নড়াইল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের বিশাল স্তুপ!

0
25

উজ্জ্বল রায় নড়াইল থেকেঃ এটি কোন জমিদার বাড়ী নয় নড়াইল শহরের প্রাণকেন্দ্র রূপগঞ্জের পাশেই নড়াইল-যশোর সড়ক ঘেঁষে কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল। ওই সড়কটি এশিয়ান হাইওয়েরও অংশ। প্রতিদিন এখান থেকে শত শত যানবাহনে হাজারো যাত্রী যশোর, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। এছাড়া ব্যবসায়িক কারণেও এই স্থানটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই টার্মিনালের সামনের চত্বরে আছে ছোট্ট একটি ডোবা। দীর্ঘদিন থেকে ওই ডোবায় ফেলা হয় আবর্জনা। ডোবা ছাপিয়ে এখন টার্মিনাল চত্বর থেকে সড়ক পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যে কারণে উম্মুক্তভাবে গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়। এ ময়লার দুর্গন্ধে স্থানীয়রা যেমনি চরম দুর্ভোগে, তেমনি বিড়ম্বনায় পড়ছেন হাজারো পথচারী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নড়াইল কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল চত্বর ও তার আশপাশ জুড়ে ময়লার একটি বিশাল স্তুপ পড়ে আছে। নড়াইল জেলা শহরের একমাত্র ময়লার ভাগাড় এটি। নড়াইল শহরের বাসাবাড়ি ও সবগুলো বাজারের সবধরনের আবর্জনা, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ময়লা-আবর্জনা এখানে ফেলা হচ্ছে। এখন থেকে ছড়াচ্ছে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। এলাকার পরিবশেটাই এখন দুর্গন্ধময়। যাত্রী ও পথচারীরা এখান দিয়ে চলা-চল করেন নাক চেপে। স্থানীয় লোকজনের নাভিশ্বাস অবস্থা। বিশেষ করে, পথটি অতিক্রম করার সময় শিশুদেরকে বেশি কষ্ট করতে হয়।
নড়াইল কেন্দ্রিয় টার্মিনাল ঘিরে গড়ে উঠেছে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ মেরামতের ২৪টি কারখানা। দুর্গন্ধের কারণে এ কারখানার কর্মীরা নাকে ও মুখে গামছা বা মাস্ক বেঁধে কাজ করেন। আছে একটি মাত্র চায়ের দোকান। দুর্গন্ধের ফলে সেখানে বসেন না পথচারী, যাত্রী বা স্থানীয় লোকজন। এমনকি দুর্গন্ধ ঠেকাতে টার্মিনালের দোতলায় শ্রমিক কার্যালয়ের দরজা-জানালা বন্ধ করে বসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ময়লার ভ্যানে করে এখানে ময়লা ফেলতে এসেছিলেন শহর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি শ্রমিক বুলবুল ইসলাম ও ইউনুছ শেখ। তাঁরা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে তাঁরা এখানে শহরের ময়লা ফেলছেন। শহরে আর কোনো বিকল্প ভাগাড় নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় যন্ত্রাংশ মেরামত কারখানার মালিক মো.কালাচান বলেন,‘নড়াইল সদর পৌরসভার ময়লাগুলো এনে রাস্তার পাশেই ফেলে চলে যায়। পৌরসভা এলাকার প্রতিদিনের ময়লার রাখতে রাখতে ময়লার বিশাল স্তুপ হয়ে উঠেছে। এতে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে অবস্থানকারীরা মাঝে মাঝেই অসুস্থ হচ্ছেন। যে কারণে অন্যকোনো দোকানপাট এখানে বসে না। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এখানে থাকি।’
স্থানীয় লোকজন ও শ্রমিকেরা জানান, দ্বিতল ভবন তৈরি করে ২০০৪ সালে এ বাস টার্মিনাল চালু হয়। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে পথচারীদের অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। ট্রাক চালক লিটন পাড় বলেন, ট্রাক মেরামতের জন্য বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হয়। দুর্গন্ধে থাকা দায়।’
নড়াইল কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল মসজিদের মোয়াজ্জিন আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘দুর্গন্ধের কারণে মসজিদে বসে থাকা যায় না। এলাকার লোকজনেরও নাভিশ্বাস অবস্থা। এলাকাবাসী বিষয়টি মেয়র ও জেলা প্রশাসনকে বারবার বললেও এর কোনো প্রতিকার নেই।’ জেলা বাস, মিনিবাস,কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘যাত্রীরা এখানে বসবে, দাঁড়াবে দুর্গন্ধের জন্য সে অবস্থা নেই। বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির জুন মাসের সভায়ও তুলেছিলাম। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
নড়াইল কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল চত্বরে ময়লা ফেলার সত্যতা স্বীকার করে নড়াইলের মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ‘ভাগাড় তৈরির জন্য জায়গা পাচ্ছি না। বাইরে জমি কিনে করব, সেক্ষেত্রে নড়াইল পৌরসভার পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। তবু চেষ্টা করছি বিকল্প ব্যবস্থা করতে। সেটি বাস্তবায়িত হলে আর ওই স্থানে উম্মুক্তভাবে ময়লা ফেলানো হবে না।’ জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘নড়াইল শহরে ঢুকতেই এ দৃশ্য দেখছেন বাইরে থেকে আগত লোকজন; এতে জেলা সর্ম্পকে খারাপ ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়া লোকজনের দুর্ভোগতো আছেই। বিকল্প জায়গার অভাব। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন