রাজনীতি এখন বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মতো

0
21

ঢাকা অফিসঃ
বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে একটি হলো বুড়িগঙ্গা নদী। শিল্পকারখানার বর্জ্য, মানুষের মলমূত্র,কেমিকেল বর্জ্য, নৌযানের পোড়া তেল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলায় বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ নদীর পানিতে স্রোত না  থাকায় প্রতিনিয়ত ফেলা বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত পানির সাথে তুলনা করা যায়।রাজনীতির মধ্যে এখন অবৈধ রাজনীতি চর্চা হচ্ছে। যে রাজনীতি মূলত এদেশের জনগণের কল্যাণে হওয়ার কথা ছিলো, তা এখন শুধুমাত্র মুখেই বলা হয়।আজকের দূষিত রাজনীতির জন্য এদেশের রাজনীতিবিদরা দায়ী। ক্ষমতার প্রতি প্রবল লোভ থাকার কারণেই সঠিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা হচ্ছে না।যেখানে জনগণের সমর্থনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেওয়া হয় সেখানে গণতন্ত্র নামক শব্দটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। গণতন্ত্র যদি প্রকৃতপক্ষে থাকতো তাহলে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য হতোনা।সঠিক রাজনীতি না থাকার কারণেই বর্তমানে অবৈধ সিস্টেমকেই  বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির মত বড় একটি  রাজনৈতিক  দল ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি সেখানে কি গণতন্ত্রের অপূর্ণতা প্রকাশ পায়নি। নির্বাচনে কেবলই কি শুধু জনগণের অংশগ্রহণ করাকেই গণতন্ত্র বলা যাবে? এদেশে গণতান্ত্রিক সিস্টেম দাবি করা হলে ও প্রকৃতপক্ষে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। ২০১৮ সালের কথা বললেও ত নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কথা  বলার মত ভাষা থাকে না।যেখানে নির্বাচননামক “ধোঁকাবাজি ” কাব্য রচিত হয়েছে। জনগণ হারিয়েছে ভোটের অধিকার নামক মূল্যবান অধিকার। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হারিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের  উপর আস্থা ও বিশ্বাস। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এদেশে  দূষিত রাজনীতির প্রভাবটা বাড়তে শুরু করেছে । যার খেসারত এখন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। দূষিত রাজনীতির যাঁতাকলে জনগণ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছেনা।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ভেলকিবাজি নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে। যেখানে ইতিমধ্যে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে নেই। এই ব্যর্থটা কি নির্বাচন কমিশনের নয়? পাতানো নির্বাচনের বৈধতা দেওয়ার কি এমন প্রয়োজন। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক ধারার স্রোত না থাকায় আগামীর  ভবিষ্যৎ রাজনীতি সহিংসতাপূর্ণ থাকার শঙ্কা বৃদ্ধি পাবে।   বুড়িগঙ্গা নদীর কালো বর্ণের পানির মতো বাংলাদেশের রাজনীতি দিনদিন অন্ধকার জগতে চলে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনকে কোনোভাবেই নির্বাচনের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। যেখানে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নেই, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেই, সেই নির্বাচনকে দূষিত নির্বাচন বলা যেতে পারে।যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে তারাও স্বস্তিতে নেই। নির্বাচনের মাঠে প্রতিনিয়ত উত্তাপ সৃষ্টি হচ্ছে, সহিংসতার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে দৃশ্যমান কিছু সহিংসতার তথ্য ও পাওয়া গেছে। এই যে অপরাজনীতি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর পরিণতি একসময় যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেসব দলের প্রার্থীরা অংশ গ্রহণ করেছে তারা জনগণের কাছে তেমন সাড়া পাচ্ছেনা। অস্থির রাজনীতি থেকে জনগণ বিমুখী রয়েছে। দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিক ভীত হয়ে বসবাস করে। নাগরিক তার পূর্ণ অধিকার আদায় করতে পারছে না।বাক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে দেশের জনগণ। দূষিত রাজনীতির প্রভাব ছেয়ে গেছে দেশে।এই দূষিত রাজনীতিকে একশ্রেণির মানুষ সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই জানা যাচ্ছে কে হবে সরকারি দল। এখানে কেমন স্বার্থের আশায় অংশগ্রহণ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এমপি, মন্ত্রী হওয়ার জন্য, এই রকমই ধারণা করা হচ্ছে। চায়ের দোকানদাররাও বর্তমান পরিস্থিতি ভালো বুঝে। মানুষ বর্তমানে রাজনীতি সচেতন। কখন কি হচ্ছে, কে ভালো- মন্দ সবই ধারণা করতে পারে। যেখানে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এই সরকারের অনিয়মগুলো রীতিমতো বলে যাচ্ছে, সরকারের ব্যর্থতা গুলো তুলে ধরছে, এটাতো সকল শ্রেণির মানুষই অনুমান করে কার দোষ,কার গুণ। জনগণকে ফাঁকি দেওয়া মানে রাষ্ট্রের প্রধান একটি স্তরকে অস্বীকার করা। বর্তমানে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এ সরকার ভালো করে জানে আগামীতে তারাই রাষ্ট্রের রাজা। বাকি যে দলগুলো আছে তারা কেবলই মাত্র দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার অলংকার। বর্তমান সরকার জনগণকে ফাঁকি দিয়েছে। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশন  সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করাতে ব্যর্থ হওয়ায় জনগণের কাছে ঋণী হয়েছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও জনগণের কাছে ঋনী রয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ঋণ পরিশোধ না করলে তা একসময় ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে। জনগণের সাথে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতারণার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই রাজনীতি এখন বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মতো দূষিত হয়েছে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ
লেখক,  কলামিস্ট ও বিশ্লেষক

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন