যশোর ঝিকরগাছায় মালিকানা জমি দখল করতে ভূমিদস্যুদের কান্ড!

0
5

যশোর ঝিকরগাছায় মালিকানা জমি দখল করতে ভূমিদস্যুদের দস্যুতা

মোঃ নজরুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধ
তারিখ ১৩/৭/২০২৩
কবলা দলিলের ৩০ বিঘা বিলের জমি। বৈধ কাগজপত্রও রয়েছে ওই বিলের জমির মালিকের নামে। তবুও নিজের বিলে গত ২৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাছ চাষ করতে গিয়ে ভূমিদস্যুদের হাতে নানারকম হামলা, হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বিলের প্রকৃত মালিকদের। প্রায়ই দিনই ভূমিদস্যুদের গাছি দা, কুড়ালের ধাওয়া খেতে হয় বিলের মালিকদের। ঘটনাটি যশোরের ঝিকরগাছার মাগুরা ইউনিয়নের ডহর মাগুরা গ্রামের। ওই গ্রামের ডেওর বিল নিয়েই গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে এ বিবাদ।

সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেওর বিলের প্রায় ৪৭ একর জমি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। ১৯৭৬ সালের আগে তারা এ দেশ থেকে চলে যাবার সময় ওই গ্রামের আফেল উদ্দিন, আলতাফ মোড়লের কাছে বিক্রি করে দিয়ে যান। এরপর আলতাফ উদ্দিন ও আফেল উদ্দিন ওই জমি তাদের নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়। ১৯৮৮ সালে ওই গ্রামের বাসিন্দা আইন উদ্দিন আফেল উদ্দিন ও আলতাফের নিকট হতে ৩০ বিঘা জমি কবলা দলিল করে নেন। একই বছরে আইন উদ্দিন তার নামে ওই জমি নামপত্তন করে নেন। এরপর থেকে আইন উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিনসহ অনান্য ছেলেরা এই জমির খাজনা প্রদান করে আসছেন। তবে খাজনা পরিশোধ এবং নিজেদের নামে দলিল এবং যাবতীয় কাগজপত্র থাকলেও ওই বিলের জমিতে মাছ চাষ করতে পারছেন না তারা। মাছ চাষ করতে হলে প্রতিনিয়ত হামলা, ধারালো অস্ত্রের ধাওয়ার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। সরজমিনে অনুসন্ধানে গেলে জহির উদ্দিন সকল দলিল ও খাজনা পরিশোধের কপি প্রতিবেদককে প্রমাণ স্বরুপ প্রদর্শন করেন।

আইন উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন বলেন, আমার বাবা আইন উদ্দিন মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা ওই বিলের জমিতে মাছ চাষ করি। সকল দলিল পত্র বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও আমরা ভূমিদস্যুদের হামলা, ধাওয়ার শিকার হচ্ছি। জহির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ডহর মাগুরা গ্রামের কুদরত আলীর ছেলে আশিয়ার রহমান ও হবিবর রহমানের ছেলে শাহারুল ইসলামসহ ওই গ্রামের আরও ৫/৭ জন একত্রিত হয়ে এই বিলের জমি দখল করার চেষ্টা করছে। বিলে মাছের খাবার দেওয়া বা দেখভাল করার জন্য গেলে তারা বিভিন্ন সময়ে গাছি-দা, কুড়াল নিয়ে ধাওয়া করছে। জান বাঁচানোর কথা ভেবে আমরা নিজেদের জমিতে পা রাখতে পারছি না।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, একাধিকবার উপজেলা ভুমি অফিস মিমাংসার জন্য বসাবসির ডাক দিয়েছে, তবে ওই ভূমিদস্যু গ্রুপ ভুমি অফিসে হাজির হয় না। ভুমি অফিসার আমাদের কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে ওই বিলের জমির মাছ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় আব্দুল বারিক মামলা করলে ওই মামলায় আশিয়ার ও শাহারুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়। পরে ২০-২৫ দিন আগে তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুনরায় আমাদের আবারও হয়রানি হামলা করছে। এছাড়া আশিয়ার এবং শাহারুল ওই বিলের জমিতে মাছ ধরা নিয়ে চাঁদাবাজি করে। মাছ বিল থেকে ওঠাতে হলে তাদেরকে ৫/১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়।

ওই গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল বারিক বলেন, ডেওর বিলে আমার ৬ বিঘা জমি রয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে আমি বিলে গেলে আশিয়ার আমালে প্রতিবারের মতো গাছি-দা নিয়ে ধাওয়া করে, আর বলে ‘জমিতে পা দিলে জবাই করে ফেলবে’। আমরা মামলা করলেও ওরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। কাদের অদৃশ্য ক্ষমতা বলে ওরা এই মালিকানা জমি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তা আমাদের জানা নাই।

এ অভিযোগের ব্যপারে অভিযুক্ত আশিয়ার রহমান বলেন, ওই জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের। তারা চলে যাবার সময় কারও কাছে বিক্রি করেনি। যারা রেকর্ড করিয়েছে তারা ভুয়া রেকর্ড করিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা হামলা করি না, আমরা চাষবাদের পানি পাই না, বাঁধ দিতে নিষেধ করায় আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে।

এ ব্যপারে মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওই জমির কাগজপত্র জহির উদ্দিন ও তার পিতার নামে রয়েছে, তবুও বর্তমানে কিছু ছেলেপেলে ওই বিলের জমির দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তারা কিছুদিন আগে ওই বিলের মাছ চুরি করত, ধরাও খেয়েছে, থানা পুলিশ হয়েছে, জেলও খেটেছে। তবুও এদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। আমি দুপক্ষ নিয়ে বসেছিলাম, জহির উদ্দিন কাগজ দেখাতে পেরেছে কিন্তু আশিয়ার ও শাহারুল কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন