জি নিউজ ডেস্কঃ গফরগাঁও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গফরগাঁও শাখায় এক গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসেব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একটি চক্র নিজেরাই চেক বই ইস্যু ও সংগ্রহ করে এবং চেকে ভুয়া স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হতদরিদ্র রিকশাচালকের সারা জীবনের সঞ্চয় হাতানোর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ব্যাংক গ্রাহকদের মাঝে। গফরগাঁও উপজেলার যশরা ইউনিয়নের আঠারদানা গ্রামের আরফান আলীর ছেলে পরিশ্রমী রিকশাচালক মো. বাচ্চু মিয়া তার একমাত্র কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাটির ব্যাংক কিনে তাতে টাকা জমাতেন। জমানো টাকার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গফরগাঁও শাখায় তার নামে একটি সঞ্চয়ী হিসেব খুলেন। চলতি বছরের শুরুতে বাচ্চু মিয়া একাউন্টে কত টাকা জমা হয়েছে জানার জন্য ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করলে, শাখা ব্যবস্থাপক জানান, ৯৯ হাজার টাকা জমা হয়েছিল, লাভসহ তা বেড়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৪’শ ২ টাকা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২১ মে তারিখে এই একাউন্ট থেকে একটি চেকে ১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তার নামে চেক বই কে তুলল কিংবা চেকে কে স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করল এ রকম ঘটনায় হতবিহবল বাচ্চু মিয়া তার কষ্টে অর্জন করা টাকা উদ্ধারের জন্য গত চার-পাঁচ মাস যাবত্ ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ এই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোরাঘুরি করছেন, তাদেরকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাচ্চু মিয়া তার সঞ্চয়ী হিসেবের বিপরীতে হিসেব খোলার পর থেকে এখন পর্যন্ত চেক বই ইস্যুর জন্য কোনো আবেদনই করেননি। বাচ্চু মিয়া আবেদন না করলেও ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একটি চক্র বাচ্চু মিয়ার সঞ্চয়ী হিসেবের বিপরীতে গত ২১/০৫/২০১৫ তারিখে একটি চেক বই ইস্যু করে এই তারিখেই এ একাউন্ট থেকে স্বাক্ষর জাল করে ১ লাখ টাকা উত্তোলন করে। ইস্যুকৃত চেক বইয়ে বাচ্চু মিয়ার পিতার নাম আরফান উদ্দিনের বদলে ফয়েজ মিয়া লেখা হয়েছে। উত্তোলনের সময় ব্যবহূত চেকে লেখাগুলোও এই শাখায় ওই সময়ে কর্মরত একজন ব্যাংক কর্মকর্তার। বাচ্চু মিয়া জানান, ব্যাংকের লোকজন গত কয়েক মাস ধরে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেও ফেরত দিচ্ছে না। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান খান স্বীকার করে বলেন, বাচ্চু মিয়ার চেক বই উত্তোলনের কোনো আবেদন বা কাগজপত্র ব্যাংকে নেই। ওই সময়ে ব্যাংকে কর্মরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ময়মনসিংহের মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পান্ন লাল কর্মকার জানান, বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করা যায় দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। উল্লেখ্য, উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের প্রবাসী খায়রুল ইসলাম ২০১৫ সালে এই ব্যাংকে একই রকম প্রতারণার শিকার হন। ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসে দৈনিক ইত্তেফাকে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খায়রুল ইসলামকে টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।