ভয়ংকর ডিজিটাল প্রতারক গ্রেফতার

0
48

সিপিএ মার্কেটিং এর আড়ালে Rex IT Institute এর শত কোটি টাকার প্রতারনার মূলহোতা সাইবার পুলিশ সেন্টার(সিপিসি), সিআইডি কর্তৃক গ্রেফতার।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) বাংলাদেশ পুলিশের একটি নতুন ইউনিট যা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারনা ও অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, Rex IT Institute এর স্বত্বাধিকারী মোঃ আব্দুস সালাম পলাশ, পিতাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন, মাতাঃ সালেহা আক্তার, স্থায়ী ঠিকানাঃ কল্যানপুর সদর, লক্ষ্মীপুর তার প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারনার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
Rex IT Institute আউট সোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে। এ সব প্রশিক্ষনের আড়ালে চলে বড় ধরনের প্রতারণা। ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এ প্রতিষ্ঠানের বিং পেইড মার্কেটিং এর প্রচারনা চালাতো। যে কোন প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এ প্রতিষ্ঠানে পেইড মার্কেটিং এ বিনিয়োগ করলে ৫০% হতে ১০০% পর্যন্ত রিটার্নের অবিশ্বাস্য অফার দেয়া হতো যা বাস্তবে অসম্ভব। তার এ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহস্রাধিক প্রশিক্ষনার্থীদের ট্রেনিং এর পাশাপাশি এ ধারনা ঢুকিয়ে দেয়া হতো। প্রশিক্ষনার্থীরাও মনে করতো যে কোন আউট সোর্সিং এর কাজের থেকে এ কাজে ১৫ থেকে ২০ গুন বেশি লাভ পাওয়া যাবে তাই তাদের একটি বিশাল অংশ এ লাভের আশায় বিভিন্ন ভাবে টাকা সংগ্রহ করে এখানে বিনিয়োগ করে। এছাড়াও ক্যাম্পেইনের কথা ছড়িয়ে দেয়া হলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে। এভাবে Rex IT Institute এর সত্বাধিকারী আব্দুস সালাম পলাশ প্রতারনার মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থী ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
Rex IT Institute এর ডিজিটাল প্রতারণার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছে থেকে অভিযোগ পেয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) গোপনে খবর নিয়ে তথ্যের সত্যতা পায়। আসামী আব্দুস সালাম পলাশ বিভিন্ন ভিকটিমদের বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত দেয়ার চাপের কারনে প্রায় দের মাস আগেই গা ঢাকা দেয়। সে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য তার ঠিকানা সে গোপন করে যায় ও খুব দ্রুত সে তার ফোন নম্বর পরিবর্তন করে ফেলতো। কিন্তু সে প্রায়ই ফেসবুকে লাইভে এসে নতুন নতুন প্রজেক্ট ও সব বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষনীয় অফার ও দেশের বাইরে বেড়াতে যাবার প্রচারনা চালাতো। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গ্রাহকদের নজর এড়ানোর জন্য কয়েকদিন আগে গভীর রাতে সে তার বাসাও পরিবর্তন করে ফেলে। এরকম প্রতারনার শিকার একজন ভিকটিম গত ১০/০৫/২০১৯ তারিখে Rex IT Institute এর সত্বাধিকারী মোঃ আব্দুস সালাম পলাশ এর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় প্রতারনা, ডিজিটাল প্রতারনা ও মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করে। পরবর্তিতে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) এর সার্বিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম তালুকদার ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা এর নেতৃত্বে সিপিসির একটি চৌকশ টিমঐ দিন দিবাগত রাত ১০.৩০ ঘটিকায় তাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্লাট হতে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় তার ফ্লাট ও পরবর্তিতে Rex IT এর ধানমন্ডির অফিস হতে ১টি টয়োটা সেলুন কার (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯-০০১৭), নগদ ছয় লক্ষ একাত্তর হাজার টাকা,প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৫টি ল্যাপটপ, কম্পিউটারের ৩টি হার্ড ডিস্ক ও বিপুল পরিমানে ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, প্রথমে ফ্রি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে আগ্রহীদের নিয়োগ করা হতো, পরবর্তিতে তাদের পেইড মার্কেটিং এ ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তাদেরকে বলা হতো পেইড মার্কেটিং করার জন্য তাদের পেপাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সহ কার্ড থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু পেপাল এর কার্যক্রম নেই তাই তারা এখনই সরাসরি মার্কেটিং করতে পারবে না। যেহেতু আব্দুস সালাম পলাশ দীর্ঘদিন থেকে এ পেশার সাথে জড়ীত তাই তার আমেরিকান একাউন্ট রয়েছে, তার মাধ্যমেই ক্যাম্পেইন চলবে। তাদের সন্দেহ দূর করার জন্য ADVERTEN Gold নামে একটি সাইট তৈরি করে যা দেখতে অরিজিনাল ADVERTEN এর মত। ভিকটিমদের কে বলা হয় ADVERTEN আব্দুস সালাম পলাশ এর কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এ সাইট তৈরি করে দিয়েছে যেখানে সব ভিকটিমদের আলাদা সাব একাউন্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। এখানে ভিকটিমরা দেখতে পারে যে সে কত টাকা ক্যাম্পেইন বাবদ প্রদান করেছে ও ক্যাম্পেইনের শেষে সে কত পাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ সাইটে কোন ক্যাম্পেইন ই হতো না, সবাইকে মনগড়া একটি হিসাব দেখানো হতো। প্রথম যারা আসতো তাদেরকে বেশি বেশি লাভ দেখানো হতো ও ক্যাশে তাদের পেমেন্ট দিয়ে দেয়া হতো ফলে তারা আরো বেশি টাকা নিয়ে এসে এখানে ইনভেষ্ট করতো। পরবর্তিতে টাকার পরিমান বেশি হয়ে গেলে তাদের আংশিক পেমেন্ট দেয়া হতো আর বলা হতো বাকি টাকা রি-ইনভেষ্ট করা হয়েছে। আসলে সে কোন মার্কেটিং না করে এমএলএম ব্যবসার মত কেবল মানুষের কাছে থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে অন্যদের লাভ প্রদান করতো। অনেকে তার এ প্রতারনার ব্যপারটি বুঝতে পারলে সে গা ঢাকা দেয়।
মোঃ আব্দুস সালাম পলাশ এর জন্ম ০১.০১.১৯৯২ কল্যানপুর, চন্দ্রগঞ্জ, লক্ষীপুর। সে সোনাইমুড়ী হাইস্কুল থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি ও ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ, বসুন্ধরা শাখা থেকে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তিতে ধানমন্ডী চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেজ ধানমন্ডিতে সিএ পড়া শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। ২০১০ সালে সে আউটসোর্সিং এর কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালে সে আইটি ভিশন এ ট্রেনার হিসেবে ৯ মাস কাজ করে। পরবর্তিতে ২০১৭ সালের মে মাসে সে এবং তার কয়েকজন পার্টনার Rex IT Institute প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমে Rex IT Institute ট্রেনিং করালেও পরবর্তিতে পলাশ উক্ত প্রতারণার সাথে জড়ীয়ে পরে।

জব্দকৃত আলামতঃ
১. ১টি টয়োটা সেলুন কার (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯-০০১৭)
২. নগদ ছয় লক্ষ একাত্তর হাজার টাকা
৩. প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৫টি ল্যাপটপ ও ৩টি হার্ড ডিস্ক
৪. বিপুল পরিমান ব্যাংকিং ও নন ব্যাঙ্কিং কাগজপত্র।
ধানমন্ডি থানার মামলা নং ৩, তারিখ ১১/০৫/২০১৯, ধারা- ৪০৬/৪২০/১০৯ পিসি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩ (২), ২৪ (২) সহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪ (২) ধারায় করা মামলাটি বর্তমানে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) তদন্ত করছে। এর সাথে জড়ীত অপরাপর আসামীদের তথ্য প্রদান করে সহায়তা করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন