পাকিস্তান গড়তে ইমরানের মিশন উন্নত দেশের বিস্ময়।

0
21

ক্ষমতাসীন হয়েই একের পর এক বিস্ময়কর কর্ম করছেন পাকিস্তানের নয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমন কিছু কর্মে হাত দিয়েছেন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কেন, উন্নত দেশগুলোতেও বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এতে তিনি বিশ্বজুড়ে নন্দিত ও প্রশংসিত হচ্ছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা তথা ‘নয়া পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠার এই সূচনালগ্নে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ব্যয় সংকোচন নীতি ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত বিশাল বিলাসবহুল বাসভবনে না থেকে সেটিকে গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বাস করবেন মাত্র ৩ কামরা বিশিষ্ট সামরিক সচিবের জন্য নির্ধারিত বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর ৫২৪ জন কর্মচারীর পরিবর্তে মাত্র ২ জন কর্মচারী রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত ৮০টি বিলাসবহুল গাড়ি, ৩৩টি বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং হেলিকপ্টার ও বিমানের পরিবর্তে মাত্র ২টি বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করবেন। অবশিষ্টগুলো নিলামে বিক্রি করে তার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করবেন। গত ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সিনেটের চেয়ারম্যান, জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী, এমপিসহ সরকারের অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিমানের বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন। প্রথম শ্রেণিতে তাদের ভ্রমণ বাতিল। এছাড়া নওয়াজ সরকারের আমলের রাজধানী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ও বাতিল করা হবে। নওয়াজ সরকারের মেট্রোরেল প্রজেক্টের দুর্নীতির তদন্ত করা হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের বিশেষ তহবিলও বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এ তহবিল থেকেই নওয়াজ শরিফ ৫১ বিলিয়ন রুপি ও প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেইন ৯০ মিলিয়ন রুপি খরচ করেছেন। এক ভাষণে ইমরান খান বলেছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বৈদেশিক ঋণ, রফতানি, রেমিটেন্স বৃদ্ধি, বিচার ও নিরাপত্তা বিভাগ প্রভৃতির সংস্কার করা হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগ ও ধনীদের নিয়ম মেনে কর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে কর ফাঁকির জন্য পাকিস্তান বিখ্যাত, মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম লোক নিয়মিত আয়কর দেয়। কিন্তু কর দেয়া দায়িত্ব। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানিয়ে ইমরান বলেছেন, এখন থেকে সবাইকে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতে হবে। তিনি নিজে ১৬ ঘণ্টা কাজ করবেন। আর ব্যয় কমানোর নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শুধু চা পান করান। ইতোমধ্যে সরকার দেশের সরকারি সংবাদ মাধ্যম পাকিস্তান টিভি এবং রেডিও পাকিস্তানকে পুরোপুরি সম্পাদকীয় স্বাধীনতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ফাওয়াদ হোসেন চৌধুরী টুইটারে জানিয়েছেন, তার মন্ত্রণালয় আগামী তিন মাসে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে এখন থেকে আর সরকারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হবে না। পাকিস্তানের ইতিবাচক ছবি তুলে ধরবে তারা।
ইমরান খান পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন গত ১৮ আগস্ট। শপথ অনুষ্ঠানে তার লন্ডন প্রবাসী দুই পুত্র উপস্থিত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ইমরানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা জানিয়েছেন, তার সন্তানদের পিতা তার শপথ অনুষ্ঠানে সন্তানদের উপস্থিত থাকার অনুমতি দেননি। যে কোন পিতার কাছে তার সন্তান সর্বাধিক প্রিয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সন্তান বাৎসল্যকে গুরুত্ব দেননি ইমরান খান। তিনি তার ঐতিহাসিক শপথ অনুষ্ঠানে সন্তানদের উপস্থিত থাকার আকাক্সক্ষা পূরণ করেননি। সম্ভবত ক্ষমতার লোভ-লালসা থেকে সন্তানদের দূরে রাখার লক্ষ্যেই তিনি এটি করেছেন। সন্তানের চেয়ে দেশের প্রতি অধিক ভালোবাসা না থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। স্মরণীয় যে, অক্সফোর্ডে পড়ুয়া ও ক্রিকেট বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার ইমরান সারা জীবন পশ্চিমা সভ্যতায় জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। একদা তিনি প্লেবয় বলেও খ্যাত ছিলেন। তার অতি মোহনীয় চেহারায় অসংখ্য নারী আসক্ত হয়েছিলেন। সেই ইমরান সম্পূর্ণ ইউ টার্ন করে পরম খোদাভিরু হয়ে উঠেছেন। তাই তিনি মহানবী স. এর প্রবর্তিত মদিনার রাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সহসাই তিনি সস্ত্রীক ওমরাহ হজ্ব পালন ও মদিনায় যাবেন বলে জানা গেছে।
ক্রিকেটের মহানায়ক ইমরান ক্রিকেট পাগল পাকিস্তানিদের উজ্জীবিত করার জন্য পাক ক্রিকেটকে ঢেলে সাজিয়ে পুনরায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এতে সহায়তা করছেন ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ী সতীর্থরা। অপরদিকে, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়েও ব্যাপক রদ-বদল করেছেন। পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করে বলেছেন, এখন থেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্তম্ভ হবে, পাকিস্তান ফাস্ট। দ্বিতীয়ত, পার্শ্ববর্তী সব দেশের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। চীনের সাথে সৃষ্ট ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব আরও গভীর করা হবে। সে লক্ষ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সিপিইসি প্রকল্প চালু রাখা হবে। ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ থাকা সাত্তে¡ও ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারে ২৫ আগস্ট ইরান বেতারে প্রকাশ, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক বৈঠকে বলেছেন, পাকিস্তানের জন্য ইরানের গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের প্রধান প্রকল্পগুলোর একটি হচ্ছে ইরান থেকে পাকিস্তানে গ্যাস আমদানির পাইপ লাইন নির্মাণ। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই পাইপ লাইনটি শান্তির পাইপ লাইন হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কিছু দেশের হস্তক্ষেপে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। ইরান চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি পয়েন্ট পর্যন্ত পাইপ লাইন বসিয়েছে। পাকিস্তান অনেক দিন ধরেই গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করছে। সারাদেশে লোড শেডিং রয়েছে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইরানের গ্যাস আমদানি করতে পারলে পাকিস্তানের জ্বালানি সংকট অনেকট

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন