মাদক শুধু নেশা নয় অভিশাপ জিবন থেকে নেয়া বাস্তব ঘটনা

0
57
জি নিউজ ডেস্কঃ ঢাকা গতকালকের ঘটনা। রাত তখন ১০টার মতো বাজে। উত্তরা জসিম উদ্দিন রোডে কেএফসির সামনে দিয়ে হাটছি। দেখলাম, দুটো শিশু ফুটপাতে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। রাতে যে কিছুই খায়নি বোঝাই যাচ্ছে। মানুষজন উঁকি দিয়ে দেখছে আর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটু ঝুঁকিপূর্ণই মনে হলো। অসচেতনভাবে কারো পায়ের চাপে বড়ো ধরনের ক্ষতিও হতে পারে ঘুমন্ত শিশুদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি আরো একটি শিশুকে কোলে নিয়ে পাশে বসলেন এক নারী। ঘুমন্ত শিশুটিকে টেনে ওঠালেন। কিন্তু ঘুমে শিশুটি যেন অচেতন। জিজ্ঞেস করলাম, এই শিশুগুলো কার? কেঁদে কেঁদে নারীটি জানালো, তারই। স্বামী টাঙ্গাইল থেকে টঙ্গিতে এনে বাসা ভাড়া করে রেখেছিলেন তাদের। বেশ কয়েকদিন হয় নেশাখোর স্বামী তাদেরকে রেখে চলে গেছে। তিনটি শিশু নিয়ে এখন দাড়ে দাড়ে ঘুরছে। টঙ্গি থেকে হেঁটে হেঁটে উত্তরায় এসে ভিক্ষে করছে। আবার রাতে নাকি সেভাবেই ফিরবে। জানালো, ভিক্ষের একশ টাকা ইতিমধ্যে হারিয়েও ফেলেছে মেয়েটি। হাতে অল্প কিছু টাকা আছে দেখলাম। অপর ছোট শিশুটি পাউরুটির কিছু অংশ ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাচ্ছে। অথচ রাতের খাওয়া শেষে তাদের আরামে ঘুমানোর কথা! বিবেকের কাছে দারুনভাবে পরাজিত হলাম। কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। এ বয়সী আমাদেরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ঈদের মৌসুমে অনেকেই নানা নাটক সাজিয়ে ভিক্ষে করে। কিন্তু এখানে তা মনে হলো না। তাছাড়া শিশুদের সঙ্গে নারীটির চেহারারও দারুন মিল। প্রফেশনাল ভিক্ষুক নয়, নারীটিকে একটু কনজারভেটিভও মনে হলো। একটি সিএনজিওয়ালাকে ডেকে খুব অনুরোধ করলাম টঙ্গি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। বাস্তবতা দেখে সিএনজিওয়ালার মন গললো, সে যেতে রাজী হলো। তাকে সেখানে রেখে এক বন্ধু সহ নিকটস্থ দোকান থেকে কিছু কেক, পানি, কলা কিনে কিনলাম। ড্যানিশের দুধ আর গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে বোতলে ভরে দুধ বানিয়ে দিলাম তাদের হাতে। লিকুইড বা গুড়ো দুধ কিনতে পাওয়া যায় জিজ্ঞেসা করেও এমন কোন দোকান আশপাশে পেলাম না । সিএনজির ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে রিকুয়েস্ট করলাম, ওদের বাস্তব অবস্থার খোঁজ নিয়ে আমাকে জানাতে। সিএনজি ড্রাইভারের ফোন নম্বর রাখলাম। সে অবশ্য ভাড়াও কম নিলো। এরপর নারীটির হাতে কিছু টাকা দিলাম যাতে অন্তত আরো দুই/তিনদিনের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। নারীটিকেও আমার নাম্বার দিয়ে বললাম, আরো টাকার প্রয়োজনে আমাকে ফোন করবেন। তবে অশিক্ষিত হওয়ায় সে নাম্বারও পড়তে পারলো না। পরে সিএনজিওয়ালাকে ফোন করে জানলাম, টঙ্গি পর্যন্ত তাদেরকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ঘটনা আসলেই সত্য। তবে দূর্ভাগা সেই নারীটির ফোন এখনো পাইনি। খুব জানতে ইচ্ছে করছে, কেমন আছে অবুঝ শিশু গুলো? অপেক্ষায় আছি কখন ফোন পাবো। আসুন সকল প্রকার মাদককে না বলি মাদক মুক্ত জিবন/সমাজ গড়ি..

কোন মন্তব্য নেই