রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও ইসি নিয়ে কিছু কথা

0
17

রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে জনগণের কল্যাণে হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতি তার প্রকৃত রূপটি হারাতে বসেছে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের পর থেকে রাজনীতিবিদদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জনগণের কল্যাণে সঠিক রাজনীতি হয়নি।সরকারি দল ও বিরোধী দলগুলোর নেতারা একেকজন বিভিন্ন স্তরের রাজনীতিবিদ। সরকারি দলের যারা রাজনীতিবিদ রয়েছে তারা সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সবসময় গুণকীর্তন করে থাকে। বিরোধীদলের রাজনীতিবিদরা আবার সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সবসময় সমালোচনা কিংবা দোষারোপ করে থাকে। সরকারি দলের রাজনীতিবিদ কিংবা বিরোধীদলের রাজনীতিবিদ যাই বলা হোক না কেন উভয়রাই কিন্তু জনগণের রাহাবার বলে আত্মস্বীকৃতি দেয়। কিন্তু একজনের গুণকীর্তন আর আরেক জনের সমালোচনাতে কি জনগণের কোনো উপকার হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণের একটাই চাওয়া থাকে, জনগণের যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়,জনগণ যাতে শান্তিতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে হাইব্রিড রাজনীতিবিদদের আগমন ঘটেছে। যারা শুধু নিজস্ব দলের পক্ষে কথা বলে। কে বা কারা ক্ষমতায় যাবে, ওই লোভ নেতাদের। জনগণ ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার কাতারে আছে। জনগণের কথার কোনো মূল্য নাই বর্তমানে। বর্তমান প্রেক্ষাপটকে কিছুটা পাকিস্তান আমলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে এদেশের মানুষ জিম্মি হয়ে থাকতো।পূর্ব বাংলার জনগণের তখন কোনো মূল্য ছিল না।তখনও কিন্তু রাজনীতিবিদ ছিল। প্রকৃতপক্ষে, পূর্ব বাংলার পক্ষে পাকিস্তানি রাজনীতিবিদরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া করেছিল।রাজনীতি যদি রাজনীতিবিদদের দ্বারা সঠিকভাবে পরিচালিত না হয় তাহলে কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী কোনো একসময় ওই রাজনীতিবিদদের পরাজয় হয়।প্রবাদে আছে, কাউকে গর্তে ফেললে কোনো একসময় নিজেকে ও পড়তে হয়।বর্তমান বাংলাদেশে তিন ধরনের রাজনীতিবিদদের পদচারণা দেখা যাচ্ছে। এক.সরকার দলের রাজনীতিবিদরা সরকারের বিভিন্ন সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরছে। তারা সরকারি দলের রাজনীতিবিদ।দুই. বিরোধী দলগুলোর রাজনীতিবিদরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা সমীকরণ তৈরি করছে। তারা বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ। তিন. কিছু ব্যাক্তি রাজনীতি না করেও রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছে। তারা ও একধরনের রাজনীতিবিদ। তারা হয়তো একসময় সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করতো। তারা কিন্তু বেশিরভাগই সরকারের সুবিধা পাওয়ার জন্য সরকারের গুণকীর্তন করে থাকে। এরা দেশের জনগণের ভাবনা ভাবে না।নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতিবিদ পদে যুক্ত হতে থাকে। এই তিন ধরনের রাজনীতিবিদরা যদি নিজেদের স্বার্থ চিন্তা বাদ দিয়ে জনগণের পক্ষে সঠিকভাবে নিযুক্ত হতো তাহলে দেশে রাজনীতির দূরাবস্থা হতো না।বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ রাজনীতিবিদদের মতানৈক্য। দিনদিন মতানৈক্য বেড়েই চলছে। স্বাধীন দেশের জনগণ ভোটের অধিকার হারিয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। প্রতিদিন টেলিভিশন, পত্রিকা তে দেখা যায় নেতিবাচক শব্দ দিয়েই শিরোনাম গুলো সাজানো থাকে বেশি।সহিংসতার গন্ধ বেশি,সৌহার্দ্যের ভালোবাসা নেই বললেই চলে।রাজনীতি আজ বিদেশিদের কাছে চলে যাওয়ার পিছনে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের দুর্বলতা রয়েছে। যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের নেতারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে অপর দলগুলোর নেতাদের উপর স্টিমরোলার চালায়।অপর বিরোধী দলের নেতারা ও বলে, তারাও নাকি লিস্ট করে রাখছে। এর মানে দাঁড়ায় বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যে দলটি ক্ষমতায় আসবে তারাও আবার একি আচরণ করবে?এটা কেমন রাজনীতি। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে এরকম নোংরা রাজনৈতিক কার্যক্রম বিরাজমান থাকাতে দেশে এত সহিংসতা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে।ক্রমেই সহিংস পরিস্থিতি দৃশ্যমান হচ্ছে রাজনীতির ময়দানে।হামলা মামলার পরিধি ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বাচনমুখী রাজনীতির মাঠ প্রতিনিয়ত উত্তপ্ত হচ্ছে। এতে রাজনীতিবিদরা তাদের প্রকৃত রাজনীতিটুকু করছেন না।কে বা কারা ক্ষমতায় যাবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো সবসময়ই কি রাজনীতির সংকট থেকে যাবে। একে অন্যের স্বাধীনতা কি ক্ষমতায় গেলে চেইঞ্জ করবে? এটাই ভবিষ্যত কথা। রাজনৈতিক নেতাদের আরও শালীনতা অবলম্বন করতে হবে। একে অন্যের প্রতি দরদি হতে হবে। পরাধীন রাষ্ট্র থেকে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। এর মান ক্ষুন্ন করা যাবে না।বিদেশি শক্তি যাতে এদেশে ভর না করতে পারে সেজন্য নির্বাচন আসলে কোনো সুযোগ বিদেশিদের জন্য রাখা যাবে না।আগামী নির্বাচনে কোনো দলকে বা ব্যাক্তিকে চালকের আসনে না রেখে সকল রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের চালকের আসনে রাখতে হবে। দেশে অবাধ,সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে শুধু রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ বড় কথা নয়,জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হলেই নির্বাচন অর্থবহ হবে। যেখানে রাজনীতি ও সহিংসতা একত্রে অবস্থান করবে সেখানে কোনো ভাবেই জনগণের উপস্থিত থাকবে না।বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির অপর নাম সহিংসতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এদেশে রাজনীতি বলতে একদলীয় শাসনব্যবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে। এর ব্যর্থতা এদেশের কিছু স্বার্থপর রাজনীতিবিদদের জন্য। যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য জনগণকে বিপথে ধাবিত করেছে। এদেশে নির্বাচনের পরিবেশ ধ্বংসের পিছনে ইসিরাও যথেষ্ট দায়ী। দেশে এ পর্যন্ত এগারোটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষহীনতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নির্বাচন। আগামী নির্বাচন নুরুল হুদা কমিশনের মতই আউয়াল কমিশন পরিচালনা করলে আবারও নানা বিতর্কের জন্ম হবে। নির্বাচন কমিশন ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি পেলে আগামী নির্বাচন সঠিকভাবে হবে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ
লেখক : তরুণ কলামিস্ট ও বিশ্লেষক

আপনার মতামত প্রকাশ করেন

আপনার মন্তব্য দিন
আপনার নাম এন্ট্রি করুন