প্রতিবারই বিশ্বকাপ ফুটবল এক একটি দিন এক একটি অঘটনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। টপ ফেভারিট দলগুলো তাদের সেরা খেলা প্রদর্শন করেন শেষ রক্ষা করতে পারে না। গত ২৯ জুন ২০১৮ ইং তারিখে আজকের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত ষোল দলের মধ্যকার খেলা হতে আমার নির্বাচিত আট দলের মধ্যে ছয়টি দলই নক আউট পর্ব পেরিয়ে সেরা আট দলে স্থান করে নিয়েছে। নক আউট পর্বে ফেভারিট দল আর্জেন্টিনা ফিফা রেংকিং পাঁচ নম্বরে অবস্থান করেও জাগুয়ার সাত ফ্রান্সের সাথে খেলায় ভালো পারদর্শিতা দেখিয়েও কোটি কোটি ভক্তদের হতাশ করে বিশ্বকাপ আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আর্জেন্টিনা রক্ষনাত্মক খেলায় তেমন পারদর্শিতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রায় খেলাতেই তারা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ডি বক্সের ভেতর ফাউল করে ফ্রি কিকে গোলের সুবিধা করে দিয়েছে; যা তাদের মত টপ ফেভারিট দলের কাছ থেকে মোটেই আশা করা হয়নি। বিশেষ করে লিওলেন মেসি ভক্তদের কাঁদিয়ে আর্জেন্টিনা নক আউট পর্ব থেকে আশাহত করে বিদায় নিয়েছে।
এবার দেখা যাক ফিফা রেংকিং যে সমস্ত দলগুলো কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের নাম লিখিয়েছে তাদের খেলার মান ও দক্ষতায় রেংকিং এ কে কত নম্বরে আছে। হট ফেবারিট ব্রাজিল ২, বেলজিয়াম ৩, ফ্রান্স ৭, ইংল্যান্ড ১২, উরুগুয়ে ১৪, ক্রোয়েশিয়া ২০, সুইডেন ২৪ এবং রাশিয়া ৭০ নম্বরে। সর্বশেষ রেংকিং এর দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও রাশিয়ার আছে দৃঢ় মনোবল, আত্ম প্রত্যয় এবং মাঠের দর্শকদের সমর্থনে কতদূর যেতে পারে তা দেখার বিষয়। এবার বিশ্বকাপে রেফারির কার্যকলাপ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও খেলা এমনই হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেফারির দলগত সমর্থনের কারণেও পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে। যাই হোক শেষ আটের লড়াইয়ে সকল দলই শক্তিশালী ভাবতে হবে এখানে কেউ কাউকে ছাড় দেবার পাত্র নয়। বলে না পারলেও বল খাটিয়েও একটি দল জয়লাভ করতে পারে। সে যাই হোক খেলা তো খেলাই তবু কিছুটা প্রভাব সকল সময়ই দেখা যায়।
বিশ্বকাপে ফেভারিট দল ফ্রান্স ফিফা রেংকিং ৭ এ থাকলেও দিগুণ ১৪ রেংকিং এ থাকা উরুগুয়ে ছাড় দিয়ে খেলা খেলবে না। ফ্রান্সের সকল খেলোয়াড়ই ভাল ফুটবল খেলে। তারপরও কিছু খেলোয়াড় আছে যারা ব্যতিক্রম। তাদের ক্রীড়া নৈপূণ্য অসাধারণ এদের মধ্যে উলেখ্যযোগ্য কিলিয়ান এমবাপে, আয়োয়ান গ্রিজম্যান ও পল পগবা। যারা ভাল খেলা উপহার দিয়ে থাকে। অপরদিকে যে দলটির সাথে দেখা হবে সেটি হচ্ছে উরুগুয়ে। তাদের দলটিও তারকা সমৃদ্ধ খেলোয়াড় নিয়েই দলটি গঠিত হয়েছে; তাদের মধ্যে ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি খেলায় দারুন নৈপূণ্য দেখিয়ে থাকে। দু’টি দলের খেলোয়াড়গণ ভাল ফুটবল খেলে। তবে খেলায় জেতার দিক থেকে ফ্রান্স এগিয়ে থাকলেও উরুগুয়ে ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। যদি না পারে তবে উরুগুয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল হতে ছিককে যেতে পারে।
বিশ্বকাপে রাশিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া খেলায় কি যাদু দেখিয়ে রাশিয়া সেরা চার দলে নাম লেখাবে সেটি ভাবতে অবাক লাগে। তারপরও ভাগ্য যদি ভাল হয় তবে এক লাথিতেও গোল হয়। দেখা যাক কি ঘটে রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার খেলায়। এ খেলাটি যে রেফারি পরিচালনা করবেন তিনি বিশেষতঃ পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে ক্রোয়েশিয়ার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে নাও পারে। ফিফা রেংকিং ২০ এ থাকা ক্রোয়েশিয়া মানসিক বাড়তি চাপ না নিয়ে ৭০ এ থাকা রাশিয়াকে টপকে সেরা চারে নাম লেখানোর যোগ্যতা রাখে। ক্রোয়েশিয়া কিছু ব্যতিক্রমী খেলোয়াড় আছে যারা খেলার ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। তাদের ক্রীড়া নৈপূণ্য অসাধারণ এদের মধ্যে উলেখ্যযোগ্য লুকা মোদ্রিচ এবং ইভান রাকিটিচ, যাদের খেলা দর্শকগণ দেখার অপেক্ষায় থাকে। রাশিয়া দলের মধ্যে আলেকজেন্ডার গলোভিন ভাল খেলা প্রদর্শন করে থাকে। ভাগ্যের চাকা কার দিকে আছে সেটি খেলার দিনই দেখা যাবে মাঠে।
এবার বিশ্বকাপে টপ ফেভারিট দল ব্রাজিল তাদের দলটি সকল খেলোয়াড়ই ভাল ফুটবল খেলে। তারপরও কিছু কিছু খেলোয়াড় আছে যাদের একটু সমীহ করে দেখে। ব্রাজিল দলের এক ঝাঁক তারকা সমৃদ্ধ খেলোয়াড় নিয়ে হলেও নেইমার জুনিয়র, অ্যালিমন, ফিলিপ কুতিনহো এবং এলিসন ভাল খেলে থাকে। অপরদিকে যে দলটির সাথে দেখা হবে সেটি হচ্ছে বেলজিয়াম। তারাও তারকা সমৃদ্ধ খেলোয়াড় নিয়েই দলটি গঠিত হয়েছে; তাদের মধ্যে ফরোয়ার্ড রোমেলু লুকাকু এবং মিডফিল্ডার ইভেন হ্যাজার্ড খেলার ক্ষেত্রে দারুন নৈপূণ্য দেখিয়ে থাকে। দু’টি দলের খেলোয়াড়গণ ভাল ফুটবল খেলা দেখাতে পারবে এটি দর্শকদের একান্ত বিশ্বাস। তবে আমার মতে ব্রাজিল তাদের সেরা নৈপুণ্য দেখাতে না পারলে কোয়ার্টার ফাইনাল হতে বিদায় নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগণিত দর্শক হতাশায় খেলা দেখা হতে বিরত থাকবে।
এছাড়া বিশ্বকাপে টপ ফেভারিট দল ইংল্যান্ড রেংকিং ১২ এবং প্রতিপক্ষ সুইডেন রেংকিং ২৪ কাকতালিয়ভাবে দ্বিগুণ। তারপরও খেলার মাঠে রেংকিং হিসাব করে কেউ পুরো খেলা খেলতে পারে না। তবে ইংল্যান্ড দলটির সকল খেলোয়াড়ই ভাল ফুটবল খেলে। তারপরও কিছু কিছু খেলোয়াড় আছে যাদের নাম থাকে মুখে মুখে। এদের মধ্যে ইংল্যান্ড এর মধ্যে রয়েছে হ্যারিক্যান ও জ্যামি ভার্ডি এবং সুইডেন দলের মধ্যে ভালো খেলোয়াড় হচ্ছে ফরোয়ার্ড খেলোয়াড় মার্কোস বার্গ, এমিল ফোর্সবার্গ ও গোল কিপার রবিন ওলসন। দু’টি দলের খেলোয়াড়গণ ভাল ফুটবল খেলা দেখাতে পারবে এটি দর্শকদের একান্ত বিশ্বাস। তবে আমার মতে ইংল্যান্ড তাদের সেরা নৈপুণ্য দেখাতে না পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়লাভ নাও করতে পারে। দেখতে থাকুন বিশ্বকাপ ফুটবল এবং তারপর-
নাজমুল কবির, কবি ও লেখক।