জি নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি বিষয়ক কোনো অঙ্গীকার নেই। একইসঙ্গে দেশের আইন, নীতি, বাজেট কিংবা দেশের অর্থনীতির মাপকাঠি জিডিপিতেও এই কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির বিষয়টি অনুপস্থিত। যে কারণে বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ নিয়ে প্রকাশিত একটি নীতি পর্যালোচনাপত্রে এমন ফল উঠে এসেছে। একশনএইড বাংলাদেশ-এর তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান এই নীতি পর্যালোচনা পত্রটি ‘একশনএইড-ডিইউডিএস ন্যাশনাল ডিবেট ক্যাম্পেইন ২০১৮’ এর চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘অমূল্যায়িত সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও পুনর্বণ্টন: নীতি ও রাজনৈতিক ইশতেহারের পর্যালোচনা’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান। যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে একজন নারী তার জীবনের প্রায় ১২ বছর রান্নাঘরে কাটিয়ে দেন। ২০১৭ সালে গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় এ কাজে নারীরা দৈনিক সময় দেন ৭.৭৭ ঘণ্টা এবং পুরুষরা ১.৩২ ঘণ্টা। পুরুষের তুলনায় বেশি সময় কাজ করার কারণে নারীরা অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারেন না। মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েন, বাধাগ্রস্ত হয় নারীর ক্ষমতায়ন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। তাই গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও পুনর্বণ্টনের জন্য নীতিগত পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে হবে।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থপ্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এ বিষয়ে বলেন, “গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করা জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন অর্জন করতে পারলে স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন অর্জনের কাজটিও সহজ হবে।বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সবার আগে জরুরি, প্রয়োজন গৃহস্থালি সেবামূলক কাজে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
উপস্থাপিত গবেষণায় দেখা যায়, ঘরের সেবামূলক কাজ অমূল্যায়িত, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয়; কোনো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে এর উল্লেখ নেই, তাই এ কাজের পুনর্বণ্টন ও হ্রাসকরণের জন্য কোনো বিনিয়োগ ও উদ্যোগ নেই। তাই এই বিষয়টি যে কোনো পরিকল্পনায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত এবং তা নারীর জন্য বোঝা হয়েই থেকে যাচ্ছে। যার একটি বড় কারণ রাজনৈতিক অঙ্গীকার অর্থাত্ ইশতেহারে প্রতিফলন নেই।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাসিক উত্তরণের সম্পাদক এবং প্রকাশক নূহ উল আলম লেনিন বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নে যেমন অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে তেমনি নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। এসকল সমস্যা সমাধানে নির্বাচনী ইশতেহারে এবং জাতীয় নারী নীতিতে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর সেটি হলে নারীর ক্ষমতায়ন আরো ত্বরান্বিত হবে। সংলাপে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।