নারায়ণগঞ্জে জোড়া খুন, দুর্ধর্ষ ডাকাতি।

0
30

জি নিউজ ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শুক্রবার দিবাগত রাতে ২ নৈশ্য প্রহরীকে হত্যা করে বন্দরে ২টি ব্যাটারী দোকান ও একটি ব্যাটারী সার্ভিসিং সেন্টার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। লক্ষণখোলা মাদ্রাসা মার্কেটের নিহত নৈশ্য প্রহরীরা হলেন রায়হান উদ্দিন (৬৫) ও আবদুল মোতালেব (৫৫)।

নিহত রায়হান বন্দরের উত্তর লক্ষণখোলা এলাকার মৃত আবদুস সামাদের ছেলে ও মোতালেব বন্দরের চৌরাপাড়া এলাকার মৃত হবি মিয়ার ছেলে। প্রহরীদের হত্যার পর ডাকাতরা তিনটি দোকান থেকে ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩শ’ টাকার মালামাল ও সততা ব্যাটারী মেলা থেকে নগদ ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও বিসমিল্লাহ ব্যাটারী ষ্টোর থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করে। খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

স্থানীয়রা ও ক্ষতিগ্রস্থরা বলছেন, ওই এলাকায় ৪ টি ব্যাটারির দোকান রয়েছে। কিন্তু ডাকাতি হয়েছে ৩ টিতে। পাশেই ডংজিন নামের একটি ব্যাটারি কারখানার অফিস রয়েছে। সেখানে ডাকাতি হয়নি। তাই সন্দেহের তীর তাদের দিকেই। এদিকে ডংজিনের মালিক শিপন স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের চাচাতো সালা। সে এই পরিচয়ে ওই এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

ডাকাতির সময় সিসি টিভি ক্যামেরা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিপন বলেন, তার ক্যামেরা রাতে বন্ধ থাকে। শুধুমাত্র দিনের বেলাতেই চলে। এগুলো আমার কাজের জন্য না। কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন তা আমি কাউকে বলবো না। তিনি আর কোন কথা বলতে রাজি হন নি।

স্থানীয়দের দাবি শিপনের সিসি টিভি ক্যামেরা এবং তার ফুটেজ যাচাই বাছাই করা হোক। এ ডাকাতির সাথে শিপন জড়িত থাকতে পারে। ব্যবসায়িক প্রতিযোগীতার কারনে এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের কারনে শিপনের দিকে সকলের সন্দেহের তীর। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন মন্ডল শিপনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। প্রশ্ন হচ্ছে তবে কেন?

বন্দর থানার ওসি শাহীন মন্ডল জানান, ১০/ ১২ জনের একটি ডাকাত দল লক্ষণখোলা ডংজি লংজিভিটি নামে একটি ব্যাটারী কারখানার অদুরে লক্ষণখোলা মাদ্রাসা মার্কেটে হানা দেয়। ওই সময় মার্কেটে দায়িত্বরত নৈশ্য প্রহরীরা ডাকাত দলকে বাধা দিলে তারা রায়হান উদ্দিন ও আব্দুল মোতালেব নামে ২ প্রহরীকে হাত পা বেধে ইট দিয়ে মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে রায়হান উদ্দিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আব্দুল মোতালেব আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়ে থাকেন। পরে আব্দুল মোতালেবকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শনিবার সকালে মারা যান।

তিনি আরও বলেন, ডাকাতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন অভিযান শুরু করেছি। অচিরেই ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে সততা ব্যাটারী ষ্টোরের মালিক আমির হোসেন বাদী হয়ে বন্দর থানায় ডাকাতি মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি জানান, বন্দর থানার পরিদর্শক ইমরান ঘটনাটি তদন্ত করছেন। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কোন পুলিশ টিম ছিল না।

এলাকাবাসী জানান, শনিবার ভোরে বাজার ঝাড়– দিতে আসেন বাজারের মহিলা পরিচ্ছন্ন কর্মী । এ সময় তিনি দুই নৈশ প্রহরীকে পড়ে থাকতে দেখে বিষয়টি এলাকাবাসীকে অবহিত করেন।

বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক হাজী আলমগীর হোসেন জানান, ডাকাতরা তার দোকান থেকে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।

সততা ব্যাটারী সাভিসের সততা ব্যাটারী সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক আয়নাল হক জানান, তার দোকানের ২ লাখ ৫১ হাজার ৮শ টাকা ও সততা ব্যাটারী মেলার মালিক আমির হোসেন জানান তার দোকানের ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাল লুট হয়েছে।
ডাকাতির ঘটনার সংবাদ পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মইনুল হক দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে তিনি কোন বক্তব্য দেয় নি।

এদিকে ডাকাতির এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি। নিহত দুই নৈশ প্রহরীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা ও নিহতদের পরিবারসহ স্থানীয় এলাকাবাসী এ ঘটনার জন্য পুলিশের কর্তব্যে অবহেলাকে দায়ী করে সুষ্ঠু বিচার দাবী করছেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তারা তুলেছেন প্রশ্ন? পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডাকাতদের শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ডাকাতির খবর পেয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, বন্দর থানার ওসি এ কে এম শাহীন মন্ডল, জেলা ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মনিরুল ইসলাম, খ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম সহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে এ ঘটনার খবর শুনে সকাল থেকেই শত শত এলাকাবাসী এসে ঘটনাস্থলে ভীড় জমান সেখানে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বন্দর এলাকার ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনায়েত হোসেন অভিযোগ করেন, রাতে টহল পুলিশের কোন নজরদারি না থাকায় ঢাকা-মদনগঞ্জ সড়কের মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয়ায় নিয়মিত চুরি ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে চলছে। সর্বশেষ এলাকার দুই বৃদ্ধ নৈশ প্রহরীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন