পবিত্র রমজান মাস চলছে কতরকম খাবারের আয়োজন নিয়ে ব্যাস্ত আমরা, অতছো আমাদের পাশের মুসলিম ভাই বোনের চিত্রটি কত অসহা!!!!?ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগীত একটি চিঠি হুবহু পাঠকদের জন্যে তুলে দরা হলো।
ইয়েমেনের রুমাহ শহরের আকাদি গ্রাম থেকে 19 বছর বয়সী মুনতাহা নামের একটি মেয়ে আমাকে মেইল পাঠিয়েছে, মেইলটি এসেছে গত তিন দিন আগে, হঠাৎ আজকে মেইলটা চোখে পড়েছে..
মেইলে কি লিখেছে সেটা পরে বলি, আগে সিদরাতুল মুনতাহার পরিচয় দেই.. এই রুমাহ শহরটি ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে প্রায় 950 কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব ওমান-সৌদি আরব সীমান্তে অবস্থিত . আর আকাদি গ্রামটি রুমাহ শহর থেকে 30 কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী অঞ্চলে.. সেই গ্রামে বাস করেন মুনতাহা.. এই আকাদি গ্রামেই আমাদের ডিউটি ছিল ইয়েমেন সফরের সময়…
এই মুনতাহাকে আমি প্রথম দেখি ওই গ্রামে যাওয়ার দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্প এসেছিল ওষুধ নিতে…. বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা মেয়েটার চেহারা আর চাঁদের মাঝে কোন তফাৎ করতে পারবেন না, আমার মনে হয় চাঁদের চেয়েও মুনতাহা বেশি সুন্দরী…কিন্তু দীর্ঘদিন খাদ্যের অভাব আর নিজের যত্ন না নেওয়ায় সেই চেহারা একটা দুঃখের ছাপ পড়ে গেছে.. প্রথম দেখি আমার মায়া লেগেছিল কাছে টেনে নিয়ে কথা বললাম সব জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ইংরেজি যেটুকু বোঝে কিন্তু একটুও বলতে পারে না, আমাদের গাইড এর সাহায্য নিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম ও আরবিতে বলছিল আর গাইড আমাকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করেছিল… ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল ভালো পড়াশোনা করেছিল হঠাৎ দেশে যুদ্ধ নেমে এলো.. পরিস্থিতি এখন পুরোটাই উল্টো ডাক্তারের কথা ভুলে গিয়ে দু মুঠো খাবারের জন্য এখন সংগ্রাম করতে হয় মা বাবার একমাত্র মেয়ে… 9 দিন ছিলাম 9 দিনই আমাদের ক্যাম্পে আমাদের সাথে রেখে দিয়েছিলাম…. আসার সময় সে কি কান্না!
এবার আসি মেইলে কি লিখেছে!! ভালোবাসার হিমাদ্রি আপু, অনেকগুলো ক্ষুধার্ত মানুষের ভালোবাসা নিবেন, গত 18 ঘণ্টায় এখানে খাবার পানি আসেনি,আমি গত 1দিন আগে শেষ রুটি খেয়েছি, আজ সকালে দুটো খেজুর দুপুরে এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি…. অনেক কষ্ট করে এখানে হেঁটে এসে একজন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের অনেক হাত পা ধরে আপনাকে এই মেইল পাঠিয়েছি… বাবা-মা দাঁড়াতে পারে না গত এক সপ্তাহ ধরে চার পায়ের জন্তুর মত মাটিতে হাটে এত ক্ষুধা তাদের… গত কয়েক সপ্তাহ টক গাছের পাতা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খেয়েছিলাম এখন সে পাহাড়ের গাছগুলোর পাতা ও শেষ হয়ে গেছে…. সামনে রমজান আসছে জানিনা কিভাবে সেহরি করব কি দিয়ে ইফতারি করব!!
আপনারা যারা এসেছিলেন যদি দয়া করে রমজানের আগে আরেকবার আসেন অন্তত একটু খাবার পানি নিয়ে আসেন অথবা 5 কেজি আটা দেন যাতে আমি আমার মা আর বাবা রমজানের রোজা গুলো রাখতে পারি…. মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি যদি আল্লাহ আকাশ থেকে কোন খাবার পাঠাতো! আমাদের দুঃখ গুলো শুধু আমাদের এই পাহাড় ছাড়া কেউ দেখেনা আপনার সাথে সব সঙ্গীদের সালাম দেবেন…
—আপনাদের ফেরার অপেক্ষায় মুনতাহা.
ইমেইল টা পড়ার পরে সকালে কিছু খাইনি দুপুরে অনেক কষ্ট করে দুই লোকমা খেয়েছি, খাওয়ার সময় মনে হয়েছিল গলা থেকে যেন বিষ নামছে….. খালি মনের মাঝে একটাই চিন্তা করছি রমজানে আমাদের কত আয়োজন!! আর পাঁচ কেজি আটার জন্য সুদূর ইয়ামেন থেকে আমার কাছে মেইল পাঠিয়েছে… হে আরশের মালিক আমার কোনো ক্ষমতা নেই তোমার উপর সোপর্দ করলাম তাদের…. তুমিতো বনী-ইসরাঈলকে আকাশ থেকে মান্না সালওয়া পাঠাতে খাবার হিসেবে….. আল্লাহ তুমি তাদের আকাশ থেকে একটু বৃষ্টি পাঠাও.. যাতে তারা অন্তত খাবার পানিটুকু পেতে পারে,আমিন।