বরবটি চাষে কৃষকের জীবন পরিপাটি !

0
46

এম হায়দার চৌধুরী, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) :: শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চাষি গিয়াস উদ্দিন বরবটি চাষ করে জীবনকে পরিপাটি করে সাজিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিনের সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে অন্যান্য চাষিরা তাকে অনুসরণ করতে আগ্রহী। বরবটি একটি নানাবিধ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দেশের জনপ্রিয় সবজি। এ সবজি সারা বছরই চাষ করা যায়। আমিষ সমৃদ্ধ এ সবজি বিভিন্ন প্রকারে রান্না করে খাওয়া যায়। সীম গোত্রের সবজি বরবটি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও ফলানো যায়। ভাজি , ভর্তা, তরকারি সবকিছুতেই সমান উপযোগী ও সুস্বাদু। বিভিন্ন ধরনের বরবটির জাত দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- বিএইউ বরবটি-১, কেগর নাইটি, চীনা বরবটি, ফেলন, লালবেনী, ঘৃত কুমারী, গ্রীন লং, তকি, বনলতা ইত্যাদি। তবে কেগরনাটকী নামে একটি উন্নত জাতের বরবটি অনেক দিন পর্যন্ত চাষ হয়ে আসছে। কেগরনাটকী জাতটি পৌষ এবং মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। বরবটির উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে কেগরনাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জগতপুর গ্রামের মোছলেম উদ্দিনের পুত্র কৃষক গিয়াস উদ্দিন। তিনি বরবটি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এক ছেলে ও তিন মেয়ের পিতা গিয়াস উদ্দিন দুইবার মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েও জীবনের চাকা ঘুরাতে পারেননি তাই দেশে ফিরে এসে সবজি চাষ শুরু করেন। শুরুতে এক মৌসুমেই তিনি লাখ টাকার সবজি বিক্রি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক গিয়াস উদ্দিন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করে সফল হয়েছেন। লাভজনক কৃষি কাজ করে সংসারের ভরন পোষণের পাশাপাশি ছেলেকে বিদেশে পাঠানো এবং দুই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে পেরেছেন। বাড়িতে পাকা বসতঘর নির্মাণ করে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। তার এ অভাবনীয় সাফল্যে নড়েচড়ে বসেছেন অনেকে এবং তার দেখানো পথে অন্যরাও সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গিয়াস উদ্দিনের খামারে উৎপাদিত টমেটো, লাউ, বেগুন, করল্লা, শশা, বরবটি ইত্যাদি কেমিক্যাল মুক্ত হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তিনি একই জমিতে বেশি ফলন ও সারাবছর ফলন পেতে সাথী জাতের ফসল চাষ করেন। এলাকার পাইকাররা তার ক্ষেত থেকেই সবজি কিনে নিয়ে যায়। তার নিজের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় বর্গা নিয়ে ৪০ শতক জায়গার উপর বরবটি চাষ করেন। এর আগে একই জায়গায় টমেটো চাষেও লাভবান হয়েছেন। তিনি এখন প্রতিদিন ৪-৫ মণ বরবটি বিক্রি করেন। প্রতিকেজি বরবটি পাইকারি বিক্রি করেন ১৮-২০ টাকা। পুরো জমিতে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। তবে এবার বরবটি বিক্রি হবে লাখ টাকার।
কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুই বার বিদেশে গিয়েও কিছু করতে পারিনি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে সফল হয়েছি। আমাকে সব সময় বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন কৃষি অফিসের লোকজন। আমার উন্নতি দেখে অনেকেই বিভিন্ন সবজি চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন। কেউ আমার কাছে পরামর্শ চাইলে সহযোগিতা করে থাকি।’

শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘চাষি গিয়াস উদ্দিন কৃষকদের আইডল। আমাদের কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় তিনি বরবটি চাষ করেছেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) সুকান্ত ধর বলেন, গিয়াস উদ্দিন একজন সফল চাষি। তিনি কৃষি কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করি। তাকে স্থানীয় বীজ উৎপাদন উদ্যোক্তা হিসেবে কৃষি অফিস থেকে বাছাই করা হয়েছে।’

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন