বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক পরিবারের বিরুদ্ধে
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা।
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
সমাজের নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষের ন্যায় বিচারের জন্য সাহসী সাংবাদিক মুজাহিদ একটি পরিচিত নাম। প্রতিদিনের মতো পেশাগত দায়িত্ব পালন করে বাসায় ফিরছিলেন। ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হন সংবাদকর্মী মুজাহিদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটায় এই হামলার ঘটনা ঘটে গাজীপুরের শ্রীপুর চৌরাস্তায়। মুজাহিদের ডাক চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে থেকেই মুজাহিদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে যুক্ত হয়ে, গাজীপুর ৩ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এই হামলার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবি করেন। লাইভে তিনি চিৎকার করতে করতে অভিযোগ করেন, গত কিছু দিন আগে বৈরাগীর চালায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোল্লার নেতৃত্বে যে জমি দখলের ঘটনা ঘটে, সেটা নিয়ে নিউজ করায় তার উপর হামলা করা হয়েছে। তিনি হামলা কারীদের নেতৃত্ব দেয়া সাইফকে নূরে আলম মোল্লার পালিত সন্ত্রাসী বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে মোজাহিদকে ফোনে হুমকি দেয়ার ঘটনায় সন্ত্রাসী সাইদের বিরুদ্ধে ২৭ জুলাই শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও মোজাহিদ তার লাইভে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কে এই সন্ত্রাসী সাইদ! খবর নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী সাইদের পিতা একজন জামাতে ইসলামের সক্রিয় নেতা। তার বড় ভাই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। সরকার বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে সে যুক্ত রয়েছে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার মাধ্যমে। সাইদ নিজেও একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলো। ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি হওয়ার পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়। সাইদ তার বহিরাগত সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্রের মহরা দিয়ে পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলো বছর খানেক আগে। তারপর থেকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোল্লার জমি জবর দখলে তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। সেই সাথে এমপির ডানে বামে তাকে বিভিন্ন সভা সমাবেশে প্রায়ই দেখা যায়।
ঘটনা স্থলে উপস্থিত সংবাদকর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি মাহবুব আলমের আমন্ত্রণে মুজাহিদ সহ আরও কয়েকজন স্বাধীন হোটেলে খাবার খেয়ে সকলে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। হোটেল থেকে বের হয় মুজাহিদ তার বাইক নিয়ে রওনা দেয়। চৌরাস্তা মোড়ে এলে মোজাহিদের গাড়ির গতিরোধ করে হামলা করা হয়। হট্টগোল শুনে তিনি দৌড়ে এসে দেখতে পান, ১৫ থেকে ২০ জন মুজাহিদের উপর চড়াও হয়েছে। মুজাহিদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে, এলোপাতাড়ি মারপিট চলছে। সাইফ তার হাতে থাকা ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মুজাহিদকে পেটাচ্ছে। তিনি দৌড়ে এসে ব্যাট সহ সাইফকে সরিয়ে দেন। সাথে সাথে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। লোকজন দেখে সন্ত্রাসীরা পশ্চিম দিকে চলে যায়।
এর পরই মুজাহিদ আহত অবস্থায় লাইভ শুরু করেন এবং লাইভ শেষ করেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। উপস্থিত কয়েকজন সহ তিনি সেখান থেকে মুজাহিদকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হামলায় মুজাহিদ মাথায় প্রচন্ড আঘাত প্রাপ্ত হন, তলপেটে এবং কোমরে ব্যাটের আঘাতে প্রচন্ড রকম জখম হন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর মুজাহিদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাতেই শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও মুজাহিদের সাথে থাকা মোটর সাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে উপস্থিত হন হিউম্যান রাইটস এন্ড প্রেস সোসাইটির সভাপতি এবং আমার প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুব আলম। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো সংবাদ যদি কারও ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে তবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়, এভাবে কাপুরুষের মতো হামলা করা হবে কেন? এই হামলার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে হামলার স্বীকার সাংবাদিক মুজাহিদের লাইভটি মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম মোল্লার বক্তব্য নিতে তাকে ফোন করা হয়, রিং হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। সাংবাদিক নেতাদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তীতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয় আহত সাংবাদিক মুজাহিদের পক্ষ থেকে।