যেখানে বাঁশের সাঁকোই ভরসা, একটি সেতুর অভাবে বিচ্ছিন্ন তিন উপজেলা

0
43

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম ভেরামতলী। ভেরামতলী গ্রামের পূর্ব দিকে গাজীপুর সদর উপজেলা পিরুজালী ও পশ্চিম-দক্ষিণে কালিয়াকৈর উপজেলা সিরাজপুর ও রামচন্দ্রপুর গ্রাম। এই তিনটি উপজেলার সীমানা ঘেঁষে বয়ে গেছে সালদহ নদী ও একটি খাল। প্রতিদিন এই উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজে নদী পারাপার হতে হয়। ভরা বর্ষায় নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা নৌকা থাকলে তা পরিচালনা করার জন্য সব সময়ই লোক পাওয়া যায় না। আর নদীর দুপাশের সংযোগ সড়ক থাকার পরও নদীতে কোন সেতু না থাকায় শুকনো মৌসুমে নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। এতে করে বেশ বিপাকে পড়তে হয় স্থানীয়দের। স্থানীয়রা জানান, এক সময়ের প্রবাহমান সালদহ নদী দূষণ-দখলে এখন অনেকটা খালে পরিণত হয়েছে। নদীটির তিনদিকে তিন উপজেলার তিনটি গ্রাম থাকলেও সরাসরি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে পিরুজালী ও রামচন্দ্রপুর গ্রামকে। নদীটির দু’দিকে সংযোগ সড়ক থাকলেও দীর্ঘদিনেও এখানে কোন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্ষায় নিজেদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে স্থানীয়রা নৌকার ব্যবস্থা করলেও সারা বছর তা থাকেনা। বাকী সময় চলাচলের জন্য নিজেরাই বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরী করে তাতে পারাপার হন। জন সাধারণের জনদুর্ভোঘ লাঘবের কথা গুরুত্ব দিয়ে করে জরুরী ভাবে এখানে একটি সেতু নির্মানের দাবী স্থানীয়দের। পিরুজালী গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার তিন গ্রামের শিক্ষার্থী নদী পারাপার করে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে। বিশেষ করে, নদীর ওপারের অধিকাংশ জমিই এপারের লোকজনের তাই কৃষিকাজ করে কৃষি পণ্য আনা নেয়ায় চরম অসুবিধায় ভোগতে হচ্ছে আমাদের। এখানে একটি সেতু হলে সবচেয়ে সুবিধা হবে স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রী ও কৃষকের। রামচন্দ্রপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামটি উপজেলার এক প্রান্তে। তাই এই গ্রামের অধিকাংশ লোকজন পাশের সদর উপজেলার পিরুজালীর সাথে যোগাযোগ বেশী। তবে সেতুটি হলে জেলা সদরের সাথে আমাদের যোগাযোগ সহজ হবে। সিরাজপুর গ্রামের সোহেল রানা জানান, গ্রামটি কালিয়াকৈর উপজেলা হলেও দূরত্ব বিবেচনায় গ্রামের বাসিন্দারা কালিয়াকৈর যাওয়ার চাইতে সদর উপজেলায় যাওয়া আসা করতে সাচ্ছন্দ্যে বোধ করে। কিন্তু মাঝে মধ্যে বাধ সাজে এই নদী। বর্ষায় নৌকা না থাকা আর শুকনো মৌসুমের নিজ উদ্যোগে বাশের সাকো নির্মাণ না করলে যাতায়াত বন্ধ থাকে। তাই শালদহ নদীর এ অংশে একটি সেতুর নির্মাণের দাবি জানান তিনি। একই গ্রামের বৃদ্ধ রমেজ উদ্দিন জানান, আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোকজন বাঁশের সাঁেকা দিয়ে পাড় হলেও সমস্যায় হয় নারী, শিশু ও অসুস্থ রোগিদের পাড়াপাড়ে। সেতু না থাকায় এখানে কোন ধরনের যানবাহনও চলে না। সেতুটি নির্মাণ হলে গ্রামীন অর্থনীতির পরিবর্তন সহ এলাকার লোকজন উপকৃত হবে। গিভেন্সি গ্রুপের কারখানার শ্রমিক আনোয়ারা জানান, আামাদের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বহু লোক পাশের গাজীপুর সদর এলাকার বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। নদীর উপর কোন সেতু না থাকায় দিনের বেলায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে পাড়াপাড় করতে হয়, রাতের বেলায় নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রায় ছয় কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম জানান, প্রতিদিন দুই গ্রামের অসংখ্য মানুষ বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে নিত্যদিনের কাজ করে থাকেন। এখানে একটি সেতু নির্মান হলে হাজারো মানুষ উপকৃত হবে। গাজীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, সরেজমিন দেখে স্থানটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলে স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাগবে সেতু নির্মাণ করা হবে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ৭/৮টি সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ওই শালদহ নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।

কোন মন্তব্য নেই