র্যাব-১ এর বিশেষ অভিযানে রাজধানীর ভাটারা হতে ৩৯৮ বোতল ফেনিসডিলসহ ০৫ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ॥ একটি পিকআপ জব্দ
জি নিউজ:: মাদকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে যে, বেশ কিছুদিন ধরে একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান হতে মাদক দ্রব্য কৌশলে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় নিয়ে আসছে। র্যাব-১ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মাদকের বড় চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছে। চক্রটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। কখনো যাত্রীবাহী বাসে করে, কখনো পঁচনশীল মৌসুমী শাক-সবজি বহনকারী ট্রাকে করে, কখনো ধান, ভূট্টা, আম বহনকারী গাড়িতে করে, আবার কখনো কখনো ব্যক্তিগত গাড়িতে করে মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে বলে জানা যায়। গেপান সুত্রে জানা যায়, হিলি সীমান্ত হতে মাদকদ্রব্য ফেন্সিডিলের একটি বড় চালান রাজধানীর উদ্দেশ্যে পিকআপে করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে মাদক ব্যবসায়ী চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং মাদক দ্রব্যের চালানটির গতিবিধি অনুসরণ করার লক্ষ্যে অবস্থান নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ০৮ জুলাই আনুমানিক রাত ৮:৩০ ঘটিকায় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ভাটারা থানাধীন প্রগতি স্মরনী রোডস্থ নর্দ্দা জগন্নাথপুর (সুপার লাইপ) বিল্ডিং এর পশ্চিম পার্শ্বে পাঁকা রাস্তার উপর অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মাদক চোরাকারবারী ১) মোঃ জহুরুল ইসলাম (২৫), পিতা- সিদ্দিক মিয়া, সাং- দেওরবটতলী, থানা- বিরামপুর, জেলা- দিনাজপুর, ২) মোঃ মাসুদ রানা (২০), পিতা- মোঃ বাদশা মিয়া, সাং- দেওরবটতলী, থানা- বিরামপুর, জেলা- দিনাজপুর, ৩) মোঃ কুদ্দুস মিয়া (৩২), পিতা- মাহফুজ মিয়া, সাং- চাপরতলা, থানা- নাছির নগর, জেলা- ব্রাহ্মনবাড়িয়া, বর্তমান ঠিকানা সাং- শাহজাতপুর বেন্ডারী মেস, থানা- ভাটারা, ডিএমপি, ঢাকা, ৪) মোঃ কালাম (৪২), পিতা- মৃত মোবারক হোসেন, সাং- কালিবাড়ী, থানা- আমতলী, জেলা- বরগুনা, বর্তমান ঠিকানা- খিলবাড়ীরটেক গাফফার এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা- ভাটারা, ডিএমপি, ঢাকা, ৫) মোঃ সুমন (২২), পিতা- মকবুল হোসেন, সাং- নেয়ামতপুর, থানা- চৌগাছা, জেলা- যশোর, বর্তমান ঠিকানা- শাহজাতপুর খানের বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা- ভাটারা, ডিএমপি, ঢাকা’দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় ধৃত আসামী ও তাদের চালিত পিকআপ তল্লাশী করে ৩৯৮ বোতল ফেনিসডিল, ০৬ টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৮,১৫০/- টাকা উদ্ধার করা হয় এবং মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পিকআপটি জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ মাদক চোরাচালানকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা দিনাজপুরের হিলি সীমান্তবর্তী এলাকা ভারত হতে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে ফেনিসডিল নিয়ে আসে এবং সেই চালান পিকআপে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এই চক্রের অন্যতম সদস্য দিনাজপুরের মাদক ব্যবসায়ী আমিনুল। সে ভারত হতে ফেনিসডিলের চালান নিয়ে আসে। এরপর আমিনুলের নিকট হতে ধৃত আসামী জহুরুল ও মাসুদ পিকআপে করে ঢাকায় নিয়ে আসার পর ঢাকাস্থ মাদকের সিন্ডিকেট হাবিবুরের নিকট হস্তান্তর করত।
ধৃত আসামী জহুরুল’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে পেশায় একজন পিকআপ চালক। সে এই চক্রের সাথে প্রায় ০৫/০৬ বৎসর যাবত কাজ করছে। সে দিনাজপুরের মাদক ব্যবসায়ী আমিনুলের নিকট হতে ফেনিসডিলের চালানটি নিয়ে এসে ঢাকাস্থ মাদক ব্যবসায়ী হাবিবুরের নিকট পৌছে দেয়ার কথা ছিল। সে পিকআপে কাঁচা মালামাল, ফল, শাকসবজি পরিবহনের আড়ালে মাদকের চালান নিয়ে আসত। সে দিনাজপুর হতে মাদকের চালান নিয়ে এসে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় হস্তান্তর করত। মাদকের চালানপ্রতি মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে ২০,০০০/- টাকা করে দিত। সে একজন মাদকাসক্ত এবং সে এপর্যন্ত ০৮/১০ টি মাদকের চালান পরিবহন করেছে বলে জানায়। মাদক পরিবহনে মাসুদ রানা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত। মাসুদ রানা পিকআপের হেল্পার হিসেবে কাজ করে। সে ইতিপূর্বে ১০/১২ টি মাদকের চালান দিনাজপুর হতে নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে হস্তান্তর করেছে বলে জানায়।
ধৃত আসামী কুদ্দুস’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে পেশায় একজন ভ্যান চালক। সে একজন মাদকাসক্ত। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি সে হাবিবুরকে মাদক ব্যবসায়ে সহায়তা করত। ধৃত অপর আসামী কামাল পেশায় একজন ফলের দোকানদার। সে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ভ্যানের মধ্যে ফল বিক্রি করত। ফলের দোকান চালানোর পাশাপাশি সে মাদক ব্যবসা করত। ধৃত আসামী সুমন পেশায় একজন রং মিস্ত্রী। সে একজন মাদকাসক্ত। সে রং মিস্ত্রী কাজ করার পাশাপাশি হাবিবুরের মাদক ব্যবসায়ে সহযোগীতা করত বলে জানায়।