রাজধানীর ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা এলাকায় ডলার তৈরীর সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের ৩ বিদেশী নাগরিক গ্রেফতার

0
35

রাজধানীর ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা এলাকায় ডলার তৈরীর
সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের ৩ বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার

জি নিউজ ডেস্কঃ লিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক কালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর বিদেশী প্রতারণাচক্র। জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সাম্প্রতিক এসব বিদেশী প্রতারকচক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ২৩ জুলাই ২০১৯ তারিখ ২০.০০ ঘটিকা হতে ২৪ জুলাই ২০১৯ তারিখ ১০.০০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর ধানমন্ডি ও বসুন্ধারা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিদেশী প্রতারকচক্রের ০৩ সদস্য যথাক্রমে (১) TCHIKAMEN RODRIGUE (31), (২) DONGMEZA N GUEGNI (32), Ges (3) ALEXANDRE MAFEJA (48), সকলের দেশ-CAMEROON কে গ্রেফতার করে এবং তাদের নিকট হতে প্রতারণার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল সংক্রান্তে চমকপ্রদ তথ্য প্রদান করে যা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

প্রতারণা কৌশলঃ অতিশয় ধূর্ত এইসব প্রতারণাচক্রের সদস্যরা প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। নিজেদের তীক্ষœ মেধা, সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও কর্মকৌশলের মাধ্যমে প্রতারণার পন্থাকে তারা শিল্পের পর্যায় নিয়ে গেছে। তাদের অভিনব কৌশলের কাছে প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন লোকও হার মানে। তাদের সুপরিকল্পিত সফল প্রতারণার পেশার মাধ্যমে অর্জিত অর্থের লোভ তাদের নিজ দেশ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তাদের একটি গ্রুপের প্রতিটি সদস্য সমানভাবে প্রতারণা কাজে দক্ষ হওয়ায় এই বিদেশী প্রতারণাচক্রের সদস্যরা সফলভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করে এই দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। বিদেশী প্রতারণাচক্রের সদস্য কর্তৃক প্রতারণা কার্যক্রম কয়েকটি স্তরে পরিচালিত হয়ে থাকে যা নিম্নরুপঃ

(ক) কৌশল-১ঃ বিদেশী প্রতারকচক্রের সদস্যরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। এরপর তারা বাংলাদেশের গুলসান, বনানী, বারিধারাসহ অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করে। প্রথমে তারা বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর শিল্পপতি ব্যবসায়ীদেরকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম শুরু করে। তারা ব্যবসায়ী বা শিল্পপতির অফিস কার্যালয় গিয়ে নিজেদেরকে তাদের দেশের বড় কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, অংশীদার বা মালিক হিসেবে পরিচয় দেয়। কখনও বড় কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিবারের পরিচালিত বলে দাবি করে উক্ত ব্যবসায়ী বা শিল্পপতির সাথে পরিচয় পর্বের পর তার সাথে অংশীদারী ব্যবসা পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ী/শিল্পপতি উক্ত প্রতারণাচক্রের সদস্যদের সাথে অংশীদারী ব্যবসায়ে আগ্রহ প্রকাশ করলে তারা ব্যবসা সংক্রান্তে একটি চুক্তিপত্রের খসড়া তৈরি করতে বলে এবং উক্ত চুক্তিপত্রের খসড়াটি তার দেশে ই-মেইল এর মাধ্যমে প্রেরণ পূর্বক চুক্তিপত্রটি যাচাই-বাচাইয়ের নাম করে কালক্ষেপণ করে। এসময়ের মধ্যে তারা উক্ত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী/শিল্পপতির সাথে কিছু সর্ম্পক গড়ে তোলে। আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে তারা জানায় যে, তারা সাদা কাগজকে ডলারে রুপান্তর করতে পারে। উক্ত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী চাইলে টাকা ডলারে রুপান্তর করে দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত সুকৌশলে উক্ত ব্যবসায়ীকে ডলারের লোভে ফেলে প্রতারণা কার্যক্রম শুরু করে।

(খ) কৌশল-২ঃ প্রতারকচক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাক্ষাতের কথা বলে। পূর্ব নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়ে তারা জানায় যে, ডলারে রুপান্তর করতে হলে ১,০০০/- টাকা নোট লাগবে। তারা উক্ত ১,০০০/- টাকা নোট পাউডার জাতীয় কেমিক্যাল মাখিয়ে ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে কস্টেপ দিয়ে শক্ত করে বাঁধে এবং একটি চতুর্ভূজ বান্ডিল আকৃতি তৈরি করে। তারা তাদের সাথে একটি বিশেষভাবে তৈরি দুই প্রকোষ্ট বিশিষ্ট বক্স সাথে নিয়ে আসে যাহাতে বৈদ্যুতিক সংযোগে বিভিন্ন রংয়ের লাইটিং এবং বিশেষ ধরণের শব্দ সৃষ্টি করে । বক্সের ভিতরে বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরী মেশিন এর কার্যক্রমের কারণে উক্ত লাইটিং এবং শব্দের মাধ্যমে টাকা ডলারে রুপান্তর হয় বলিয় জানায় । বান্ডিলগুলো উক্ত বক্সের ভিতর রাখে। প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস অর্জনের জন্য ব্যবসায়ীর নিকট থেকে নেয়া টাকার সমপরিমাণ ডলার উক্ত বক্সের ভিতরে রেখে বিশেষ কৌশলে চাতুর্যতার সাথে ফেরত দেয়। উক্ত পন্থা অবলম্বন করে ব্যবসায়ীর বিশ্বাস অর্জন করে এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়ীকে লোভে ফেলে বড় অংকের টাকা ডলারে রুপান্তর করার জন্য প্রলুব্ধ করে এবং টাকার অংক তারা নির্ধারণ করে দেয়। যখন ব্যবসায়ী তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়, তখন তারা পূর্ব নির্ধারিত টাকার সমপরিমাণ আয়তনের একটি ফয়েল পেপারে মোড়ানো কসটেপ দ্বারা শক্তভাবে বাঁধা কাগজের বান্ডিল তাদের ডলার তৈরির বক্সের মধ্যে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারের ভিতরে রেখে দেয়। তারা উক্ত বক্সসহ ব্যবসায়ীর কাছে আসে এবং তার কাছ থেকে পূর্ব নির্ধারিত টাকা নিয়ে পাউডার জাতীয় কেমিক্যাল মাখিয়ে একইভাবে ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে একই রংয়ের কসটেপ দ্বারা শক্তভাবে পেঁছিয়ে পূর্বের কাগজের বান্ডিলের সমআয়তনের একটি বান্ডিল তৈরি করে। তখন উক্ত বান্ডিলটি বক্সের ভিতরে রেখে চাতুর্যতার সাথে সুকৌশলে প্রতারকচক্রের তৈরি করা কাগজের বান্ডিলটি রদবদল করে ব্যবসায়ীকে দেয় এবং ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত না খোলার জন্য নির্দেশ দেয়। টাকা ডলারে রুপান্তর হতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগবে বলে জানায় এবং আসল টাকা ও বক্সসহ কেটে পড়ে।

জব্দকৃত মালামালের তালিকা নিন্মে প্রদত্ত হলো,(১) প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বক্স-০৫টি।(২) টাকা সদৃশ্য কাগজের বান্ডিল-০৩টি।(৩) ফয়েল পেপার।(৪)প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ডলার।(৫) কসটেপ।(৬) টেলকম পাউডার।(৭) কটন।(৮) জিপার পলিব্যাগ।(৯) ফেবিকল আঠা।(১০) কাটার।(১১) মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট।উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই