প্রায় ৪শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নরসিংদীর বেলাব কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

0
106

জি-নিউজ পর্যটন ড্রেক্সঃ নরসিংদী আনুমানিক প্রায় ৪শ বছর পূর্বে জমিদারী আমলে বর্তমান নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বাজার সংলগ্ন প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি মসজিদ। যা বর্তমানে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নামে পরিচিত।মসজিদটি যখন প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়, তখনই এটি এলাকার অন্য মসজিদ থেকে একটু ভিন্ন কাঠামোতে প্রতিষ্ঠা হয়।প্রায় ১২ শতাংশ জমির ওপর সাদা চুনের পালিশে মজবুত পিলারে দাড় করানো হয় সাত গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি।

লোক মুখে শোনা যায় কালের সাক্ষী এ মসজিদটির ভেতরে নাকি আগে অলৌকিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত শোনা যেত। ফলে মসজিদটি ” ফজিলতের মসজিদ ” হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে।

ওই মসজিদের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা কে? তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। প্রবীণ এলাকাবাসীর মধ্য থেকে নির্মিত মসজিদটির জমিদাতার নাম জানতে চাইলে কেউ বলেন, বীরবাঘবের গ্রামের জনাব মাহমুদ ব্যাপারী। কারও মতে অন্য কেউ।

তবে মসজিদের খতিব ড. খলিলুর রহমান জানান, তথ্য উপাথ্যের মাধ্যমে আমি জানতে পারি এই মসজিদের মূল জমিদাতা হলেন জমিদার দেওয়ান আব্দুল মান্নান দাদ খাঁনের মেয়ে দেওয়ান আয়শা আখতার খাতুন ।যিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জের হয়বত নগর দেওয়ান বাড়ীর বাসিন্দা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইদগাহ ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার জমিদাতাও তিনি। তিনি ছিলেন হযরত শাহ জালাল ইয়ামানি রহ. এর বন্ধুবর শাহ হামজা ও গভর্ণর শাহ সেকান্দরের উত্তরসূরী।

জমিদারদের গড়ে যাওয়া এ মসজিদটি চুনের প্রলেপে সাদা মসজিদটি হয়ে পড়ে ফেকাশে।বিভিন্ন জায়গায় খসে পড়ে দেয়ালের অংশ। তাছাড়া প্রত্নতত্ত্বের এ নিদর্শনটি দেখতে আসা মুসল্লিদের নামাজের জায়গা ঠিকমত হতো না।অনেক দিন এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থা চলতে থাকলে, ২০০৮ সালে সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেন নরসিংদীর কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক, থার্মেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল কাদির মোল্লা ।

তার উদ্যোগে সংস্কারের ছোঁয়া লাগে মসজিদটিতে । দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের বৃহৎ পাঁচ মসজিদের একটিতে।তবে বর্তমান মসজিদটির অধীনে রয়েছে তিন একর ২৭ শতাংশ জায়গা ।যা তাকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মসজিদ দাবী করার অধিকার দেয়।

বর্তমানে মসজিদটি আট হাজার মুসল্লির নামাজের পরিমাপ করে বানালেও প্রায় ২২০০০ মুসল্লি অনায়াসেই নামাজ পড়তে পারেন।

তাছাড়া প্রায় ৪কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটির সংস্কারক জনাব কাদির মোল্লা সম্প্রতি বলেন, আয়োতন ও নির্মান শৈলিতে এটিকে দেশের শীর্ষ মসজিদের রূপ দিতে তিনি প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন।

বর্তমানে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে হাজারো মুসল্লী নামাজ আদায় করেন।এছাড়া মসজিদটি শুধু এক নজর দেখার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।আর এর পাশে উয়ারী ও বটেশ্বরের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকায় প্রায় সময় বিদেশি পটর্যকগণও দেখতে আসেন।

অসম্ভব সুন্দর এই মসজিদটি আপনি দেখতে যাওয়ার গাইড লাইন বিস্তারিত দেওয়া হলো।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে বামে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে সামনে গেলেই নরসিংদী। ঢাকা থেকে নরসিংদীর দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর থেকে নরসিংদীর বাস পাওয়া যায়। বিভিন্ন পরিবহন ৫ মিনিট পর পর নরসিংদীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা (যদি জ্যাম না থাকে)। ভাড়া ৮০ টাকা থেকে শুরু করে পরিবহন ভেদে ১০০ টাকা পর্যন্ত লাগবে। ট্রেনেও নরসিংদী যেতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নরসিংদী যেতে ট্রেনে সময় লাগে ১ ঘণ্টার মতো, ভাড়া ৫০ টাকার মতো।
এরপর নরসিংদী জেলা সদর থেকে বেলাব উপজেলা পৌছাতে জনপ্রতি বাস ভাড়া ২৫ টাকা/সিএনজি ভাড়া ৩০টাকা । বেলাব উপজেলা সদর থেকে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত রিক্সায় জনপ্রতি ভাড়া ১০টাকা ।

থাকা খাওয়া সুব্যবস্থা আছেঃ

ঢাকা থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দিলে বিকেল বা সন্ধ্যা অবদি ঘুরে আপনি আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারবেন।

কোন মন্তব্য নেই