবে ছলনাময়ী,কথা কাজে মিল রাখেননি! দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।
উভয় পক্ষের মতামতের মধ্যে বিস্তর ফারাক!
অর্থাৎ এক পক্ষ তুষ্ট আরেক পক্ষ অতিষ্ঠ।

পুরাতন কর্মস্থলে আমাদের থানার নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রভাষ চন্দ্রধর দাদাকে নবীনগরবাসীর পক্ষ থেকে স্বাগতম জানাই।
নবীনগরের কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরে আনতে উনার পথচলায় সুস্বাগতম।
যতদূর জানি তিনি যেসব যায়গায় কাজ করছেন সেখানে উনার সফলতা অনেক।

জানি না তিনি ইতোমধ্যে উনাকে নিয়ে নবীনগরে উচ্ছ্বসিত হওয়ার আর আগ্রহের মাত্রাটা কত উঁচুতে অবস্থিত সেটা তিনি এই মুহূর্তে অনুধাবন করতে পেরেছেন কিনা ??
তিনি আরো বুঝতে পারছেন কিনা কি কারণে এতো প্রত্যাশা,আগ্রহ উনাকে নিয়ে ???
সম্ভবত তিনি খোঁজ খবর পেয়ে যাবেন।
কারণ তিনি এই নগরে পূর্বে চাকরির সুবাদে সুধীজনকে কিছুটা হলেও চিনেন।
বড়পরিসরে না চিনলেও একটু ছোট পরিসরে হলেও আগে থেকেই চেনেন।
অথবা আমাদের নবীনগরের কিছু কামলিওয়ালা তো আছেন যারা উনাকে হয়তো চেনাবেনও!
তাহলে বাকিসব পরিচয়,অবস্থান পরিমাপ করতে নিশ্চয়ই উনার বেশি সময় লাগবে না।

তবে সমস্যা একটু তো আছেই–
সেটি হলো তিনি নবীনগর সম্পর্কে যেই ধারণা ছিল সেই ধারণায় এখন অনেক নিউ কালেকশন!

মাদক নির্মূল,সন্ত্রাস দমন,সাম্প্রদায়িকতা রুখা, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ প্রতিরোধ, প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মামলা হামলা বন্ধ,অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই,রাজনৈতিক সামাজিক মতানৈক্যের অনুধাবন,জবরদখল,জনপ্রতিনিধিদের জনস্বার্থে কাজের অন্তরালে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ঘায়েল করার কৌশল অবলম্বন করছে কিনা এমন অনেক বাস্তবতা অনুধাবন করে কাজ করতে হবে উনাকে।

উনাকে কাজ করতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিচারে ও প্রশাসনিক দক্ষতায়,এলাকাভিত্তিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে,পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সকল শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে।
গত কয়েক মাসের খুন ধর্ষণের চিত্র নবীনগরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে,চারিদিকে গরু চুরির প্রাদুর্ভাব বন্ধে,মাদকমুক্ত নবীনগর গঠনে,বিভিন্ন গ্রাম মহল্লায় প্রায় প্রতিদিনই চুরি রোধে,
সেই সাথে করোনা তান্ডব মোকাবেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।

উনার কাছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ থাকবে সেই সকল পুলিশ সদস্যগণ যারা এতো দিনের লড়াই সংগ্রামে রনোজিত দাদার সহযোদ্ধা ছিলেন।
আমার জানা মতে এখানে বেশ ভালো কিছু অফিসার আছে যারা অত্যন্ত ভদ্র মানবিক সাহসী ও আইনজ্ঞ।
ইহার মধ্যে থাকা অফিসারদের আইডেন্টিফাই করে ডাইনামিক সিদ্ধান্ত নেবেন এমন প্রত্যাশাও থাকবে সুধীজনের।

ইতোমধ্যেই নবীনগর উপজেলায় কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন চলছে।
সেখানে প্রত্যেক এলাকায় পরিচ্ছন্ন মানবিক সামাজিক রাজনৈতিক সাংবাদিক শিক্ষক সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি,যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও দক্ষতার পাশাপাশি মানুষকে মেনেজ করার ক্ষমতা রাখেন এসকল ব্যক্তিদের এই কমিটির সংস্পর্শে আনতে হবে উনাকে।

আমার মনে হয় দলমত নির্বিশেষে আধুনিক সুখী সমৃদ্ধ শান্তির নবীনগর প্রতিষ্ঠায় কমিউনিটি পুলিশিং এর কাজটাকে বেগবান করতে পারলে প্রভাষ চন্দ্র ধর দাদার কাজটা অনেক সহজ হতে পারে।

তারপরও আমি বলতে চাই,নবীনগরে রনোজিত দাদা চলে যাচ্ছেন প্রভাষ দাদা এসেছেন তিনিও হয়তো একদিন চলে যাবে,আবার কেউ আসবে,আমরা সেই ভদ্রলোকের দিকেও তাকিয়ে থাকবো।
এভাবে আর কতদিন ??

কেন যে ভুলে যায় প্রতিদিন আমাদের বাড়ির আঙিনা তো আর অন্য কেউ পরিস্কার করে দিবে না,নিজের আঙ্গিনার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।

এরমধ্যে সরকারের নির্দেশনায় যিনি আসবেন,আবার চলে যাবেন,মাঝখানে কয়দিন সহযোগিতা করতে পারবে।
তাতে কি সম্ভব নিজেদের অবস্থান পরিচ্ছন্ন রাখা ?
আমার শরীরের ব্যথা নিরাময়ের জন্য আমাকেই দাঁড়িয়ে উঠে চিকিৎসা নিতে হবে।
অন্যকেউ হয়তো ধরে দাঁড় করিয়ে দিতে পারবে।

অমুক ওসির এই দোষ তমুক ওসির এইগুণ তা করে কি হবে ??
মাঝখানে নবীনগরের যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই চলছে!
হয়তো আবারও কিছু হবে যদি আপনি আমি একে অপরের সাথে বন্ধন তৈরি করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হই।

আমাদের উপজেলার আয়তন,ভৌগলিক অবস্থান,যাতায়ত ব্যবস্থা,পুলিশের সংকট, রাজনৈতিক ভেলকিবাজদের লিলা খেলা, সাংবাদিকদের অনৈক্য সব মিলিয়ে পুলিশ কতটুকু সফল হবে আমার জানা নেই,তবে এটুকু বলতে পারি পূর্বের চেয়ে ভালো আশা করা ঠিক হবে না।
যদি আমরা সচেতন আন্তরিক আর দায়িত্বশীল না হই।
তবে সার্বিক বিবেচনায় নবাগত ওসি প্রভাষ চন্দ্রধর দাদা যদি পরিবর্তনের হাওয়া লাগাতে পারে সেটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়।

তবে আমাদের উপজেলায় উপদেশ দেয়ার লোক অনেক,রাজনৈতিক নেতার অভাব নেই,সাংবাদিকও প্রায় অর্ধশতাধিক এর উপর।
কিন্তু কাজ করার লোকের ভীষণ অভাব।
দায়িত্ব নেওয়ার লোক পাওয়া দুষ্কর!
কিন্তু যারা এগিয়ে আসার চেষ্টা করে,তাদের কাপড় টেনে ধরার লোকের অভাব নেই।
যদি কাপড় টেনে ধরে ফেরানো সম্ভব না হয়,তবে শুধু তাকে নয় শুধু তার চৌদ্দগুষ্ঠির খবর নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করতে একচুলও বিবেকের দংশন হবে না এমন লোকও আছেন ভুড়ি ভুড়ি।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা রাতারাতি বর্তমান নবীনগরকে শান্তির নবীনগর করতে পারবে না,এই চিন্তা বাদ দিন।
নবীনগরকে শান্তির নবীনগরে ফিরিয়ে আনতে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যদি পুলিশের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে চলি তবে যদি কিছুটা সফল হওয়া যায়।

নয়তোবা পন্ডিতি করে,যুক্তি দিয়ে,বুদ্ধিজীবী বেশে নবীনগরের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরতে পারবো,লোকমুখে বাহ বাহ পাবো,শান্তি পাবো না।
ভালো থাকুক প্রাণের নবীনগর!
নিরাপদে থাকুক নগরের মানুষগুলো!

বিদায়ী ওসি রনোজিত দাদা ও নবাগত ওসি প্রভাষ চন্দ্রধর দাদা দুজনের আগামী দিনগুলোর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো!!

লেখক–
এম কে জসিম উদ্দিন (সাংবাদিক)
সাংগঠনিক সম্পাদক
নবীনগর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি!
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

কোন মন্তব্য নেই