রক্তক্ষরণের একাত্তর,চৌধুরী জুনাইদ

0
51

এমএইছ চৌধুরী, জুনাইদ
রক্তক্ষরণের একাত্তর,
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ১৯ আগস্ট এক হৃদয়বিদারক, ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। তারা বেগমগঞ্জের গোপালপুর বাজারে অগ্নি সংযোগের পর সংলগ্ন খালের পাড়ে প্রায় অর্ধশত মুক্তিকামী মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
এ ঘটনার পূর্বে পাক বাহিনী আমার চাচা ও দুই চাচাতো ভাইসহ মোট ২২৩ জনকে আটক করে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। পরে আমার চাচা অত্র অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তি হওয়ার কারণে উনার অনুরোধে বড় ভাই হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী ও ওসমান হায়দার চৌধুরীসহ কিছু সংখ্যক মানুষকে মুক্ত করে দিয়ে বাকিদের হত্যা করে।

ওইদিন পাক সেনাদের ব্রাশফায়ারে সবাই অকাতরে প্রাণ হারালেও ভাগ্যক্রমে একজন খালের পানিতে ডুব দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিল।
ওই গণহত্যার শিকার মুক্তিকামী লোকজনের মধ্যে ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় চাচা “মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী”। তিনি ছিলেন গোপালপুর ইউপির পরপর তৃতীয়বার (২ বার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায়) নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে সচেষ্ট অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হতে সহায়তা প্রদান এবং পরামর্শদানের অপরাধে উনাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। পাক হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারের এগারোটি গুলি বিদ্ধ হয়েছিল উনার দেহে।
চাচার দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে বয়ে যাওয়া তাজা রক্তে আঁকা মানচিত্র থেকে রক্তের চিহ্ন গত ৪৮ বছরে খানিকটা মলিন হলেও, আমাদের হৃদয়ে এখনও উষ্ণ রক্তের দাগ অমলিন , অক্ষয় হয়ে আছে থাকবে। মাহবুবুল হায়দার চৌধুরীর মতো আত্মত্যাগী, দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের রাষ্ট্র মনে না রাখলেও, আমাদের হৃদপিণ্ডে এখনও রক্তক্ষরণ হয়।
মহান আল্লাহ যেন, ওই আত্মত্যাগীদের উপযুক্ত মর্যাদা দান করেন এই দোয়া করি।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বজন হারানোর বেদনার চেয়ে বিজয় প্রাপ্তির আনন্দই মূখ্য ছিল। প্রত্যাশিত স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী (মান্নু) এক অভিনব সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনেপ্রাণে, আচার আচরণে অর্থাৎ সর্বাঙ্গীণ বাংগালী হওয়ার প্রত্যয়ে নিজের নামের সাথে চৌধুরীর পরিবর্তে বাংগালী শব্দ ব্যবহার শুরু করেন। তিনি হয়ে যান হোচ্ছাম হায়দার বাংগালী। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের পীড়াপীড়িতে স্বনামে ফিরে আসেন। দু’বছর পূর্বে কিডনীজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। উনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ যেন উনাকে উপযুক্ত মর্যাদা দান করেন।

কোন মন্তব্য নেই