প্লাস্টিকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবশরীর,প্রতিদিন প্লাস্টিক খাচ্ছে মানুষ;

0
42
জি নিউজ ডেস্কঃ বিজ্ঞানীরা এবারই প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন প্লাস্টিকের কারণে ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবশরীর। প্রতিদিন মানুষ যা খাচ্ছে এবং পান করছে, তাতে থাকছে ক্ষুদ্র সব প্লাস্টিক কণা। এত দিন প্লাস্টিক নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তাতে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু নতুন এই গবেষণায় বলা হচ্ছে, নিয়মিত প্লাস্টিককণা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে এবং এর কিছু অংশ স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছে মানবশরীরে।সম্প্রতি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা এবং এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি অস্ট্রিয়ার একদল গবেষক যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও রাশিয়ার বেশ কিছু অংশগ্রহণকারীদের ওপর গবেষণা চালায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের শরীরেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় পলিপ্রোপাইলিন এবং পলিইথিলিন টেরেপ্যাথেলেট (পিইটি) নামক প্লাস্টিককণা। আর এই দুটি কণাই খাবার এবং প্লাস্টিক বোতলে বিদ্যমান।গবেষকদলের প্রধান ড. ফিলিপ শ্যাবেল বলেন, প্লাস্টিক যে মানুষের অন্ত্রে প্রবেশ করছে, তা এ গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে। বিশেষত পরিপাকতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা সহজেই রক্তপ্রবাহে এবং লসিকানালিতে প্রবেশ ছাড়াও লিভারকে আক্রান্ত করতে পারে। পরবর্তী সময়ে মানবশরীরে এ প্লাস্টিককণার ভয়াবহতা নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মলেও প্লাস্টিককণা পাওয়া গেছে। সামুদ্রিক মাছ খায় এমন ব্যক্তিদের শরীরেও এই কণা পাওয়া যায়, কারণ সমুদ্রেও প্লাস্টিকের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মাছেরা। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত প্লাস্টিকের দুই থেকে পাঁচ শতাংশ সমুদ্রে ফেলা হয়। গবেষণা বলছে, গড়ে একজন ব্যক্তির শরীরে ৫০ থেকে ৫০০ মাইক্রোমিটার আয়তনের মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। খাবার প্রক্রিয়াজাত থেকে প্যাকেট করা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয়। ফলে খুব সহজেই প্লাস্টিক খাবারে প্রবেশ করে। আজ পর্যন্ত বিশ্বের কোনো খাবার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানই মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয় না।তবে গবেষকরা বলছেন, এখনো হয়তো বিশ্বের সব উৎসই প্লাস্টিক দ্বারা সংক্রমিত হয়ে যায়নি। কিন্তু যে হারে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও বণ্টন বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাতাসেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যেতে পারে।গ্রিনপিস যুক্তরাজ্যের সিনিয়র সদস্য লুইস এজের মতে, বিশ্বে ইতোমধ্যে প্লাস্টিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সরকারগুলোর অবিলম্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের এক রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের ৮০ শতাংশ খাবার পানিতে ইতোমধ্যে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার গবেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট খাবার পানির ৯৩ শতাংশেই প্লাস্টিক পাওয়া যায়; যেখানে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে তা ৭২ শতাংশ। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর ভয়াবহতা অনেক বেশি।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন