প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হউন বিদেশে বেতন কয়েক গুণ

0
165

প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হউন বিদেশে বেতন কয়েক গুন

ভোয়েসেল এর সাবেক এম ডি আব্দুল হান্নান।
.
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ৯০ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু এশিয়ার অনেক দেশ একই সময়ে এর চেয়েও অনেক কম প্রবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি।
.
উল্টো এ দেশের অদক্ষ অনেক শ্রমিক পদে পদে হয়রানি ও শোষণের শিকার হয়। নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা না থাকায় কম মজুরিতে নিয়োগ, নিচু পদে কাজ করা এমনকি চাকরিচ্যুত হওয়াসহ নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়ে। বিদেশে গিয়ে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে এমন উদাহরণও ঢের। জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো অদক্ষ কর্মী নিতেও আগ্রহী নয়।
‘জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো এখন আর অদক্ষ শ্রমিক নিতে চায় না। আমরা তাদের চাহিদামতো দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তারা শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেবে। অথচ সীমাবদ্ধতা থাকলেও দেশে আছে প্রশিক্ষিত কর্মী গড়ে তোলার সুযোগ। ’ কালের কণ্ঠকে বলছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি বেনজীর আহমদ।
.
দেশের একমাত্র সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হান্নান জানান, প্রবাসে ১০ জন অদক্ষ কর্মী যা আয় করতে পারে, তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারে তিনজন দক্ষ কর্মী।
অন্যদিকে প্রশিক্ষণ না নিয়ে গেলে সারা জীবন শ্রমিকই থাকতে হয়। তাই প্রশিক্ষণ নিয়েই বিদেশে যাওয়া উচিত।
জনশক্তি রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্তত ৩০টি সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য শ্রমিক চেয়ে থাকে বিভিন্ন কম্পানি। সড়ক ও ভবন নির্মাণ, নার্স, গৃহকর্মী, তৈরি পোশাক, রেস্তোরাঁ, ড্রাইভিং, কেয়ারগিভার, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিকস, কাঠমিস্ত্রি, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে দক্ষ শ্রমিকের জন্য নতুন নতুন চাহিদা আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে। কিন্তু সে অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছে না রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ মনে করেন, ‘বিপুলসংখ্যক লোককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার মতো অবকাঠামো বা সুযোগের অভাব আছে দেশে। সরকারিভাবে বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে ৬০টির মতো। এগুলো যথেষ্ট নয়।

সারা দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদেশে কাজের উপযোগী নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এ রকম একটি কেন্দ্র পরিচালনা করে বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. প্রকৌশলী মো. সাকাওয়াত্ আলী জানান, বিদেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বা বৈদেশিক বাজারে চাহিদা রয়েছে এমন সব বিষয়ে বিএমইটির প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। টাইলস ফিক্সিং, রড বাইন্ডিং, শাটারিং, পাইপ ফিটিং, ওয়েল্ডিং ও ফেব্রিকেশন, অটো মেকানিকস, ড্রাইভিং, প্যাটার্ন মেকিং, হাউস কিপিং, কারপেন্ট্রি, মিড লেভেল গার্মেন্ট সুপারভাইজিং, সুইং মেশিন অপারেটিং, ব্লক-বাটিক, ইলেকট্রিক্যাল মেশিন মেইনটেন্যান্স, রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং, সুইং মেশিন অপারেশন্স, মেকানিকসসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এসব কেন্দ্রে। প্লাস্টিক টেকনোলজি, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, গ্রাফিক, ওয়েব ডিজাইন—এ রকম নানা বিষয়েও কেন্দ্রগুলো প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণার্থী যে দেশে যেতে চাইছে, সে দেশের ভাষা শিক্ষারও সুযোগ আছে এসব কেন্দ্রে।
বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বেশির ভাগ কোর্সেই শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় অষ্টম শ্রেণি পাস। ড. প্রকৌশলী মো. সাকাওয়াত্ আলী জানান, নামমাত্র খরচে তিন মাস থেকে শুরু করে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু আছে। সেইপসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ নেওয়ারও সুযোগ আছে। সারা বছরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে সব কেন্দ্রে সব কোর্স নেই। এ বিষয়ে বিএমইটি বা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন